Skip to main content

ভারত: শত শত মুসলমানকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে

অনেক ভারতীয় নাগরিককে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই বিতাড়িত করা হয়েছে

২৬শে এপ্রিল২০২৫আহমেদাবাদভারতে অভিযানের সময় আটক হওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তারা কথিত নথিবিহীন বাংলাদেশি নাগরিকদের আটক করছেন।  © ২০২৫ অমিত ডেভ/রয়টার্স
  • ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলমানকে অবৈধ অভিবাসী আখ্যা দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে বিতাড়িত করেছে।
  • অনিয়মিত অভিবাসন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি অগ্রহণযোগ্য, কারণ তারা যথাযথ প্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ নিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডকে উপেক্ষা করেছে।
  • ভারত সরকারের উচিত, যাদেরকে বিতাড়ন করা হচ্ছে, তাদের মৌলিক প্রক্রিয়াগত সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও সীমান্তরক্ষীরা যেন অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার না করে, তা নিশ্চিত করা।

(নিউইয়র্ক) –ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলমানকে “অবৈধ অভিবাসী” আখ্যা দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে বিতাড়িত করেছে, হিউম্যান রাই্টস ওয়াচ আজ জানিয়েছে। এদের অনেকেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর ভারতীয় নাগরিক।

২০২৫ সালের মে মাস থেকে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-নেতৃত্বাধীন সরকার জাতিগত বাঙালি মুসলমানদের বাংলাদেশে বিতাড়নের অভিযান তীব্র করেছে, যা আপাতদৃষ্টিতে আইনি অনুমোদন ছাড়া ভারতে প্রবেশ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। সরকারের উচিত, যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই বেআইনিভাবে বিতাড়ন বন্ধ করা এবং এর পরিবর্তে সকলের জন্য প্রক্রিয়াগত সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা, যাতে নির্বিচারে আটক ও বিতাড়ন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

“ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি ভারতীয় নাগরিক সহ বাঙালি মুসলমানদের নির্বিচারে দেশ থেকে বিতাড়িত করে বৈষম্য উসকে দিচ্ছে,” বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ইলাইন পিয়ারসন। “অনিয়মিত অভিবাসন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি অগ্রহণযোগ্য, কারণ তারা যথাযথ প্রক্রিয়াগত অধিকার, অভ্যন্তরীণ নিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডকে উপেক্ষা করেছে।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জুন মাসে ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যার মধ্যে ৯টি ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকরা আছেন যারা বাংলাদেশে বিতাড়িত হওয়ার পর ভারতে ফিরে এসেছেন, এবং আটক হয়ে এখনো নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও আছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ৮ জুলাই ফলাফল সহ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি।

ভারত সরকার বিতাড়িত মানুষের সংখ্যার কোনো সরকারি তথ্য দেয়নি, তবে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে যে ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ভারত ১,৫০০ জনের বেশি মুসলিম পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করেছে, যার মধ্যে মিয়ানমারের প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও ছিলেন। বিতাড়ন এখনো অব্যাহত আছে।

বিজেপি-শাসিত আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা, এবং রাজস্থান রাজ্যের কর্তৃপক্ষ মুসলিমদের, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র অভিবাসি শ্রমিক, আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, সীমান্তরক্ষীরা নাগরিকত্বের দাবি পর্যাপ্তভাবে যাচাই না করেই আটককৃতদের হুমকি দিয়েছে এবং মারধর করেছে, যাতে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। ভারত সরকারকে এমন কয়েক ডজন ব্যক্তিকে পুনরায় ফিরিয়ে নিতে হয়েছে যারা শেষ পর্যন্ত তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পেরেছেন।

এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীর-এ হিন্দু পর্যটকদের উপর বন্দুকধারীদের দ্বারা মারাত্মক হামলার পর এই দমন-পীড়ন শুরু হয়। পুলিশ মুসলিমদের হয়রানি করতে শুরু করে, তাদের নাগরিকত্বের দাবি মানতে অস্বীকার করে এবং তাদের ফোন, নথি ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র জব্দ করে, যার ফলে তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। আটককৃতদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন যে ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তারা তাদের হুমকি দিয়েছে এবং আক্রমণ করেছে, এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে, বন্দুকের মুখে তাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে বাধ্য করেছে।

আসাম রাজ্যের ৫১ বছর বয়সী ভারতীয় নাগরিক এবং প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক খায়রুল ইসলাম বলেছেন যে গত ২৬ মে ভারতীয় সীমান্ত কর্মকর্তারা তার হাত বেঁধে, মুখ চেপে ধরে তাকে এবং আরও ১৪ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। তিনি বলেন, “বিএসএফ কর্মকর্তা আমাকে মারধর করে যখন আমি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে অস্বীকার করি এবং চারবার শূন্যে রাবার বুলেট ফায়ার করে।” তিনি দুই সপ্তাহ পর ফিরে আসতে সক্ষম হন।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনিয়মিত অভিবাসন কয়েক দশক ধরে চলছে, তবে এর কোনো সঠিক তথ্য নেই এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রায়শই সংখ্যা স্ফীত করা হয়। জ্যেষ্ঠ বিজেপি কর্মকর্তারা বারবার বাংলাদেশ থেকে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের “অনুপ্রবেশকারী” আখ্যা দিয়েছেন এবং হিন্দু রাজনৈতিক সমর্থন লাভের জন্য ভারতীয় মুসলিমদের কলঙ্কিত করতে এই শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছেন।

মে মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যগুলোকে “অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত, চিহ্নিত এবং বিতাড়িত” করার জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করার পর এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের “আটকে রাখার জন্য প্রতিটি জেলায় পর্যাপ্ত হোল্ডিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা” করার নির্দেশ দেওয়ার পর বেশ কয়েকটি বিজেপি-শাসিত রাজ্য সরকার বাংলাভাষী মুসলিম অভিবাসি শ্রমিকদের আটক করতে শুরু করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে তারা ২,৩০০ জনেরও বেশি মানুষের নাম বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের জাতীয়তা যাচাই করার জন্য পাঠিয়েছে।

৮ মে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারকে চিঠি লিখে এই “পুশ-ইন” – সম্মিলিত বিতাড়নের স্পষ্ট ইঙ্গিত – কে “অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করে এবং জানায় যে তারা “শুধুমাত্র বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নিশ্চিত হওয়া এবং সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন করা ব্যক্তিদেরই গ্রহণ করবে।”

মে মাসে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আসামের একটি আটক কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ সীমান্তে বিতাড়িত করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে যে কর্তৃপক্ষ আরও ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারের কাছে সমুদ্রে নামিয়ে দেয়, তাদের লাইফ জ্যাকেট দিয়ে তীরে সাঁতরাতে বাধ্য করে, যা মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুস “মানব শালীনতার প্রতি অবমাননা” বলে অভিহিত করেছেন।

অ্যান্ড্রুস বলেন, এই ঘটনাটি “নন-রিফুলেমেন্ট নীতি” এর একটি “গুরুতর লঙ্ঘন” ছিল, যা আন্তর্জাতিক আইনি নিষেধাজ্ঞা অনুসারে মানুষ কে এমন কোনও অঞ্চলে ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ করে যেখানে তাদের জীবন বা স্বাধীনতার হুমকির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মে মাসের প্রথম দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিতাড়ন আটকাতে অস্বীকার করে বলেছিল যে যদি তাদের ভারতীয় আইন অনুযায়ী বিদেশী হিসেবে পাওয়া যায়, তবে তাদের বিতাড়িত করতে হবে। ১৬ মে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আদালত বলেন যে এই অভিযোগগুলোকে সমর্থন করার মতো কোনো প্রমাণ নেই, দাবি করে যে এটি একটি “সুন্দরভাবে তৈরি গল্প”। তবে, ভারত সরকার এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেনি

