Skip to main content

বাংলাদেশ: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা

কমিউনিটিকে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন

অক্টোবর ২০২১, বাংলাদেশের কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা মহিব উল্লাহকে হত্যার পর নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা পাহারা দিচ্ছেন। © 2২০২১ মুনির উজ জামান/এএফপি ভায়া গেটি ইমেজের
  • বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অপরাধী চক্রের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে, আর এই ক্ষেত্রে পুলিশ, আইনি, এবং চিকিৎসা সহায়তায় বিভিন্ন স্তরে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
  • কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্য দাতা হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করছে, যার ফলে তাদের অপহরণ বা হত্যার মতো গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে।
  • সরকারের উচিত শরণার্থী ও জাতিসংঘের সাথে আলোচনা করে একটি নিরাপত্তা নীতি তৈরি করা। বাংলাদেশে দাতা সংস্থা রয়েছে এমন সরকারগুলোর উচিত ন্যায়বিচারের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগ করা।

(ব্যাংকক) – হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অপরাধী চক্রের সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অপরাধের অভিযোগ দাখিল করার জন্য এবং অবিলম্বে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষের উচিত সহজ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে শরণার্থীদের সহায়তা করা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ২৬ টি মামলা নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়ন এবং জোরপূর্বক বিয়ে অন্তর্ভুক্ত। তারা  ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ৪৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকার এবং পুলিশ ও মেডিকেল রিপোর্ট সহ সমর্থনকারী প্রমাণ বের করেছে। ভুক্তভোগীরা পুলিশ, আইনি এবং চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরের বাধার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ করছে, অপরদিকে কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা প্রদান করতে, নিরাপত্তা জোরদার করতে বা দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

“রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বেকার প্রতিশ্রুতি এখন সহিংস গোষ্ঠী এবং একটি উদাসীন বিচার ব্যবস্থার দ্বারা হুমকির সম্মুখীন।“ বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী। “রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের ক্রমবর্ধমান অনিয়ম, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব থেকে সরকারকে অব্যাহতি দিতে পারে না।"

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠী ২০২২ সালে শিবিরে গুলিতে ৪০ টিরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে হত্যা করেছিল। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে কমপক্ষে ৪৮ জন শরণার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা মোট সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছে। ৬ এবং ৭ জুলাই তিনটি ঘটনায় সাত শরণার্থী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যার মধ্যে একজন উপ-মাঝি (ক্যাম্প কমিউনিটি নেতা) এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর কথিত সদস্য রয়েছে।

নিহতদের মধ্যে অনেকেই রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা বা তাদের পরিবারের সদস্য ছিল। অনেক শরণার্থীকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছে এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে বা নির্যাতন করা হয়েছে। বেশ কিছু রোহিঙ্গা যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক বিয়ে এবং শিশুদের কাজে নিয়োগে সশস্ত্র গোষ্ঠীর জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে।

শরনার্থীরা তাদেরকে ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সহযোগী হিসেবে দাবী করা এবং অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হবার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সাথে  চলমান বর্বরতা এবং ভয়ের পরিবেশ বর্ণনা করে। “প্রতি রাতে আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই,“ হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, "যখন গোলাগুলি শুরু হয়, আমরা একে অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অপেক্ষা করি, এই ভয়ে যে, এরপর আমাদের পালা।"

হামলার শিকার ব্যক্তিরা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), মুন্না গ্যাং, ইসলামি মাহাজ এবং আরও কয়েকটি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যদের দায়ী বলে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ক্যাম্পে অন্তত ১১টি সশস্ত্র দল কাজ করছে। মাদক চোরাচালান এবং মানব পাচারের সাথে জড়িত বেশ কয়েকটি অপরাধী চক্র ক্যাম্পগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য অপেক্ষা করছে, যাদের মাঝখানে পড়ে ভুক্তভোগী হচ্ছে শরনার্থীরা। অ্যাক্টিভিস্ট, শিক্ষিত ব্যক্তিরা এবং মাঝিরা হলো সাধারণ লক্ষ্যবস্তু, যা রোহিঙ্গা সুশীল সমাজের উপর প্রভাব ফেলেছে। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে কমপক্ষে ১৬ জন মাঝি নিহত হয়েছিল

