জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা অনুচিতভাবে বাংলাদেশের সাথে জাতিগত গোষ্ঠী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও শেয়ার করেছে, যা বাংলাদেশ সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের সত্যতা যাচাই করতে মিয়ানমারের সাথে শেয়ার করেছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে। সংস্থাটি তাদের নীতিমালা অনুসারে পূর্ণ তথ্য প্রভাবের মূল্যায়ন পরিচালনা করেনি, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সাথে তাদের তথ্য শেয়ার করে নেওয়ার বিষয়ে সেই দেশ থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের অবহিত সম্মতি পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) কয়েক লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশী ক্যাম্পে নিবন্ধিত করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার তাদের পরিচয় পত্র প্রদান করেছে, যা প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরিষেবার জন্য আবশ্যক। তারপরে বাংলাদেশ সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের কাছে শরণার্থী সম্পর্কিত তথ্য জমা দেওয়ার জন্য অ্যানালগ বা অনুরূপ স্থির ছবি, বৃদ্ধা আঙ্গুলের ছাপের ছবি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জীবনী সংক্রান্ত তথ্য গুলো ব্যবহার করে।
“বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সাথে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমগুলো সংস্থাটির নিজস্ব নীতি গুলির পরিপন্থী ছিল এবং শরণার্থীদের আরও ঝুঁকির মুখোমুখি করেছিল,” হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর সংকট ও সংঘাত বিষয়ক পরিচালক লামা ফাকিহ বলেছেন। "যখন তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নিয়ম অনুযায়ী স্বাধীনভাবে এবং অবহিতমূলক সম্মতি পেয়ে থাকে, ইউএনএইচসিআর এর কেবল তখনই উচিত সংগৃহীত তথ্যের অনুমোদন দেয়া যা মূল দেশ গুলির সাথে শেয়ার করা যায় ।"
২০১৬ সাল থেকে ৮০০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার থেকে বের করে দেয়া হয়েছে অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গনহত্যার মত ঘটনাক্রম থেকে বাঁচার জন্য তারা সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়েছে। মিয়ানমার সরকার থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও নির্যাতনের মানবতাবিরোধী অপরাধ এখনও চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর-এর সাথে তাদের নিবন্ধকরণের অভিজ্ঞতার বিষয়ে ২৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং ২০ জন মানবিক সহায়তা কর্মী, বিশ্লেষক, স্থানীয় অধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং যারা রোহিঙ্গা নিবন্ধনে পর্যবেক্ষণ করেছেন বা অংশ নিয়েছেন তাদের সাথে কথা বলেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ফেব্রুয়ারিতে এবং এপ্রিলে ইউএনএইচসিআরের কাছে বিস্তারিত প্রশ্ন এবং এর গবেষণার ফলাফল প্রেরণ করে এবং ১০ই মে ইউএনএইচসিআর এর কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল।
ইউএনএইচসিআর কোনও রকম ভুল বা নীতি লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছে যে এটি তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রমের সকল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছিল এবং সম্মতি পেয়েছিল। সংস্থাটি বলেছে যে তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল শরণার্থীদের জন্য দীর্ঘকালীন সমাধান খুঁজে বের করা এবং কোনও রোহিঙ্গা যেন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।