ভারত ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন দ্য এলিমিনেশন অফ অল ফর্মস অফ রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশন এর অধীনে বাধ্য যে সকলের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং জাতি, বর্ণ, বংশ বা জাতীয়তা বা জাতিগত উৎসের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বঞ্চিত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই যে কাউকে আটক ও বিতাড়ন করা মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন। ভারত সরকারের উচিত, যাদেরকে বিতাড়ন করা হচ্ছে তাদের জন্য মৌলিক প্রক্রিয়াগত সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা। এর মধ্যে রয়েছে বিতাড়নের কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য প্রাপ্তি, যোগ্য আইনি প্রতিনিধিত্ব এবং বিতাড়নের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ।

কর্তৃপক্ষের উচিত, নিরাপত্তা বাহিনী এবং সীমান্তরক্ষীরা যেন অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার না করে, তা নিশ্চিত করা এবং বলপ্রয়োগের অভিযোগগুলো নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা। অপব্যবহারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ বা বিচার করা উচিত। বিতাড়নের জন্য আটককৃতদের পর্যাপ্ত খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে, এবং কর্তৃপক্ষের উচিত নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সহ প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণ করা।

“ভারত সরকার হাজার হাজার অসহায় মানুষকে অননুমোদিত অভিবাসীদের খোঁজে বিপদে ফেলছে, কিন্তু তাদের এই কাজ মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বৈষম্যমূলক নীতিকেই প্রতিফলিত করে,” বলেছেন পিয়ারসন। “সরকার রাজনৈতিক সমর্থন লাভের চেষ্টা করতে গিয়ে নির্যাতিতদের আশ্রয় দেওয়ার ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসকে দুর্বল করছে।”

শরণার্থী ও অভিবাসীদের বেআইনি ও বৈষম্যমূলক বিতাড়ন 

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে তারা এমন লোকদের বিতাড়িত করছে যারা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে। যদিও বিতাড়িত কয়েক ডজন লোক বাংলাদেশি নাগরিক বলে ইঙ্গিত দিয়েছে, তবে অনেকেই বলেছেন যে তারা নন। যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাবের কারণে অনেক ভারতীয় নাগরিক - যাদের অধিকাংশই বাংলাভাষী মুসলিম - বেআইনিভাবে বিতাড়িত হয়েছেন।

বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ বারবার বলেছে যে ভারত সরকারের এই একতরফা পদক্ষেপগুলি প্রতিষ্ঠিত প্রত্যাবাসন পদ্ধতি লঙ্ঘন করে এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে “আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এই মামলাগুলি সমাধানের জন্য স্বচ্ছ, যাচাইযোগ্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করার” আহ্বান জানিয়েছে।

বিতাড়িতদের মধ্যে অন্তত ৩০০ জন আসাম রাজ্য থেকে এসেছেন, যেখানে ২০১৯ সালে একটি বিতর্কিত নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া চলেছিল যা ছিল স্বেচ্ছাচারী ও ত্রুটিপূর্ণ, এবং প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

অন্যান্যদের মধ্যে অনেকেই বাঙালি মুসলিম যারা কাজের সন্ধানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, ওড়িশা এবং দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন।