 শরণার্থীদের জন্য কোন ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সুবিধা নেই; তারা থানায় অভিযোগ জানাতে পারে না। এর পরিবর্তে, তাদের ক্যাম্পে অবস্থানরত বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বা নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। বেশ কয়েকটি পরিবার বলেছে যে তারা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার জন্য বাংলাদেশের কর্মকর্তা ক্যাম্প-ইনচার্জ (সিআইসি) এর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিতে পারেনি। অন্যরা বলেছে যে তারা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর কাছে অভিযোগ আনার অনুমতি পেয়েছিল কিন্তু তারা আর যেতে পারেনি, কারণ এই বাহিনীর কোনো বেসামরিক তদন্তমূলক কাজ নেই। যে সমস্ত শরনার্থীরা স্থানীয় থানায় তাদের মামলা নথিভুক্ত করতে পেরেছিল তারা বলেছে যে কোনো ধরনের ফলো-আপ ছিল না, প্রায়শই তারা দাবিকৃত ঘুষ এবং আইনি ফি কভার করতে পারতো না।

গত এক বছরে বেশ কিছু মাঝি যারা নিহত বা হামলার শিকার হয়েছে, তাদেরকে কথিত এআরএসএ সদস্যরা লক্ষ্যবস্তু করেছে যারা তাদেরকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের তথ্যদাতা বলে মনে করে ছিল। মাঝিরা বলেছেন যে কর্তৃপক্ষ তাদের রাত্রিকালীন পাহারায় অংশ নিতে, পুলিশের অভিযানে যোগ দিতে এবং সন্দেহভাজনদের সামনেই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সনাক্ত করতে বাধ্য করেছিল। নিহত মাঝিদের পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা আগে ক্যাম্প ইনচার্জ এবং এপিবিএন-এর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন, কেউ কেউ তাদের হুমকি দেওয়া ব্যাক্তিদের তালিকাও দিয়েছিলেন, কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়েছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নথিভুক্ত ২৬ টি মামলার মধ্যে মাত্র ৩টি গ্রেপ্তার পর্যন্ত এগিয়েছে৷ সাক্ষাৎকারে বেশিরভাগ ভুক্তভোগী বলেছেন যে, গ্যাং বা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি প্রাথমিক আক্রমণের পরে তাদের হুমকি এবং হয়রানি করে, এমনকি তাদের চুপ করে থাকতে ভয় দেখিয়েছিল।

অনেক ভুক্তভোগী নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং অপরাধীদের মধ্যে যোগসাজশের অভিযোগ করেছেন। এবিপিএন, যেটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে ক্যাম্পে নিরাপত্তার তত্ত্বাবধান করে আসছে, সেটি চাঁদাবাজি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং হয়রানি সহ শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্যাতনের জন্য নিজেই দায়ী।

ক্রমবর্ধমান এই সহিংসতায় পুলিশের প্রতিক্রিয়া চিহ্নিত হয়েছে তাদের অত্যাচার, নির্বিচারে অভিযান এবং সহিংস ক্র্যাকডাউনের মাধমে। শরণার্থীরা অভিযোগ করে যে এপিবিএন দুর্নীতি, অপরাধমূলক কার্যকলাপকে প্রসারিত করতে দিয়েছে, যেখানে অপরাধের জন্য দায়ী নয় এমন রোহিঙ্গারা গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছে।

"এপিবিএন পুলিশ ক্যাম্পের কাছে প্রকাশ্য দিবালোকে অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে," একটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক বলেছেন। “গুলির শব্দ শোনার পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যখন হত্যা বা সহিংসতা হয়, তখন পুলিশ নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করে, প্রকৃত অপরাধীদের নয়। প্রকৃতদের আবার একই কাজ করার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।”

যে রোহিঙ্গারা সুরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছিল তাদের কোনো সহায়তা ছাড়াই অন্য আশ্রয়কেন্দ্র বা ক্যাম্পে চলে যেতে বলা হয়েছিল। কিছু অভিভাবক বলেছেন যে তারা তাদের সন্তানদের, আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে, বিপজ্জনক নৌ পারাপারের ঝুঁকি নিয়ে, মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পর্যাপ্ত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে আক্রমণের পর তাদের উপর ভয় প্রদর্শন এবং আঘাতের বর্ণনা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই শরণার্থী বসতিতে বিপজ্জনক পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের অবস্থা বর্তমানে নেই। বাংলাদেশ সরকারের উচিত শরণার্থী এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলি, যার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউএন চিলড্রেনস ফান্ড। ইউনিসেফ), ইউএন উইমেন এবং ইউএন পপুলেশন ফান্ড, এদের সাথে পরামর্শ করে শিবিরের জনসংখ্যাকে রক্ষা করার জন্য একটি সম্মানজনক নিরাপত্তা নীতি তৈরি করা এবং পরিচালনা করা ।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলিকে শরণার্থীদের দ্বারা দায়ের করা অভিযোগগুলি গ্রহণের জন্য কাজ করা এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, যাতে বেঁচে থাকা-কেন্দ্রিক সেবা সহ আইনি, চিকিৎসা এবং সুরক্ষা পরিষেবাগুলির জন্য গোপনীয় প্রতিবেদন এবং রেফারেল পদ্ধতি রয়েছে। সেফ হাউস এবং ইউএনএইচসিআর-এর সুরক্ষা হটলাইনের মতো রিসোর্স গুলি প্রসারিত করা উচিত।

