Skip to main content

বাংলাদেশঃ অভিবাসী গৃহকর্মীদের সুরক্ষার উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ

আন্তর্জাতিক ফোরামের সময় অভিবাসী গৃহকর্মীদের সুরক্ষার ব্যাপারে নেতৃত্ব প্রদান করুন।

A migrant domestic worker watches over a child playing in the Magic Planet, City Centre Muscat, a shopping mall in Oman.  © 2015 Rothna Begum/Human Rights Watch

(লন্ডন) – বাংলাদেশের উচিৎ যেসব গৃহকর্মী মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসী হতে যাচ্ছেন তাদের সুরক্ষার উন্নয়ন নিশ্চিত করা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজকে এই তথ্য জানায়। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী অভিবাসন এবং উন্নয়ন ফোরামের  আয়োজন করছে ১০-১২ই ডিসেম্বর, ২০১৬, যা বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর মধ্যে অভিবাসন নীতি বিষয়ে সর্বোত্তম কার্যকলাপ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার বৃদ্ধির বিষয় আলোচনা করা হবে।

এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ বিছিন্ন হয়ে আছে, মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয়ভাবে গৃহকর্মী পাঠানো, সেইসাথে তাদের অধিকার সংরক্ষণে ব্যর্থতা ও নিম্নমজুরি নির্ধারণের কারণে। অন্যান্য গৃহকর্মীদের দেশ, যেমনঃ ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল, বিদেশে তাদের গৃহকর্মীদের উপর বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এবং তাদের সুরক্ষা ও বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে।

“বাংলাদেশ অভিবাসনের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আয়োজন করছে, যদিও দেশটির নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষার নিশ্চিত করার ব্যাপারে খারাপ নজির রয়েছে।” বলেছেন রত্না বেগম, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, মধ্যপ্রাচ্যের নারী অধিকার বিষয়ক একজন গবেষক। “বাংলাদেশের উচিৎ তার কর্মীদের জন্য সর্বোত্তম সুযোগ খোঁজা, কিন্তু তাদেরকে যথাযথ সুরক্ষা ছাড়া বাইরে পাঠিয়ে দেবার বিনিময়ে নয়।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহকর্মী নিয়োগের হার বাড়িয়েছে, এবং সেইসাথে  জর্ডান  এবং সৌদি আরব এর সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও করেছে। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ  ব্যুরোর হিসাবমতে, লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী নারী মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে এবং যাদের ১০০,০০০ এরও বেশী কাজের জন্য অভিবাসী হয়েছে ২০১৬ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে।


মধ্যপ্রাচ্যের আইন এবং নীতিমালা গৃহকর্মীদের উপর অবিচার ও বঞ্চনার ব্যাপারগুলোকে হালকাভাবে নেয়।  নিয়ন্ত্রণমূলক “কাফালা” ব্যবস্থা, পুরো ভূখণ্ড জুড়েই বিভিন্ন মাত্রায় চালু আছে যা অভিবাসী গৃহকর্মীর ভিসাকে তার নিয়োগদাতার সাথে যুক্ত করে ফেলে। তাদের বর্তমান নিয়োগদাতা অত্যাচারী হওয়া স্বত্বেও, তাদের অনুমতি ছাড়া, নতুন কোন নিয়োগদাতার অধীনে কাজ নিতে পারে না। ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের পূর্বাঞ্চলীয় অনেকগুলো দেশ, গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করে। যেখানে কিছু নীতিমালা রয়েছে, সেখানেও খুব সীমিত সুরক্ষা দেওয়া হয়।