আসামের ত্রুটিপূর্ণ নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া

আসামে, বাঙালিরা, যাদেরকে “অ-আসল” বাসিন্দা বলে সন্দেহ করা হয়, দীর্ঘকাল ধরে পক্ষপাতমূলক নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ার শিকার হয়ে আসছেন। ১৯৬৪ সাল থেকে, বিদেশী ট্রাইব্যুনাল – আধা-বিচারিক আদালত – নাগরিকত্বের বিষয়গুলি নির্ধারণ করে আসছে। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, এই ট্রাইব্যুনালগুলি ১,৬৫,৯৯২ জনকে অনিয়মিত অভিবাসী ঘোষণা করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষণায় দেখা গেছে যে এই সংস্থাগুলির স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, প্রায়শই বাঙালি মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকার লঙ্ঘন করে। একবার একজন ব্যক্তিকে একটি ট্রাইব্যুনাল দ্বারা ছাড়পত্র দেওয়া হলেও, তাকে একই বা ভিন্ন ট্রাইব্যুনালের সামনে আবার আনা যেতে পারে। বিভিন্ন নথিতে নামের বানান ভুল থাকার কারণে, লিখিত বিবৃতিতে কিছু তথ্য উল্লেখ না করার কারণে, বা সাক্ষ্যগ্রহণে সামান্য অসঙ্গতির কারণে মানুষের নাগরিকত্বের দাবি অস্বীকার করা যেতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে, মানুষ তাদের দাবি পেশ করার সুযোগও পায় না, যা একতরফাভাবে – তাদের অনুপস্থিতিতে – সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আসামের আইনজীবীরা বলেছেন যে এটি মূলত সীমান্ত পুলিশের সঠিক তদন্ত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সময়মতো নোটিশ দিতে ব্যর্থতার কারণে হয়। ১৯৮৫ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালের মধ্যে, এই ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৬৩,৯৫৯ জনকে বিদেশী ঘোষণা করা হয়েছিল।

২০১৯ সালের আগস্টে ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস, আসামে একটি ত্রুটিপূর্ণ এবং বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া, ১.৯ মিলিয়ন মানুষকে বাদ দিয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেকেই বছরের পর বছর ধরে ভারতে বাস করে আসছিলেন, কিছু ক্ষেত্রে তাদের সারা জীবন। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের বিদেশী ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে।

মে মাসে, আসামের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, নিশ্চিত করেছেন যে কর্তৃপক্ষ ৩৩০ জন কথিত অবৈধ অভিবাসীকে বাংলাদেশে “ফেরত পাঠিয়েছে”। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে, রাজ্য বিদেশীদের ট্রাইব্যুনালকে জড়িত না করেও এবং এমনকি যদি তাদের নাম ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনসে থাকলেও মানুষকে বিতাড়িত করবে।

পুশব্যাক” অব্যাহত থাকবে এবং বিদেশীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া, যা এনআরসি [ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস]-এর কারণে স্থগিত করা হয়েছিল, আবার দ্রুত শুরু হবে। এবং এবার, যদি কাউকে বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, আমরা তাদের ট্রাইব্যুনালে পাঠাব না; আমরা শুধু তাদের ফেরত পাঠাতে থাকব। এর জন্য প্রস্তুতি চলছে।

যদিও তিনি জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে তাদের নাগরিকত্বের অবস্থা নিয়ে আপিল বিচারাধীন থাকা ব্যক্তিদের বিতাড়িত করা হবে না, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখেছে যে আপিল বিচারাধীন থাকা বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে আটক করে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে।

বারপেটা জেলার ৫১ বছর বয়সী একজন দৈনিক মজুরি কর্মী ২০১৪ সালে একটি একতরফা রায়ে অনিয়মিত অভিবাসী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যদিও তার পরিবারের বাকি সদস্যদের তা করা হয়নি। তার আপিল সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে কিন্তু গত ২৪ মে কর্তৃপক্ষ তাকে নির্বিচারে আটক করে। দুই দিন পর, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাকে মধ্যরাতের পর বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে গিয়ে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। তিনি বলেন: “আমি মৃতদেহের মতো বাংলাদেশে হেঁটেছি। আমি ভেবেছিলাম তারা [সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী- বি এস এফ] আমাকে মেরে ফেলবে কারণ তাদের হাতে বন্দুক ছিল এবং আমার পরিবারের কেউ জানবে না।”

