বঙ্গোপসাগরে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান আক্রমণ করে যা গত মাসে ভারত-বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে। আম্পান ছাদ উড়িয়ে নেয়, বাড়িঘর ভাসিয়ে নেয় এবং ক্ষেত খামারগুলো প্লাবিত করে। সংকটময় সময়ে, জোরালো জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থায় (ইমারজেন্সি রেস্পন্স সিস্টেম) পূর্ব সতর্কতা এবং প্রচুর সংখ্যক নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কারনে বাংলাদেশ এর প্রভাব কমিয়ে আনতে এবং জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল।
কিন্তু ঝড়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ সুন্দরবনের কারনেও উপকূলীয় বাসিন্দারা রক্ষা পেয়েছিল। সুরক্ষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) এই ম্যানগ্রোভ বন জোয়ারের উত্থানের সাথে সাথে এর শিকড়গুলি ভূমিকে একসাথে ধরে রাখে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন আম্পানের মতন চরম আবহাওয়া জনিত ঘটনাগুলোর প্রবলতা বাড়িয়ে দেয় সুন্দরবন তখন ঝুঁকির মুখে যখন তাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে যেয়ে ক্ষতিকর দূষনের মধ্য দিয়ে এই জীবন রক্ষাকারী বনকে ধ্বংসের হুমকিতে ফেলছে, যে বনের ওপর ২.৫ মিলিয়ন লোকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে থাকে। এবং যেখানে ম্যানগ্রোভ বনটি কার্বন শোষণের কারনে জলবায়ু পরিবর্তকে ধীর গতি করে দেয়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো সেখানে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনে সহায়তা করে যা এই বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হল সুন্দরবনের ঠিক উত্তরে প্রস্তাবিত রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিজ্ঞানী এবং কর্মীরা (এক্টিভিস্ট) বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে যে এই কেন্দ্রগুলো বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের ধবংসের কবজ হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে সরকার এই প্রকল্পটি বাতিল বা স্থানান্তরিত করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, প্রতিবাদকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণের বিপরীতে এই কেন্দ্রটি কোনও ক্ষতি করবে না বলে জোর দিয়ে আসছে।
ইতোমধ্যে, সুন্দরবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা কোণঠাসা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্যে আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার)- করা সুপারিশে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহ যেগুলো বিপদসংকুল এ অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ বাতিল করেছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি, যেটির সভাপতিত্ব করে চীন। এমনকি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ ও চায়নার সম্মিলিত দুটি কয়লা-খনি সিধান্তে উত্থাপন না করে, চায়না, বসনিয়া এবং কিউবার প্রতিনিধিত্বে একটি সংশোধনী পাস করে।
জলবায়ু পরিবর্তন খুবই বাস্তব যা বাংলাদেশের প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন মানুষের জন্যে একটি প্রত্যক্ষ হুমকি যেখানে এক-মিটার সমুদ্র স্তরের বৃদ্ধি দেশের ২০% এরও বেশি জনগনকে প্লাবিত এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে স্থানচ্যুত করতে পারে। সর্বোত্তম ব্যবহারযোগ্য বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অধিকার সম্পন্ন মর্যাদাকর জলবায়ু নীতিসমূহের বাস্তবায়ন হলো সরকারের দায়িত্বের একটি অংশ যা সম্মান, সুরক্ষা এবং মানবাধিকার পূরণ করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বৈশ্বিক উদাহরণ হয়ে আসছে এবং তদানুসারে দ্রুত ম্যানগ্রোভ সুরক্ষার জন্যে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। নতুবা, দেশের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যতীত শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়সমুহের সম্মুখীন হবার সময় এটি জলবায়ু সংকটকে আরও ঝুকিপূর্ণ করবে।
বাংলাদেশ সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে যেয়ে এই জীবন রক্ষাকারী বনকে ধ্বংসের হুমকিতে ফেলছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো সেখানে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনে প্রধান সহায়তাকারী করে যা এই জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও বাড়িয়ে দেয়।