যদিও অনেক নিয়োগদাতা তাদের গৃহকর্মীদের অধিকারকে সম্মান করে, তবে অন্যান্য গৃহকর্মীরা ভয়াবহ অবিচার ও বঞ্চনার মুখোমুখি হয় যার মধ্যে আছে, শারীরিক লাঞ্ছনা, বেতন না দেওয়া এবং পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া যাতে তারা কাজ ছেড়ে যেতে না পারে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ওমানে অভিবাসী গৃহকর্মীদের উপর বঞ্চনা  এর উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৫৯ জন কর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে, যাদের মধ্যে কয়েক ডজন ছিল বাংলাদেশী। প্রায় সব বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মীই বলেছেন যে, নিয়োগদাতারা তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন যে তাদের নিয়োগদাতারা পুরো বেতন দেয়নি, কোনও ছুটি বা বিশ্রাম ছাড়া, জোর করে লম্বা সময় ধরে কাজ করিয়েছে কিংবা যথাযথ খাবার ও থাকার জায়গা দিতে চায়নি। কেউ কেউ বলেছেন তাদের নিয়োগদাতা তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে; তাদের কয়েকজন যৌন নির্যাতনের বর্ননা করেছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ওমানে গৃহকর্মীদের উপর যে অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরেছে, তাতে বাংলাদেশী কর্মীদের উপর উপর অত্যাচারের বিবরণ সবচেয়ে ভয়াবহ, যার মধ্যে আছে জোরপূর্বক কাজ করানো এবং মানব পাচার। “আসমা ক” হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন যে তিনি বাংলাদেশের এক দালালকে প্রায় ৭০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটা কাজের জোগাড় করে দেওয়ার জন্য, কিন্তু সেই দালাল তাকে এমন একজনের কাছে “বিক্রি” করে দেয় যে তার পাসপোর্ট কেড়ে নেয় এবং ওমানে নিয়ে যায়। সে তাকে ১৫ জনের একটি পরিবারের জন্য, দিনের ২১ ঘন্টা ধরে জোর করে কাজ করাত কোনও রকম বিশ্রাম বা ছুটি ছাড়া; খাবার দিত না; মৌখিকভাবে নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতন করত; এবং তার পুরো বেতনের টাকা নিজের কাছে রেখে দিত। যখন সে কাতরভাবে প্রার্থনা করল তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য, তার নিয়োগদাতা তাকে ওমানের সেই এজেন্সির কাছে পাঠিয়ে দিল। তবে সে বলেছে যে, “ঐ এজেন্সি সেই রাতে আমাকে একটা লাঠি দিয়ে ৫০বার মেরেছে।”

বাংলাদেশের এ বিষয় নিশ্চিত করা উচিৎ যাতে বিদেশে অবস্থানরত কর্মীরা সর্বোচ্চ সুরক্ষা পায়, যার মধ্যে আছে নিজ দেশের নিয়োগদাতা এজেন্সির উপর নজরদারি বাড়ানো, কর্মীদেরকে অন্য দেশে কর্মরত অবস্থায় সুরক্ষা প্রদান এবং দুর্দশার সময় সহযোগিতা প্রদান।.

বেশীরভাগ মধ্যপ্রাচ্যীয় সরকার, নিয়োগদাতাদের দেশীয় কর্মীদের কাছ থেকে নিয়োগ বাবদ কোনও টাকা গ্রহণ করাকে নিষেধ করে, তবে বাংলাদেশ লাইসেন্সধারী নিয়োগ এজেন্সিগুলোকে, নারী গৃহকর্মী থেকে সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা নেওয়ার অনুমতি দেয়। কিছু বাংলাদেশী নারী যারা ওমানে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাথে কথা বলেছেন, তারা জানিয়েছেন যে তারা দালালদেরকে প্রায় এক লাখ টাকা করে দিয়েছেন বিদেশে কাজের জন্য। এক আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে যে  গৃহকর্মীরা দালালদের একটা চেইনের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় যারা রাজধানীতে থাকা মূল নিয়োগ এজেন্সিগুলোর সাথে যুক্ত থাকে। খুব কম বেতন কিংবা একদমই না পাওয়া বেতন ছাড়াও, নিয়োগ ফি যুক্ত করা হয় ঋণের উচ্চ হারের সুদের সাথে, তখন কর্মীরা খুব করুণ ফাঁদে আটকা পড়ে এবং টাকা উশুল কিংবা ঋণের দায় মেটানোর জন্য তারা থাকতে ও কাজ করতে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশের উচিৎ গৃহকর্মীদের জন্য একটি পদ্ধতি তৈরি করা যাতে তারা মিথ্যা প্রলোভন, বেশী টাকা নেওয়া এবং অন্যান্য বঞ্চনার অভিযোগগুলো বিদেশী মিশনে কিংবা ফিরে আসার পর লিখিতভাবে জানাতে পারে। বাংলাদেশী মিশনগুলো ও সরকারের উচিৎ অভিযোগগুলোর তদন্ত করা এবং পাতি দালাল ও নিয়োগ এজেন্সিগুলোকে নির্যাতনের কারনে অভিযুক্ত করা।