তিনি এবং আরও পাঁচজন কয়েক ঘন্টা হাঁটার পর, বাংলাদেশী গ্রামবাসীরা তাদের একটি নদীবেস্টিত দ্বীপে নিয়ে যায় যেখানে তারা ভারতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। তিনি দাবি করেছেন যে তারা দুইজন ভারতীয় বিএসএফ সদস্যের উপস্থিতিতে প্রবেশ করেছিল কিন্তু তাদের থামানো হয়নি। তার আইনজীবী বলেছেন যে এই বিতাড়ন সুপ্রিম কোর্টের আদেশের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আইনজীবী বলেন, “আদালতের আদেশগুলি পদ্ধতিগতভাবে যাচাই করা হয়নি।” “তিনি জামিনের কোনো শর্ত লঙ্ঘন করেননি।”

খায়রুল ইসলামকেও বেআইনিভাবে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছিল যদিও তার নাগরিকত্বের দাবি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ছিল। ২০১৬ সালে একটি বিদেশী ট্রাইব্যুনাল তাকে অনিয়মিত অভিবাসী ঘোষণা করেছিল। গত ২৩ মে রাতে, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে মোরিগাঁও জেলার তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আটক করে। তিনি বলেন, তিনি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী নো-ম্যানস-ল্যান্ডে দুই দিন কাটিয়েছেন। তার স্ত্রী বলেন যে একজন স্থানীয় সাংবাদিক তাকে বাংলাদেশে তোলা একটি ভিডিও দেখালে তিনি জানতে পারেন যে তার স্বামী বাংলাদেশে আছেন।

যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাবে আসামের অনেক পরিবার কোনো প্রতিকার পায়নি। কার্বি আংলং জেলায়, পুলিশ ২৩ মে রাতে ৪৫ বছর বয়সী একজন পুরুষকে আটক করে। তার পরিবার জানিয়েছে যে কর্মকর্তারা কেন তাকে আটক করা হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। পরিবার জানিয়েছে যে একটি বিদেশী ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তার পক্ষে রায় দিয়েছিল কিন্তু তার গ্রেপ্তারের পর যখন তারা স্থানীয় ট্রাইব্যুনালে যান, তখন তারা দেখতে পান যে এপ্রিল মাসে একটি নতুন একতরফা আদেশের মাধ্যমে তাকে অনিয়মিত অভিবাসী ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবার জানিয়েছে যে তারা তার অবস্থান সম্পর্কে জানে না এবং জুন মাসে গুয়াহাটি হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছে।

মালিকা খাতুন (৬৭) কে গত ২৪ মে বারপেটা জেলায় পুলিশ আটক করে। তার ছেলে ইমরান আলী খান বলেন, “তাকে কিভাবে ফিরিয়ে আনব, আমার কোনো ধারণা নেই।” খান বলেন যে তার মা, যিনি সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারেন না এবং যার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল, ২৭ মে ভোর ৩টার দিকে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ তাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার সময় একা ছিলেন। ২৯ মে, তিনি কুড়িগ্রাম জেলার কিছু গ্রামবাসীর কাছ থেকে ধার করা একটি ফোন ব্যবহার করে তাকে ফোন করেন, যেখানে তিনি আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলেন। খান বলেন যে তার মা ২০২২ সালে জামিনে মুক্তি পাওয়ার আগে প্রায় ছয় বছর কোকরাঝাড় আটক কেন্দ্রে কাটিয়েছিলেন। খাতুন ছিলেন নয় ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র যাকে অনিয়মিত অভিবাসী ঘোষণা করা হয়েছিল। খাতুনের মামলাও গুয়াহাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

গত ২৫ মে বারপেটা জেলায় ৪৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে আটক করে পরের দিনই তাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। তার ছেলে বলেন যে ৩০ মে তার বাবা বাংলাদেশর জামালপুর জেলা থেকে তাদের ফোন করেছিলেন। ছেলে বলেন, “বিএসএফ কর্তৃপক্ষ তাকে বলেছিল যে যদি সে সীমান্ত থেকে ফিরে আসে তবে তারা তাকে গুলি করবে।” ছেলে বলেন যে তার বাবা তিন দিন ধরে হেঁটে এবং রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে মসজিদে আশ্রয় নেওয়ার আগে। তিনি তার পরিবারের একমাত্র সদস্য ছিলেন যাকে অনিয়মিত অভিবাসী ঘোষণা করা হয়েছিল, এবং তার আপিল গুয়াহাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

