বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ শনিবার ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে নিয়ে “অবমাননাকর” পোস্ট করায় ১৫ বছরের এক শিশুকে গ্রেপ্তার করেছে। কঠোর এবং অস্পষ্ট শব্দযুক্ত ডিজিটাল সুরক্ষা আইনে (ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা ডিএসএ) ক্ষমতাসীন দলের সমালোচকদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে চলমান গ্রেপ্তার এর মাঝে এটি বিশেষভাবে গুরুতর একটি পদক্ষেপ।
ঢাকার উত্তরে ভালুকায় পুলিশ গনমাধ্যমকে জানায় তারা শিশুটিকে গ্রেপ্তার করেছিল যখন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করে ছেলেটি “আমাদের মায়ের মত নেত্রীকে … অপবাদ” দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা করায় কাউকে গ্রেপ্তার করা শুধুমাত্র বাকস্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন নয়, সর্বশেষ উপায় ছাড়া ১৮ বছরের নিচে কোন শিশুকে আটক করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেরও লঙ্ঘন। উপরন্তু, বাংলাদেশে কিশোর আটক কেন্দ্রগুলি (ডিটেনশন সেন্টার) ইতিমধ্যে ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে অনেক বেশি জনাকীর্ণ এবং অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে, যা তাকে কোভিড-১৯ এর সংস্পর্শে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তির কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা শুধুমাত্র বাকস্বাধীনতার একটি গুরুতর খেলাপই নয়, বরং অনূর্ধ্ব ১৮ এর কাউকে আটক করা, শেষ অবলম্বন ব্যতীত শিশু আটকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে। এছাড়াও, বাংলাদেশের কিশোর আটক কেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যেই ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি তাকে কভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
কোভিড -১৯ এর মহামারীর কারণে, জাতিসংঘের শিশু তহবিল, ইউনিসেফ, এবং অ্যালায়েন্স ফর চাইল্ড প্রটেকশন ইন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন সরকারগুলিকে অনুরোধ করেছে যেন নতুন শিশুদের আটক কেন্দ্রে (ডিটেনশন ফ্যাসিলিটিস) প্রবেশ করার বিষয়ে একটি সাময়িক স্থগিতাদেশ দেয়া হয়, এবং যারা নিরাপদে মুক্ত হওয়ার মত তাদেরকে যেন মুক্তি দেয়া হয়, এবং যাদের অবশ্যই আটক কেন্দ্রে (ডিটেনশন) থাকা উচিত তাদের স্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবনের সুরক্ষা দেয়া হয়।
এসকল উদ্বেগে সাড়া দিয়ে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি প্রায় ৫০০ শিশুর জামিন প্রদানকরেছে। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। ইউনিসেফ এর মতে, বাংলাদেশে বিচারের অপেক্ষায় বা সামান্য অপরাধে দন্ডিত ১০০০ জনেরও বেশি শিশু আটক কেন্দ্রে (ডিটেনশন সেন্টার) রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকাশ্যে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া উচিত যেন তাকে বা তার সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে সমালোচনা করার কারনে কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়। তার উচিত কিশোর আটককেন্দ্রগুলো (জুভেনাইল ডিটেনশন ফ্যাসিলিটিস), কারাগার এবং অন্যান্য আটক কেন্দ্রে আটককৃত সকল শিশুদের মুক্তির আদেশ দেয়া যাদের নিরাপদে মুক্তি দেয়া যায় । এবং তাকে অবশ্যই নিশ্চিত করা উচিত যেন ফেসবুক পোষ্টের কারণে কোনো শিশু -অথবা অন্য যে কোনো ব্যাক্তিকে -আটক করা না হয়।