দাতা সরকার এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলির উচিত স্থানীয় পুলিশ ও আদালতে প্রবেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সেইসাথে ক্যাম্প গুলিতে অবৈধ এবং বিপজ্জনক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কমাতে শিক্ষা ও জীবিকার অ্যাক্সেসের উপর সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নিতে বাংলাদেশকে চাপ দেওয়া। কর্তৃপক্ষের উচিত বাধ্যতামূলক রাত্রি কালিন টহলের জন্য এবিপিএন-এর কর্তৃক শরণার্থীদের ব্যবহার বন্ধ করা।

“বাংলাদেশ সরকারের অপরাধীদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা প্রদান করতে হবে,” গাঙ্গুলি বলেছেন। "দাতা দেশগুলোর সরকারের উচিত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হিউম্যানিটারিয়ান বা মানবিক চাহিদা মেটাতে সাহায্য করা এবং মিয়ানমারে অধিকার এবং সম্মানপূর্ণ বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ দেওয়া যাতে তারা একদিন দেশে ফিরে যেতে পারে।"

 

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ন্যায়বিচারের প্রতিবন্ধকতার বিস্তারিত বিবরণের জন্য, অনুগ্রহ করে নীচে দেখুন

 

সহিংসতা এবং ন্যায়বিচার এর যেখানে কোন গুরুত্ব নেই, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সুরক্ষা
 

প্রায় দশ লক্ষ জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে রয়েছে, যারা কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ, জনাকীর্ণ শিবিরে বা ভাসান চরের বিচ্ছিন্ন পলি দ্বীপে বসবাস করছে। তাদের অধিকাংশই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক নৃশংসতার কারণে পালিয়ে এসেছে। চেক পয়েন্টে হয়রানি এবং মার্কেট ও কমিউনিটি স্কুল বন্ধ করা সহ ক্যাম্পে জীবিকা, চলাচল এবং শিক্ষার উপর বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জবরদস্তিমূলক বিধি নিষেধের মাঝেই ক্যাম্পের মধ্যে সহিংসতা বেড়েছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, কমিউনিটির নেতা এবং অধিকার বিষয়ক আইনজীবী মহিব উল্লাহ কুতুপালং ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ এবং নিহত হয়েছিল যখন কর্তৃপক্ষ তাকে হত্যার হুমকি দেয়ার পর বিষয়টি নজরদারি করতে ব্যর্থ হয়েছিল। “সশস্ত্র দলগুলো  সক্রিয় কর্মীদের লক্ষ্য করে থাকে তাদের ক্ষমতার কারণে,” একজন অ্যাক্টিভিস্ট বলেন। “তারা ক্যাম্পগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। অ্যাক্টিভিস্টরা এবং শিক্ষিত ব্যক্তিরা শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠলে, সাধারণ রোহিঙ্গারা আর সশস্ত্র গোষ্ঠী গুলিকে ভয় পাবে না, যার ফলে তারা (সশস্ত্র দলগুলো) তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাবে।”

শরণার্থীরা বলেছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠী ১৩ বছর বা তার বেশি বয়সী ছেলেদের ঘুষ দিয়ে কাজে নিয়োগ করে। "যখনই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা যুবকদের ঘুরে বেড়াতে দেখবে, তারা তাদের কাছে যাবে এবং বলবে, ‘দেখো, আমি তোমাকে এমন কিছু দিতে পারি যা তোমাকে শক্তিশালী করে তুলবে,'" একজন সক্রিয় কর্মী জানিয়েছেন। "তারা যুবকদের বন্দুক এবং কখনও কখনও অর্থও দেয়।"

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বীকৃত কিংবা আইনি মর্যাদা নেই, যা তাদের অভ্যন্তরীণ আইনের অধীনে একটি অনিশ্চিত অবস্থানে রাখে এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তাদেরকে দুর্বল করে তোলে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বাংলাদেশ সরকারের একটি বাধ্য বাধকতা রয়েছে যাতে শরণার্থীরা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে থাকা প্রত্যেকের অধিকার সুরক্ষিত রাখে এবং নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করে এবং দায়ীদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করে।