আসামের আইনজীবীরা বলেছেন যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে অনেক লোককে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে। আসাম ভিত্তিক আইনজীবী আমান ওয়াদুদ বলেন, “বিতাড়নের জন্য একটি সঠিক আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে যেখানে উৎস দেশের তাদের জাতীয়তা নিশ্চিত করা উচিত।” ২৭ মে, ওয়াদুদ ভারতীর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে বিতাড়নের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন, কিন্তু এখনো কোনো উত্তর পাননি। “তারা লোকদের তুলে নিচ্ছে এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।”

৫ জুন একটি খোলা চিঠিতে, ১০০ জনেরও বেশি কর্মী, আইনজীবী এবং শিক্ষাবিদ ভারত সরকারকে আসাম থেকে বিতাড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, বলেছেন যে এটি বিতাড়িতদের জীবন ও সমতার অধিকার লঙ্ঘন করে। যারা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তারা বলেছেন, “পুশব্যাকগুলি বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীদের গুলির মুখে বা অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের জন্য বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের দ্বারা আটক হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়ে মানুষকে গুরুতর বিপদে ফেলার ঝুঁকি তৈরি করে।”

প্রান্তিক বাঙালি মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের লক্ষ্যবস্তু করা

বেশ কয়েকটি বিজেপি-শাসিত রাজ্য বাঙালি মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে তাদের দমন-পীড়ন তীব্র করেছে, যাদের অনেকেই দারিদ্র্যে বাস করেন, তাদের নাগরিকত্বের অবস্থা যাচাই না করেই।

মহারাষ্ট্রে, কর্তৃপক্ষ ভারত-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে আসা বেশ কয়েকজন অভ্যন্তরীণ অভিবাসী আটক করে বাংলাদেশে বিতাড়িত করেছে, যা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী। মুম্বাইয়ে, কর্তৃপক্ষ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা অন্তত সাতজন শ্রমিককে আটক করে বাংলাদেশে বিতাড়িত করেছে, যাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য হস্তক্ষেপ করার পরই ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছর বয়সী পরিযায়ী শ্রমিক নাজিমুদ্দিন শেখ পাঁচ বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করার পর ৯ জুন তাকে আটক করে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়। তিনি বলেন, পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায়, তার মোবাইল ফোন জব্দ করে, এবং তার পরিচয়পত্র ছিঁড়ে ফেলে যা তার নাগরিকত্বের প্রমাণ ছিল। তারপর তারা তাকে এবং আরও ১০০ জনের বেশি মানুষকে বিএসএফের বিমানে করে ত্রিপুরা রাজ্যে উড়িয়ে নিয়ে যায়, যা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী। তিনি বলেন, “আমরা ভারতীয় বলার পরও [বিএসএফ] আমাদের কথা শোনেনি।” “যদি আমরা বেশি কথা বলতাম, তারা আমাদের মারধর করত। তারা লাঠি দিয়ে আমার পিঠে ও হাতে আঘাত করত। তারা আমাদের মারধর করছিল এবং বলছিল যে আমরা বাংলাদেশি।”

শেখ বলেন যে তাকে আটজনের সাথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। যখন তিনি বাংলাদেশের একটি গ্রামে পৌঁছান, বাসিন্দারা তাকে তার আত্মীয়দের ফোন করতে দেন এবং তারপর তাকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের একটি স্থানীয় ফাঁড়িতে নিয়ে যান। ১৫ জুন, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তাকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি রাজ্য সরকারগুলির সমালোচনা করে বলেছেন: “বাংলা কথা বলা কি অপরাধ? আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত যে এমনটি করে আপনারা বাংলাভাষী প্রত্যেককে বাংলাদেশী প্রমাণ করছেন।”