২০১৮ সালে, বাংলাদেশ সরকার ইউএনএইচসিআর-এর সাথে একটি যৌথ নিবন্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করে পূর্ববর্তী নিবন্ধগুলির সাথে পরিপূরক করতে চেয়েছিল। সরকার শরণার্থীদের জন্য – "স্মার্ট কার্ড" নামে পরিচিত - একটি পরিচয়পত্র সরবরাহ করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল যা তাদের সহায়তা এবং পরিষেবা গুলি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়ে থাকে। সরকার ইউএনএইচসিআর দ্বারা সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য মিয়ানমারের কাছে জমা দিয়ে প্রত্যাবাসন যোগ্যতার মূল্যায়নের জন্য সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। ইউএনএইচসিআর বলেছিল যে এটি শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের অধিকার রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাথে জানুয়ারির একটি বৈঠকে ইউএনএইচসিআর বলেছিল যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন যোগ্যতার মূল্যায়নের জন্য তাদের তথ্য শেয়ার করার অনুমতি চেয়েছিলেন, ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন যে এখানে যারা সম্মত হননি তাদেরকেও একটি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। তবে, নিবন্ধকরণ কার্যক্রমের সময়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা কমিউনিটি রেডিও শো এবং ২০১৮ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে দেওয়া মন্তব্য সহ ইউএনএইচসিআর কর্মীরা প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে তথ্য সংগ্রহ প্রত্যাবাসনের সাথে যুক্ত ছিল না। জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তনকে সহজতর করার জন্য তথ্য সংগ্রহের ব্যবহার করা হবে আংশিকভাবে এই উদ্বেগের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেই মাসে ক্যাম্প গুলিতে বিক্ষোভ করেছিল ।
ইউএনএইচসিআর কর্মীরা জানুয়ারির সভায় যা তুলে ধরেছিল তার থেকে শরণার্থীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাক্ষাৎকারে ভিন্ন মতামত দিয়েছিল। ২৪ জনের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই বলেছিল, ইউএনএইচসিআর কর্মীরা তাদের বলেছিল যে তাদের সহায়তার সুযোগ পেতে স্মার্ট কার্ড পেতে তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, এবং তারা মিয়ানমারের সাথে তথ্য শেয়ার করে নেওয়ার বা এটিকে প্রত্যাবাসন যোগ্যতার মূল্যায়নের সাথে সংযুক্ত করার বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেনি। তিনজন বলেছিলেন যে তাদের তথ্য দেওয়ার পরে তাদের বলা হয়েছিল যে এটি প্রত্যাবাসনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে। একজন বলেছিলেন যে তিনি রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার পরে লক্ষ্য করেছেন যে মিয়ানমারের সাথে তথ্য শেয়ার করে নেওয়ার ঘরটি, যেটি রশিদে ছাপা হয়েছিল এবং কেবল ইংরেজিতে শরণার্থীদেরকে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে "হ্যাঁ" বোধক চিহ্ন চেক করা হয়েছিল, যদিও তাকে কখনও জিজ্ঞাসা করা হয়নি। সাক্ষাৎকার নেয়া শরনার্থীদের মধ্যে যারা ইংরেজি পড়তে পারেন তাদের কেবল তিন জনের মধ্যে তিনিই ছিলেন একজন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কেবল ইংরেজী রিসিপ্ট বা রসিদ দেখেছিল যা ইউএনএইচসিআর তাদের নিবন্ধকরণের পরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিয়েছিল। এটিতে "হ্যাঁ" বা "না" বোধক চিহ্ন উল্লেখ করে একটি ঘর রয়েছে যেখান বলা হয়েছে যে মিয়ানমার সরকারের সাথে তথ্য শেয়ার করা যাবে কিনা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২১ জন শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিল যাদের নাম প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার দ্বারা যাচাই করা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৯ সালের প্রত্যাবাসন যোগ্যতা মূল্যায়নের তালিকায় ২১ জনের মধ্যে ১২ জনকে যুক্ত করা হয়েছিল – যা ইউএনএইচসিআর দ্বারা সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তালিকা করে তৈরি করা হয়েছিল।
২১ জন বলেছিলেন, নিবন্ধভুক্ত হওয়ার পরে তারা জানতে পারেন যে তাদের তথ্য মিয়ানমারের সাথে শেয়ার করা হয়েছে এবং তাদের নাম গুলি প্রত্যাবর্তনের জন্য যাচাই করা লোকদের তালিকায় রয়েছে। তারা সবাই অন্য ক্যাম্পে লুকিয়ে গিয়েছিলেন কারণ তারা জোর করে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। এখনও পর্যন্ত, বাংলাদেশ ক্যাম্প গুলির কোনও রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেনি।