গ্রেপ্তার হওয়া তিনটি নথিভুক্ত মামলার একটিতে একজন মহিলাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল, তার পরিবার বলেছে যে সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ পাওয়ার পর পুলিশ ছেড়ে দিয়েছিল।  অন্য এক মামলায়, পুলিশ হত্যার সাথে জড়িত নয় এমন তিনজনকে আটক করেছে, নিহতের পরিবার জানিয়েছে। তৃতীয়টিতে, পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বেশ কয়েকজন পুরুষকে আটক করেছিল, কিন্তু পরিবারটি অন্যদের দ্বারা হুমকি পেয়েছিল যারা জড়িত ছিল কিন্তু গ্রেপ্তার হয়নি।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে, রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য ২০২৩ সালের জাতিসংঘের জয়েন্ট রেসপন্স প্লান দাতাদের অনুদানে প্রয়োজনীয় ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাত্র এক চতুর্থাংশ পেয়েছে। তহবিলের ঘাটতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে ফেব্রুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে, মাসে ১২ ডলার থেকে মাত্র ৮ ডলারে নামিয়ে এনেছে, যা হতাশাজনক এবং ক্যাম্পে মাদক চোরাচালান, চাঁদাবাজি এবং মানব পাচারের মতো অবৈধ কার্যকলাপের বিস্তার বাড়িয়ে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া সহ দাতাদের, রোহিঙ্গা শরণার্থী জনসংখ্যার ব্যাপক সুরক্ষা চাহিদা মেটাতে কাজ করা উচিত।

শরণার্থীদের পরিচয়ের সুরক্ষার জন্য নাম ও অন্যান্য বিবরণ গোপন রাখা হয়েছে।


হত্যা


হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মাঝিদের নয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যারা সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অপরাধী চক্রের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল।

একজন অ্যাক্টিভিস্ট বলেছেন "এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি শিবিরে সহিংসতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষ হত্যা করে, মাঝি ও অ্যাক্টিভিস্ট লক্ষ্য করে, ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে যাতে তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের বাধা ছাড়াই ক্যাম্পে কাজ করতে পারে,"। "তারা প্রচুর শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের নিয়োগ করছে, তাদের যোগদান করতে বা অর্থের প্রস্তাব দিয়ে যোগদান করতে বাধ্য করছে।"

বেশ কয়েকজন পরিবারের সদস্যরা বলেছেন যে তাদের মাঝি আত্মীয়দের হত্যা করা হয়েছিল যখন কর্তৃপক্ষ জোর দিয়েছিল যে তারা সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করেছে। ফেব্রুয়ারীতে নিহত একজন প্রধান মাঝির ভাই বলেছেন যে তার ভাই আগে অপহরণ ও নির্যাতনের পর পদত্যাগ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে পদত্যাগ করতে অস্বীকৃত জানিয়েছিল:

সরকার তাকে এআরএসএ-এর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার পর তিনি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। তাকে ক্যাম্পে সিআইসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশ মেনে চলতে হয়েছে। এআরএসএ তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল কারণ সে একজন প্রধান মাঝি ছিল এবং তারা চেয়েছিল যে সে তাদের অবাধ চলাচলের অনুমতি দেবে এবং অভিযানের বিষয়ে তাদের অবহিত করবে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তিনি প্রধান মাঝির পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাকে অনুমতি দেয়নি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, কর্তৃপক্ষ ও সশস্ত্র গ্রুপের মাঝে ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে মাঝিরা। মার্চে নিহত এক মাঝির বিধবা স্ত্রী বলেছেন:

কর্তৃপক্ষ মাঝিদের সব ধরণের তথ্য দিতে বাধ্য করছে, সতর্ক করেছে যে অন্যথায় তাদের এআরএসএ সহযোগী হিসাবে জেলে পাঠানো হবে। আমার স্বামী আমাকে বলেছিলেন যে তিনি কী করবেন তা তিনি জানেন না। মাঝিরা কর্তৃপক্ষকে সাহায্য না করলে তারা এআরএসএ-এর সহযোগী হয়, কিন্তু যখন তারা এআরএসএর বিরুদ্ধে যায়, তারা কর্তৃপক্ষের সহযোগী হয়।

পরিবারের আটজন সদস্য বলেছেন যে তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হুমকির কথা জানিয়েছেন কিন্তু তাদের একজনকেও সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। নিহত মাঝির ভাই বলেছেন যে কর্তৃপক্ষ তার সাহায্যের জন্য জোর করছিল এআরএসএ-এর বিরুদ্ধে ক্র্যাক ডাউনের জন্য, আর তারপর সুরক্ষার জন্য তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল:

কর্তৃপক্ষ সবসময় দেখানোর চেষ্টা করে যে তাদের এআরএসএর বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি রয়েছে। কিন্তু এআরএসএ যখন শিবিরে অপরাধ ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বেড়ায় তখন বাস্তবে এটাই দেখায় যে কর্তৃপক্ষ মাঝিদের বিপদে ফেলছে, অথচ অপরাধীরা অস্পৃশ্য রয়ে গেছে। [আমার ভাইকে] এপিবিএন তার অধীনে মাঝিদের একত্রিত করার জন্য পুলিশকে এআরএসএর অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করার দায়িত্ব দিয়েছিল। মাত্র এক সপ্তাহ পর তাকে হত্যা করা হয়।