মিডিয়া রিপোর্ট করেছে যে এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে, বিজেপি-শাসিত গুজরাট রাজ্যের কর্তৃপক্ষ আহমেদাবাদের চণ্ডোলা লেক এলাকা এবং কাছাকাছি সিয়াসাত নগরে ১০,০০০ এরও বেশি কাঠামো, যার মধ্যে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদ ছিল, যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই ভেঙে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে এই কাঠামো অবৈধ বসতিতে ছিল যেখানে “অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীরা” বাস করত। এই নির্বিচারে এবং শাস্তিমূলক ধ্বংসযজ্ঞ নভেম্বর ২০২৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় লঙ্ঘন করে যা এমন কোনো পদক্ষেপের আগে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিতে হবে এমন পদক্ষেপ নির্ধারণ করে।

জুন মাসে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “‘জাতীয় নিরাপত্তা’ এবং ‘বিদেশী জাতীয়তা’ কখনই আইনি সুরক্ষা ছাড়াই সম্প্রদায়ের জোরপূর্বক উচ্ছেদের ন্যায্যতা প্রমাণের অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।” এই দমন-পীড়নের অংশ হিসাবে, পুলিশ আহমেদাবাদে ৮৯০ জনকে আটক করে, যার মধ্যে ২১৯ জন মহিলা এবং ২১৪ জন শিশু ছিল, এবং তাদের ৪ কিলোমিটার শহর জুড়ে হাঁটানো হয়েছিল। গুজরাট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে তারা “অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা” নিচ্ছে এবং রাজ্য জুড়ে প্রায় ৬,৫০০ জনকে আটক করেছে, এবং বলেছে যে যারা “অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন বা আশ্রয় দেবে তাদের গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।”

ভারতীয় সংসদের সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম গত ৩ মে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লেখা একটি চিঠিতে লিখেছেন, “বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের গুজরাটে আটক করা হচ্ছে, যদিও তারা একাধিক বৈধ পরিচয়পত্র উপস্থাপন করছেন।” “আরও উদ্বেগজনক হল পুরো বাংলাভাষী বসতিগুলোকে লক্ষ্য করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার খবর, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ নথি ধ্বংস হচ্ছে এবং পরিবারগুলো জোরপূর্বক স্থানচ্যুত হচ্ছে।”

জুলাই মাসের প্রথম দিকে, ওড়িশার ঝারসুগুড়া জেলার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা ৪৪৪ জন অভিবাসী শ্রমিককে আটক করেছে, যাদের সকলেই পুরুষ, যাদের অধিকাংশই নির্মাণ বা খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। বর্তমানে, তাদের মধ্যে ৪৪ জন জেলার দুটি হোল্ডিং সেন্টারে রয়েছেন।

রাজস্থান রাজ্যে, কর্তৃপক্ষ ১৭টি জেলা জুড়ে ১,০০০ জনেরও বেশি নথিবিহীন অভিবাসীকে আটক করেছে, অভিযোগ করে যে তারা বাংলাদেশ থেকে আসা “অবৈধ অভিবাসী”। অন্তত ১৪৮ জনকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে। রাজ্যের কর্মীরা বলেছেন যে অনেক নথিবিহীন অভিবাসী এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের শ্রমিকদের নির্বিচারে আটক ও হয়রানি করা হচ্ছে।