সাক্ষাৎকার নেয়া ২৪ জন শরণার্থীর মধ্যে একজন বলেছেন, ইউএনএইচসিআর এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা তাকে নিবন্ধিত করার সময়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি মিয়ানমার সরকারের সাথে তার তথ্য শেয়ার করতে রাজি ছিলেন কিনা। তিনি বলেছিলেন যে অস্বীকার না করার জন্য তিনি প্রবল চাপ অনুভব করেছিলেন: "আমার স্মার্ট কার্ডের প্রয়োজন ছিল বলে আমি না বলতে পারিনি এবং আমি মনে করি না যে আমি তথ্য শেয়ার করার প্রশ্নে না বোধক উত্তর দিতে পারতাম এবং এর পরেও কার্ডটি পেতে পারতাম।"
এই ক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআর স্বাধীনভাবে এবং অবহিত করে সম্মতি চায়নি, যার জন্য শরণার্থীদের মিয়ানমারের সাথে তাদের এবং তাদের পরিবারের তথ্য শেয়ার করার ঝুঁকিগুলি জানতে এবং বুঝতে পারার নিশ্চয়তা দরকার ছিল, এবং তাদের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস ছাড়াই অংশগ্রহন করা থেকে সরে আসার সক্ষমতা থাকতে পারতো এবং তারা সম্মত না হলেও তারা স্মার্ট কার্ডটি পেতে পারতো।
ইউএনএইচসিআর কর্মীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছে যে তারা নিবন্ধনভুক্ত করার পূর্বে রোহিঙ্গাদের সাথে কোনও নির্দিষ্ট ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেনি এবং রোহিঙ্গারা সাক্ষাৎকারে বলেছে যে এ জাতীয় কোনও ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের বলা হয়নি।
২০১৮ থেকে ২০২১ এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাবাসন যোগ্যতার মূল্যায়নের জন্য প্রতিটি ব্যক্তির বায়োমেট্রিক এবং অন্যান্য তথ্য সহ মিয়ানমারের কাছে কমপক্ষে ৮৩০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নাম জমা দিয়েছে। মিয়ানমার প্রায় ৪২,০০০ রোহিঙ্গাকে ফিরে আসার অনুমতি দিতে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউএনএইচসিআর হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছে যে এই তালিকা গুলি তৈরী করতে এটি কোন ধরণের ভূমিকা পালন করেনি, তবে ২০১৯ এ শুরু হয়ে এর পর পর্যন্ত জমা দেয়া বায়োমেট্রিক্স [ব্যক্তিগত তথ্য] সহ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নাম এবং অন্যান্য তথ্য সমূহ যৌথ নিবন্ধকরণ কার্যক্রমের সময় এটি যে তথ্য সংগ্রহ করেছিল সেটির অ্যানালগ সংস্করণ থেকে এসেছে, উদাহরণস্বরূপ নন-ডিজিটাল থাম্বপ্রিন্ট চিত্র বা বৃদ্ধা আঙ্গুলের ছাপের ছবি সমূহ।
ইউএনএইচসিআর পৃথক পৃথক ব্যাক্তির ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে এর সার্বজনীন নির্দেশিকায়, এই জাতীয় তথ্য শেয়ার করার ঝুঁকি স্বীকার করে এবং বলেছে যে, "কোনও [স্বতন্ত্র ঘটনা] তথ্য মূল দেশের [মাত্রিভূমি] কর্তৃপক্ষের সাথে ইউএনএইচসিআর-এর শেয়ার করা উচিত নয়।“
মিয়ানমারের প্রেক্ষাপটে, ঝুঁকিগুলির মধ্যে রয়েছে অনৈচ্ছিকভাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া, বিশেষত ১৯৭০ এর দশক ও ১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশের জোরপূর্বক ভাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনকে সুস্পষ্ট ভাবে উপেক্ষা করে গিয়েছিল।
মিয়ানমারে বাংলাদেশের তালিকা জমা দেওয়ার ফলে শরনার্থীদের, অথবা অন্ততপক্ষে একটি অংশ যাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয়ার জন্য রাজি হয়েছিল, মিয়ানমারের জাতীয় যাচাইকরণ কার্ডগুলি (এনভিসি) পাওয়ার পথে রেখেছে, যা অনেক রোহিঙ্গা প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ তারা বিশ্বাস করে যে এটি মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রতি তাদের দাবিকে ক্ষুন্ন করে।
ইউএনএইচসিআর-বাংলাদেশের কার্যক্রম এটির সংগ্রহ করা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে সংস্থাটির নীতি লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করা হয়, যার জন্য ইউএনএইচসিআর-কে এমন একটি ভাষায় এবং পদ্ধতিতে লোকজনদের বলতে হবে যেন তারা বুঝতে পারে যে এটি কেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করছে এবং এটি অন্য কোনও সত্তায় স্থানান্তরিত হবে কিনা। এটি জোরপূর্বক সম্মতি না নেয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে করা ইউএনএইচসিআর এর নীতিগুলির উদ্দেশ্যকেও ক্ষুন্ন করেছে বলে মনে করে।