নিহত সাব-মাঝির বিধবা স্ত্রী বললেন:

তাকে হত্যা করার আগে, [আমার স্বামী] তাকে হুমকি দেওয়া লোকদের একটি তালিকা সিআইসি এবং এপিবিএন-এ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা কিছুই করেনি। যদি তারা করতো তাহলে তাকে বাঁচানো যেত। এপিবিএন সাহায্যের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, তারা তাকে রাতে ক্যাম্প পাহারা দেওয়ার জন্য আরও চেষ্টা করতে বলেছিল।

বেশ কিছু মাঝি আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তাদের কর্তব্য পর্যবেক্ষণে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা চালিয়ে যেতে হয়েছিল। আরেকজন বিধবা নারী বলেছেন,

[আমার স্বামী] হুমকির সম্মুখীন হয়ে ছিলেন, তাই তিনি এতটা আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পারেননি। কিন্তু সেই সময়ে, এপিবিএন-এর নির্দেশ অনুসারে মাঝিদের জন্য রাতে ক্যাম্প পাহারা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। সে রাতে ডিউটি করার পর, ভোর ৪টার দিকে তিনি আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে যান। প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন্য সশস্ত্র লোক আশ্রয় কেন্দ্রটি ঘিরে ফেলে এবং গুলি চালাতে থাকে। পালানোর চেষ্টা করলেও সে ধরা পড়ে যায়। সে চিৎকার করে প্রাণ ভিক্ষা করছিল। আমি দুটি গুলির শব্দ শুনলাম, তারপর সে পালানোর চেষ্টা করল, তারপর তারা আবার তাকে গুলি করল।

সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির তথ্যদাতা হিসাবে বিবেচিত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করেছে। একজন শরণার্থী বলেছেন যে পুলিশের সাথে সাক্ষাৎকারীর কাজের কারণে মার্চ মাসে আরএসএ সদস্যরা তার ছোট ভাইকে হত্যা করেছিল:

যখন এআরএসএ কমিউনিটির সম্মানিত ব্যক্তিদের হত্যা করা এবং মুক্তিপণ দাবি করা শুরু করে, তখন আমি এআরএসএ সদস্যদের সনাক্ত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে কাজ শুরু করি। আমি লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলাম, কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি যে তারা আমার ভাইকে হত্যা করবে। যেদিন তাকে অপহরণ করা হয়, আমি পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে বলেছিলাম। আমি জানি আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। কিন্তু আমি যখনই পারি পুলিশকে সাহায্য করতে থাকব কারণ এআরএসএ হল অপরাধী। তারা মানুষ হত্যা করে, এবং তাদের গ্রেফতার করা উচিত.

অন্যদের গ্যাং দ্বন্দ্বের কারণে টার্গেট করা হয়ে থাকে। জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামী মাহাজের সদস্যরা এপ্রিল মাসে একজন কথিত এআরএসএ সমর্থককে গুলি করে এবং ছুরিকাঘাত করেছিল বলে জানা গেছে। পরের দিন তিনি মারা যান। পরিবারের একজন সদস্য বলেছেন যে ইসলামি মাহাজকে তাদের ক্যাম্পে অবাধে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কারণ এটি নিরাপত্তা বাহিনীকে আরএসএ সদস্যদের সনাক্ত করতে সহায়তা করে। “পুলিশ গুলির কথা শুনেও আমাকে সাহায্য করতে আসেনি,” পরিবারের একজন সদস্য বলেছেন। “আমি কোনো মামলা করিনি কারণ কোন বিচার হবে না। দলটি ক্যাম্পে অবাধে কাজ করে। পুলিশের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।”

নিহতদের পরিবারের মতে একটি ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই, যারা হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তারা ক্যাম্পে স্বাধীনভাবে থাকে। পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য বলেছেন যে তারা পুলিশ এবং খুনিদের মধ্যে যোগসাজশের ভয়ে মামলা করতে অস্বীকার করেছেন বা হুমকির কারণে তারা তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন। “তখন এপিবিএন-এর সাথে এআরএসএ-এর ভালো সম্পর্ক ছিল,” একজন বিধবা বলেন। তিনি তার স্বামী হত্যার সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে পুলিশকে জানানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু মামলাটি এগোয়নি। “আরএসএ সদস্যরা এপিবিএন-এর সাথে দোকানে চা খাচ্ছিলেন। এমনকি তারা অভিযুক্তদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় আড্ডাও দিচ্ছিল। আমাকে মামলা তুলে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