জয়পুরে, গত ৩ মে, পুলিশ একটি প্রান্তিক আদিবাসী সম্প্রদায়ের ২৫ বছর বয়সী একজন পুরুষ এবং তার ১৯ বছর বয়সী চাচাতো ভাইকে তাদের নাম জিজ্ঞাসা করার পর আটক করে এবং তাদের ভোটার পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য নথি দেখাতে বলে। পুরুষটির বাবা বলেন, “পুলিশ কখনোই তাদের আটক করার কারণ জানায়নি।” “কিন্তু আমরা পুলিশ এবং জেলা কালেক্টরকে তাদের স্কুল ট্রান্সফার সার্টিফিকেট প্রমাণ হিসাবে দেখানোর জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌড়েছি।” কর্তৃপক্ষ অবশেষে ২৮ মে উভয় পুরুষকে মুক্তি দেয় যখন বাবা তার পরিবারের জমির রেকর্ড এবং রাজস্থানে ভোটার নিবন্ধন উপস্থাপন করেন।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তন

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা, ওএইচসিএইচআর, জানিয়েছে যে মে মাসের প্রথম দিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দিল্লিতে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করেছে, যাদের অনেকের কাছে ইউএনএইচসিআর কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয়পত্র ছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনকে একটি ভারতীয় নৌ জাহাজে স্থানান্তরিত করা হয় এবং শুধুমাত্র লাইফ জ্যাকেট দিয়ে মিয়ানমারের কাছে সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়া হয়। শরণার্থীরা তানিন্থারি অঞ্চলের লাংলং টাউনশিপে উপকূলে পৌঁছায় কিন্তু তারপর থেকে তাদের বর্তমান অবস্থান এবং অবস্থা অজানা। 

ভারতে আনুমানিক ৪০,০০০ রোহিঙ্গা বাস করে, যাদের মধ্যে অন্তত ২০,০০০ ইউএনএইচসিআর-এর সাথে নিবন্ধিত। ২০১৬ সাল থেকে, উগ্র জাতীয়তাবাদী হিন্দু গোষ্ঠীগুলি ভারতে মুসলিমদের উপর ক্রমবর্ধমান হামলার অংশ হিসাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং তাদের দেশ থেকে বিতাড়নের আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে, ভারত সরকার জোরপূর্বক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে বিতাড়ন শুরু করে, তাদের গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য বর্তমানে কোনো পরিবেশ নেই

ভারতে বসবাসকারী ২০ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন:

আমি নিরাপত্তা ও মর্যাদা খুঁজতে ভারতে পালিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু দুর্ভোগ শেষ হয়নি, কেবল রূপ পরিবর্তন করেছে। এখন, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩০ দিনের চরমপত্র দিয়েছে: বিতাড়ন বা আটক। আমার শৈশব গণহত্যা দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল, আমার কৈশোরকাল অসীম বৈষম্য এবং হতাশায় ভরা শরণার্থী জীবন দ্বারা গ্রাস হয়েছিল। আর এখন, আমার প্রাপ্তবয়স্ক জীবন এমন এক নিয়তির মুখোমুখি, যা আমি যা কিছু থেকে বেঁচে এসেছি তার চেয়েও খারাপ, এমন একটি দেশে ফিরে পাঠানো হচ্ছে যেখানে গণহত্যা এখনো চলছে। আমি ভয় পাচ্ছি যে এটি কেবল আমার জীবন শেষ করবে না বরং আমার শেষ আশাটুকুও মুছে দেবে।

মার্চ মাসে, জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যান্ড্রুস ভারত সরকারকে চিঠি লিখে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী সহ শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপক, নির্বিচারে এবং অনির্দিষ্টকালের আটক সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, পাশাপাশি মিয়ানমারে শরণার্থীদের বিপদে ফেরত পাঠানোর অভিযোগও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন যে ভারত সরকারের উচিত মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের নির্বিচারে আটক বন্ধ করা এবং আটক স্থানগুলিতে স্বাধীন প্রবেশাধিকার প্রদান করা।

GIVING TUESDAY MATCH EXTENDED:

Did you miss Giving Tuesday? Our special 3X match has been EXTENDED through Friday at midnight. Your gift will now go three times further to help HRW investigate violations, expose what's happening on the ground and push for change.