স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইউএনএইচসিআর-এর হ্যান্ডবুকটি [নির্দেশিকা] বলে যে সংস্থাটির কখনই স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উদ্দেশ্যে করা নিবন্ধকরণের সাথে নিবন্ধকরণ বা অন্যান্য যাচাইকরণ কার্যক্রমের সাথে সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করা উচিত নয় কারণ “এই দুটিকে সংযুক্ত করলে তা শরণার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং এমন ধারনা হতে পারে যে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় প্রাপ্ত দেশে সহায়তা পাওয়ার জন্যে একজন ব্যাক্তিকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য নিবন্ধন করতে হবে। এটি স্বেচ্ছাসেবামূলকতাকে গুরুতরভাবে বিপদে ফেলতে পারে।“
যোগ্যতার মূল্যায়ন এবং সেবার জন্য নিবন্ধকরণের মধ্যকার সংযোগ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে। সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রায় সকল শরণার্থীর কেউই বুঝতে পারেনি যে তাদের তথ্য মিয়ানমার সরকারের সাথে শেয়ার করা হবে। একটি ঘটনায় যেখানে শরণার্থীকে বলা হয়েছিল যে এমনটি করা হবে, তিনি বলেছিলেন যে তিনি সেবা প্রাপ্তিকে বাধাগ্রস্ত না করে সম্মতি জানাতে অস্বীকার করতে পারবেন না বলে মনে করেছিলেন।
ইউএনএইচসিআর- এর স্বীকার করা উচিত ছিল যে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। “ন্যূনতম গ্যারান্টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই কমিউনিটি সম্পর্কিত তথ্য মিয়ানমারের সাথে শেয়ার করা বা মিয়ানমারের সাথে তথ্য শেয়ার করার অনুমতি দেওয়ার ধারণাটি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার বাইরে থাকা উচিত ছিল - যা সেখানে নেই," বাংলাদেশের এ প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত একজন মানবিক সহায়তা কর্মী বলেছেন।
অবশেষে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রের মতো ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য স্থানান্তর বা হস্তান্তর ব্যবস্থায় প্রবেশের পূর্বে তথ্যের নিরাপত্তার প্রভাব মূল্যায়নের জন্য একটি নীতি রয়েছে। তবে, কর্মীরা বলেছিলেন যে তারা "পুরাদস্তুর" প্রভাব মূল্যায়ন করেনি, কেবল বাংলাদেশের সাথে তথ্য-শেয়ারিং চুক্তি স্বাক্ষরের আগে বেশ কয়েকটি ঝুঁকি মূল্যায়ন করেছে। এই মূল্যায়নে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তনের ইতিহাসকে বিবেচনায় আনার ক্ষেত্রে প্রতীয়মান ব্যর্থতাটি গুরুত্বপূর্ণ।
ইউএনএইচসিআর- এর সেবাসমূহ বা পরিচয় পত্রের জন্য জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহিত তথ্যের সাথে প্রত্যাবাসন যোগ্যতার জন্য সংগ্রহিত তথ্য একত্রিত করা উচিত নয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে। ইউএনএইচসিআরকে নিশ্চিত করা উচিত যে সকল ব্যাক্তিরা তাদের তথ্য শেয়ার করার বিষয়ে সম্মত হন তারা যেন সেই সম্মতি প্রত্যাহার করতেও সক্ষম হয়ে থাকেন এবং কীভাবে এটি করতে হয় তা জেনে থাকেন। সংস্থাটির কেবলমাত্র তখনই তথ্য শেয়ার করা বা এর সংগৃহীত তথ্য মূল দেশগুলির সাথে শেয়ার করার অনুমতি দেয়া উচিত যখন এটি স্বাধীনভাবে এবং জ্ঞাত সম্মতি পাওয়ার জন্য সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করে থাকে।
“মানবিক সহায়তা সংস্থা গুলির অবশ্যই কিছু তথ্য সংগ্রহ করা এবং শেয়ার করা দরকার যেন তারা শরণার্থীদের নিরাপত্তা, সেবা সমূহ সরবরাহ করতে এবং নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করতে পারে,” ফাকিহ বলেছেন। "তবে একজন শরণার্থীর তাদের তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রয়েছে, কার কাছে এটির অধিগত করার ক্ষমতা রয়েছে এবং কী উদ্দেশ্যে এবং ইউএনএইচসিআর এবং অন্যান্য সংস্থা গুলি যাদের তথ্য রেখেছে তাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকা উচিত।"