অনেক পরিবার যাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে তাদের স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হয়েছে, বিশেষ করে যারা ন্যায়বিচারের জন্য চেষ্টা করে ছিল। কেউ কেউ অন্য ক্যাম্পে যেতে ব্যর্থ হয়েছিল কারণ তাদের প্রয়োজনীয় সংস্থান বা সহায়তার অভাব ছিল।

একজন বিধবা বলেন “আমার স্বামী সিআইসি এবং কর্তৃপক্ষের হয়ে কাজ করতেন,”। “তারা চাইলে তাকে সুরক্ষা দিতে পারত। তারা তা করেনি, তাই তাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আমি আমার ঘরে থাকতে পারি না। আমি যদি সিআইসিকে সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করি, তারা বলে যে তারা কিছুই করতে পারবে না।"

তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর পরে ক্যাম্প ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু এখন সেখানে ভয়ে বসবাস করছেন:

আমি ভয় পাচ্ছি যে খুনিরা আবার আসতে পারে। আমার পাঁচ সন্তান রয়েছে। তারাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। প্রতি রাতে আমি গুলির শব্দ শুনতে পেতাম। আমি কখনই বুঝতে পারিনি যে তারা আমার স্বামীকে টার্গেট করবে। আমার স্বামী সবার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখত কারণ সে তার জীবনের ভয়ে থাকত।

একজন নারী জানান, ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকিতে তিনি বাড়ি ফিরতে পারছেন না। একজন কমিউনিটির নেতা হিসাবে, তিনি গ্যাংদের কাছ থেকে বছরের পর বছর হুমকি এবং সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যার পরিণতিতে একটি সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় তার বোন মারা যায় এবং সে আর তার মেয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে রতাদের চিকিৎসায় অসুবিধা হচ্ছে: "আমার মেয়ে এবং আমি সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছি না, আবার আমরা বেসরকারি হাসপাতালের খরচও বহন করতে পারছি না। আমরা উদ্বাস্তু, কিন্তু আমরা মানুষ। পুলিশও আমাদের সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করে না। তারা আমাদেরকে আবর্জনা মনে করে, তাই আমাদের লোকজনকে হত্যা করা হলেও তারা পাত্তা দেয় না।”

 

অপহরণ, নির্যাতন, চাঁদাবাজি


ক্যাম্পে সশস্ত্র দলগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মুক্তিপণ, জোরপূর্বক নিয়োগ বা মানব পাচারের জন্য অপহরণ করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অপহরণের এমন ১০টি মামলা নথিভুক্ত করেছে।

ছয় জন ভুক্তভুগী বর্ননা করেছে যে অপহরণের সময় তাদের অত্যাচার করা হয়েছিল। “আমাকে শুধুমাত্র রুটি এবং পানি খাওয়ানো হত,” ফেব্রুয়ারিতে অপহৃত হওয়া এক কিশোর বলছিল এবং তার পরিবার মুক্তিপণ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে এক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখেছিল। “তারা আমাকে মোটা বৈদ্যুতিক তার দিয়ে মারধর করত। তারা আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম। তাদের একজন আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি এখনও যখন এটি সম্পর্কে ভাবি, তখন আমার খুব চিন্তা হয়।"

আরেকজন শরণার্থী তার মার্চ মাসে অপহরণের বিষয়ে বলেন "আমি চার দিন বন্দী ছিলাম। আমার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং আমার হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। আমাকে খুব কম খাবার এবং পানি দেওয়া হত। আমাকে মারধর করা হত এবং জিজ্ঞাসা করা হত যে আমার মা কত টাকা দিতে পারবে। আমি খুব অসহায় বোধ করতাম।" তিনি বলেন, তাকে এতটাই নির্যাতন করা হয়েছিল যে তিনি হাঁটতে পারতেন না।

পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে নিখোঁজ আত্মীয়দের অভিযোগ করার পর তারা খুব সামান্য কোন সাহায্যও পায়নি। “আমরা পুলিশের কাছ থেকে খুব একটা সহযোগিতা পাইনি,” ভুক্তভুগীর ভাই বলেছেন। “তারা কেবল বলেছিল যে তারা যে মোবাইল ফোন নম্বরে মুক্তিপণ চেয়েছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এই জন্য তারা আমাদের কাছে দু’বার ঘুষ নিয়েছে। আমার ভাইকে উদ্ধারের জন্য তারা নিজেরা কোনো অপারেশন করেনি।”