গৃহকর্মীদের জন্য কুয়েতের ধার্য করা সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৬০ কুয়েতি দিনার (২০০ মার্কিন ডলার) ছাড়া, অন্য কোনও মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশ সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করেনি। অন্য দেশের দূতাবাসগুলো তাদের কর্মীদের জন্য একটা সর্বনিম্ন মাসিক বেতনের স্বীকৃতি চায় কিন্তু বাংলাদেশের নির্ধারণ করা বেতন সর্বনিম্ন যা ১৬,০০০ টাকার কাছাকাছি (২০০ মার্কিন ডলার), অন্যদিকে ফিলিপাইন সর্বোচ্চ বেতন চায় যা প্রায় ৪০০ মার্কিন ডলার। এজেন্সিগুলো প্রায়ই নিয়োগদাতাদের কাছে জাতীয়তার ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন বেতনের গৃহকর্মীর বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নয়। এর ফলে জাতীয়তার ভিত্তিতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশের উচিৎ তার গৃহকর্মীদের জন্য নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতন বৃদ্ধি করা এবং এমন কর্মপদ্ধতি তৈরি করা যাতে সর্বনিম্ন বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাগুলো প্রাপ্ত হয়। উদাহরনস্বরূপ, গালফের দেশগুলিতে, ভারতীয় দূতাবাস তাদের কর্মীদের জন্য নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে প্রায় ৩,০০০ মার্কিন ডলার চায় নিরাপত্তার জন্য যেটা ব্যয় করা হয় বিমানের ফিরতি টিকেট কেনার এবং বেতনের বাকি থাকা টাকা পরিশোধ করার জন্য, যখন কোন  নিয়োগদাতা অত্যাচারী হয়।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সকল দেশের দূতাবাসগুলো নিজ নিজ কর্মীদের আশ্রয় দেয় যদি তারা অত্যাচারী নিয়োগদাতার কাছ থেকে পালিয়ে আসে, বিশেষকরে নিয়োগদাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য, কিন্তু বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো শুধু কিছু দেশে আশ্রয়ের সুবিধা দেয়। যেহেতু আশ্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই, তাই অত্যাচারী নিয়োগদাতার বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর, নারীদের যাবার যায়গার সংখ্যা খুবই কম। দূতাবাসগুলো আশ্রয়সুবিধা প্রদান করতে পারে এবং এধরণের কর্মীদের সাহায্য করতে সক্ষম হয়, তা বাংলাদেশের নিশ্চিত করা উচিত।

“কম বেতন নির্ধারণ করে এবং দুর্বল সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখে বাংলাদেশ সরকার তার কর্মীদের সম্ভাব্য নির্যাতনের  ঝুঁকিতে ফেলছে।” বলেছেন বেগম। “বাংলাদেশের উচিৎ সব কর্মীদের কল্যানার্থে অন্য দেশগুলির সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ ও বৃদ্ধি করা এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশের উচিৎ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা গৃহকর্মী সম্মেলন সমর্থন করা, একটি  চুক্তি যা নিয়োগ, নিয়োগদাতা নির্ধারণ, ও চাকরি প্রদান এর ক্ষেত্রে বঞ্চনা ও প্রতারণাপূর্ণ ব্যবস্থা প্রতিরোধ করা ছাড়াও, অভিবাসী গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সাহায্য- সহযোগিতা নিশ্চিত  করে। এ চুক্তিটি ফিলিপাইনসহ ২৩টি দেশ দ্বারা পুনঃস্বীকৃত।

“বাংলাদেশের উচিৎ গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য মধ্যপ্রাচ্যীয় সরকারগুলোর কাছে তাদের আইন এবং নীতিমালা পুনর্গঠনের ব্যাপারে আহ্বান জানানো।” বেগম বলেছেন। “অভিবাসী গৃহকর্মীগণ মধ্যপ্রাচ্যের পরিবারগুলোর জন্য রান্না করে, যত্ন নেয় এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে, এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা উচিত।”
 

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.