দুটি পরিবার জানিয়েছে যে এপিবিএন তাদের পরিবারের সদস্যদের সামান্য সহায়তা দেওয়ার পরে উদ্ধার করার কৃতিত্ব নিয়েছে। "আমার ভাইকে উদ্ধার করার পর, এপিবিএন তার সাক্ষাৎকার নেয় এবং তাকে উদ্ধার করার কৃতিত্ব দাবি করার জন্য তার সাথে ছবি তুলে," একজন ভুক্তভোগীর ভাই বলেছিলেন। "আমরা তাদের সার্কাস দেখে খুব হতবাক হয়েছিলাম। আমাদের ভাইকে উদ্ধারের জন্য আমরা ক্রমাগত পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা কিছুই করেনি। আমাদের একটি বিশাল মুক্তিপণ দিতে হয়েছিল এবং নিজেদেরকেই তাকে উদ্ধার করতে হয়েছিল।”

অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার একজনের মা বলেছেন:

এপিবিএন কিছুই করেনি, কিন্তু তারা আমার ছেলেকে উদ্ধারের কৃতিত্ব নিতে এসেছিল। আমরা তাকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই যেখানে তিন দিন তার চিকিৎসা হয়। আমি বিচার পাওয়ার জন্য পুলিশ এবং ইউএনএইচসিআর সুরক্ষা দলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা দুজনেই বলেছে যে আমি যদি অপহরণকারীকে চিনতে না পারি, তাহলে কিছু করার নেই। আমি তাদের অপহরণকারীর ফোন নম্বর দিয়েছিলাম। কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ মামলা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। হয়তো তারা আশা করেছিল যে তিনি জীবিত নয়, মৃত হয়ে ফিরে আসবেন। তারা চাইলে তাকে উদ্ধার করতে পারত।

মাঝি এবং কমিউনিটি নেতাদেরও এআরএসএ দ্বারা অপহরণের টার্গেট করা হয়েছে৷ একজন শিক্ষক বলেছেন যে সাম্প্রতিক মার্চ মাসে অভিযুক্ত এআরএসএ সদস্যরা তাকে তিনবার অপহরণ করেছে এবং গুরুতরভাবে মারধর করেছে কারণ সে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেছিল:

আমার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল, এবং তারা আমার মুখে একটি কাপড় রেখেছিল যাতে আমি কথা বলতে বা চিৎকার করতে পারি না। তারা আমাকে এআরএসএর বিরুদ্ধে পুলিশকে সাহায্য করার অভিযোগ এনেছে। তারা আমার পিঠে, পায়ে রড ও লগি দিয়ে মারতে শুরু করে। তারা আমাকে আমার শেষ ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করেছিল, যেন তারা আমাকে হত্যা করতে চলেছে। আমাকে হত্যার পর কীভাবে তারা আমার লাশ গুম করবে সে সম্পর্কে তাদের কথা বলতে শুনেছি। তারা বলেছিল যে তারা অন্যদের মতো আমার লাশ ল্যাট্রিনে লুকিয়ে রাখবে।

তিনি বলেন, তারা তাকে নির্যাতন করতে থাকে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে যে কেন সে ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেল না যেখানে তাকে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, তার পরিবার এবং ছাত্রদের কারণে তিনি থেকে গেছেন।

"সমস্যা হল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছে না," একজন মাঝি বলেছেন, যিনি ২০২২ সালে অপহৃত হয়েছিলেন এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে তথ্য সরবরাহ করতে থাকলে তাকে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। “কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে এই সমস্ত তথ্য নেয় কিন্তু তারপর তারা দেখতে থাকে তাদের সাহায্য করার জন্য এআরএসএ আমাদের কিভাবে হত্যা করে থাকে। আমরা জঙ্গি সংগঠন ও কর্তৃপক্ষের দ্বারা টার্গেটেড হয়ে আসছি। আমার অনেক সহকর্মীকে হত্যা করা হচ্ছে।”

একটি গ্যাং মার্চ মাসে একজন প্রাক্তন মাঝিকে অপহরণ করে এবং তাকে রড দিয়ে মারধর করে যতক্ষণ না তার পরিবার তার মুক্তির জন্য ১০০,০০০ টাকা ($৯২৫) প্রদান করে। হামলাকারীদের সাথে পুলিশের যোগসাজশের সম্পর্কের ভয়ে তার পরিবার পুলিশকে কখনই হামলার কথা জানায়নি। "দলটি আমাদের ক্যাম্পেই অবস্থিত," তার এক ছেলে বলল। "তারা অবাধে ঘুরে বেড়ায় এবং কর্তৃপক্ষের সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে, তাই আমরা কখনই অপহরণের বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ করার সাহস করিনি।"

পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য জানান, অভিযুক্তরা ক্যাম্পে অবাধে ঘুরে বেড়ায়, অথচ পুলিশ পরিবারের অভিযোগ উপেক্ষা করে চলে। অন্যরা বলেছে যে তারা হুমকির কারণে বা তারা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করেনি বলে অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করেনি। নির্যাতিত শরণার্থীরা বলেছেন যে তারা ক্রমাগত ভয় অনুভব করছেন, একই সাথে ক্যাম্পে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার কোন সুযোগ নেই।

চলমান হয়রানির কারণে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া একজন ব্যক্তি বলেছিল "আমার পিঠে, পায়ে, সর্বত্র অত্যাচারের ক্ষত এখনও আছে,"। “অপহরণের পর থেকে আমি আমার ঘরে থাকি না। আমি মামলা করতে অস্বীকার করেছিলাম কারণ আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম, এবং যেভাবেই হোক মামলা পরিচালনা করার জন্য আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। আমি মামলা না করলেও আরএসএ সদস্যরা আমার পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের নেতা সম্প্রতি আমাকে ফোন করে আমার ভাইদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন।


যৌন সহিংসতা এবং জোরপূর্বক বিবাহ


হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দ্বারা পর্যালোচনা করা মেডিকেল নথি অনুসারে ২০২৩ সালের প্রথম দিকে, একজন মহিলা তার ৬ বছর বয়সী মেয়েকে তাদের আশ্রয়ের সামনে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। তিনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে একজন ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করে দেখেন যে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মেয়েটির মা এপিবিএন এবং ক্যাম্প ইনচার্জ উভয়ের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সহায়তা পেতে লড়াই করতে হয়ে ছিল:

এপিবিএন আমাকে বলেছে যে যেহেতু এটি একটি "সংবেদনশীল কেস", আমি শুধুমাত্র সিআইসি-তে অভিযোগ করতে পারি। আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, কিন্তু আমি রোহিঙ্গা হওয়ার কারণে সিআইসি বা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সমর্থন চাই। বাংলাদেশিদের মতো আমি থানায় যেতে পারি এমন নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, সিআইসি আমাকে অনুমতি দেয়নি বা এমনকি আরও পাঁচ দিনের জন্য আমার সাথে দেখা করেনি।

অবশেষে যখন তিনি স্থানীয় পুলিশের সাথে দেখা করতে সক্ষম হন, অফিসাররা তাকে মামলা করার জন্য মেডিকেল নথি জাল করার অভিযোগ তোলেন। তিনি সেই ব্যক্তির কাছ থেকে হুমকি পেতে শুরু করেন যাকে তার মেয়ে আক্রমণকারী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল এবং একটি নতুন আশ্রয় তৈরি করার জন্য কোনও সহযোগীতা ছাড়াই তার পরিবারকে অন্য ক্যাম্পে নিয়ে যেতে হয়েছিল। "কর্তৃপক্ষ আমাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে চায় না বলে আমি সেই লোকদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নিতে পারিনি," তিনি বলেছিলেন। "আমার মেয়ের সাথে যা ঘটেছে তার জন্য তাদের সামান্য সহানুভূতি নেই।"


তিনি তার দুই বড় মেয়েকে তাদের নিরাপত্তার জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ৪০০,০০০ টাকা ($৩,৭০০) খরচ করেছেন। "আমার [৬ বছর বয়সী] মেয়ে ক্রমাগত ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে," তিনি বলেছিলেন।


অনেক নারী বা তাদের পরিবারের সদস্যরা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের দ্বারা বিবাহিত নারী ও মেয়েদের যৌন নিপীড়নের বর্ণনা দিয়েছেন যাদের স্বামী কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল। একজন মহিলা যার স্বামী শিবির ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাকে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য দ্বারা ধর্ষণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে, যিনি হামলাটির চিত্রায়ন করেছিলেন এবং এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন৷


হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে বেশ কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা রিপোর্ট করেছে। "ক্যাম্পে বসবাস করা সত্যিই বিপজ্জনক, বিশেষ করে যদি আপনার বাড়িতে মেয়েরা বসবাস করে," একজন মা বলেছিলেন।


কথিত জঙ্গিরা তাদের অল্পবয়সী মেয়েদের জোরপূর্বক বিয়ে প্রতিরোধকারী পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। একজন ১৬ বছর বয়সী মেয়ে বলেছিল যে সে যখন মাত্র ১৪ বছর বয়স তখন একজন এআরএসএ সদস্যকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল। কথিত এআরএসএ সদস্যরা তার বাবা এবং ভাইকে অপহরণ করেছিল, যদি তারা তাকে ২৮ বছর বয়সী একজন পুরুষকে বিয়ে করতে রাজি না হয় (যার অন্য স্ত্রী ছিল) তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল। বিয়েতে সম্মতি দেওয়ার পরেই দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল৷ মেয়েটি রিপোর্ট করেছে যে তাকে যার সাথে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছিল সে তাকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার করতো৷

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country
Tags