Skip to main content

বাংলাদেশঃ “গুম” বিষয়ক অনুসন্ধানে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করার অনুমতি দিন।

বিশ্বাসযোগ্য সরকারী তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে

২০শে আগস্ট, ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালীন আত্মীয়রা তাদের নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের প্রতিকৃতি ধারণ করেন। © ২০২২ মামুনুর রশীদ/নুর ফটো ভায়া এপি

(নিউ ইয়র্ক)- বাংলাদেশ সরকারের উচিত জোরপূর্বক গুমের স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আহ্বানে সাড়া দেয়া, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ জোরপূর্বক ভাবে গুমের শিকারদের জন্য আয়োজিত আন্তর্জাতিক দিবসে এ কথা বলেছে । ২০২২ সালের আগষ্ট মাসের ১৪ তারিখে, নেত্র নিউজ- যা বাংলাদেশে ব্লক বা বন্ধ করে রাখা হয়েছে – একটি হুইসেল ব্লোয়ার রিপোর্ট প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা যেআয়নাঘর  নামক একটি গোপন স্থানে জোড়পূর্বক গুমের শিকারদের আটক রেখেছে এবং নির্যাতন করছে তার প্রমান উন্মোচন করা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট, আগস্ট মাসে বাংলাদেশে তার তিন দিনে ব্যাপী সফরে, একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই ব্যাবস্থা জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগ, তদন্তের জন্য ভুক্তভুগী, তাদের পরিবার এবং সুশীল সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। তিনি আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া তৈরি করতে তার অফিসের সহায়তার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের কৌশলগত এবং বাণিজ্য অংশীদাররা, সরকারকে নিরাপত্তা বাহিনীর সিনিয়র সদস্যদের জবাবদিহি করার এবং ভবিষ্যতের অত্যাচার রোধে ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অগণিত জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী এ কথা বলেছেন। "বাংলাদেশ সরকারের উচিত তারা ‘কোনকিছুই জানেনা’ এমন ভাব দেখানো বন্ধ করা এবং জরুরী ভাবে এর জবাব দেয়া। আর সেই সাথে কার্যকর জবাবদিহিতা প্রদানের জন্য জাতিসংঘের সাথে কাজ করা।"

২০২১ সালের আগস্টে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দৃশ্যত নিখোঁজ হওয়া ৮৬ টি ঘটনার একটি ওয়েবপেজ নথিভুক্ত করার পাশাপাশি বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুম হওয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র প্রতিক্রিয়া ছিল অভিযোগ গুলো অস্বীকার করা। তারপর থেকে এটি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে এই মামলাগুলির কোনও আপডেটেড তথ্য সরবরাহ করেনি।

২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং অত্যাচারসহ বিশেষ করে জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় জড়িত শীর্ষ কমান্ডারদের বিরুদ্ধে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি মানবাধিকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের বিরুদ্ধে একরকম হুমকি ও ভয় দেখানোর অভিযান শুরু করে। এটি সম্ভবত ভুক্তভুগি পরিবারগুলোর অভিযোগের বিরোধিতা এবং অবমূল্যায়নের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল; যদিও কর্মকর্তারা দাবি করে থাকেন যে তারা শুধুমাত্র প্রকৃত রেকর্ড তদন্ত করার জন্য এমনটি করছেন।

জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষে ‘মায়ের ডাক’ নামক একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ বলেছে যে কর্তৃপক্ষ কমপক্ষে ১০ জন ভুক্তভোগীর পরিবারের বাড়িতে গিয়েছে এবং হুমকি দিয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে। এইজন্য তারা এমনটা দাবি করে যে, তাদের আত্মীয়কে জোর করে গুম করা হয়নি এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে। মিডিয়া সেন্সরশিপের উদ্বেগ উত্থাপন করে এই ধরনের প্রতিশোধ নিয়ে কিছু প্রতিবেদন ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে, জাতিসংঘের অধিকার বিশেষজ্ঞরা প্রত্যহিংসাপরায়ণ মনোভাব বন্ধ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে ভীতি ও হয়রানিমূলক চলমান কর্মকাণ্ডগুলি "ভুক্তভোগীদের পরিবারকে এবং যারা কয়েক বছর ধরে জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়া অসংখ্য ব্যক্তির ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা সুস্পষ্ট করার জন্য কাজ করে চলেছেন, তাদের শান্ত করার জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।"

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তারা উদ্বিগ্ন ছিলেনঃ

দেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য এবং তাদের অবস্থান সর্ম্পকে স্পষ্টভাবে জানানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির অভাব দেখতে পেরে…এর পরিবর্তে, কর্তৃপক্ষ র‌্যাব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে যে কোনো তদন্ত এবং অপরাধমূলক দায় থেকে রক্ষা করেছে বলে ধারণা করা হয়। এই বিষয়ে, আমরা দায়মুক্তির বিরাজমান সংস্কৃতির কারণে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন, যা সত্য, ন্যায়বিচার, প্রতিকার এবং ক্ষতিগ্রস্থদের এবং তাদের পরিবারের অধিকারকে ক্ষুন্ন করে।

ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছেন জাতিসংঘের গুম বিষয়ক কার্যকরী দলকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়ে "এই সমস্যাটির নিষ্পত্তিমূলকভাবে সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দেখানোর জন্য"।  তিনি আরো বলেন যে, বাংলাদেশের উচিত হবে জোরপূর্বক গুম হওয়া সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি  অনুমোদন করা।

আগস্ট মাসে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এখানে কোনো জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটেছে এমনটা অস্বীকার করে একটি বক্তব্য দেন। তিনি পূর্বের দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন যে গুম হওয়া ব্যক্তিরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মামলা থেকে বাঁচতে, ঋণ পরিশোধ এড়াতে বা পারিবারিক বিরোধের কারনে লুকিয়ে ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে জোরপূর্বক গুম সম্পর্কিত কার্যকরী দলের অন্তর্ভুক্ত করা ৭৬ টি মামলার মধ্যে বেশিরভাগই সমাধান করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ২৮ জন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অভিযুক্ত হওয়ার কারণে পলাতক ছিল। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, গুম হওয়া পরিবারদের প্রতিবাদের পেছনে একটি "ষড়যন্ত্র" আছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, দেশে নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার বারবার জাতিসংঘ, বিদেশি সরকার, এক্টিভিস্ট এবং ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্বেগে অর্থপূর্ণভাবে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য সরকারগুলির উচিত জবাবদিহিতার সংকট মোকাবেলা এবং ভবিষ্যতে নিপীড়নের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিট গুলো এবং ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলিতে যোগদানের কথা বিবেচনা করা। জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অফ পিস অপারেশনস এর ব্যাচেলেটের সতর্ক বার্তায় মনোযোগ দেওয়া উচিত যে "জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ইউনিফর্মধারী বাহিনীর সবচেয়ে বড় অংশদাতা হিসাবে, বাংলাদেশের উচিত নিরাপত্তা কর্মীদের সতর্ক মানবাধিকার মূল্যায়নের জন্য একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

"জোরপূর্বক গুমের শিকার হওয়া ব্যাক্তিদের পরিবারগুলি তাদের প্রিয়জনদের অবস্থান সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের অস্বস্তিকর অস্বীকৃতির কারণে বছরের পর বছর যন্ত্রণা ভোগ করে কাটিয়েছে,” গাঙ্গুলি বলেছেন। "বাংলাদেশ সরকারের জবাবদিহিতার নিশ্চয়তার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে জোরপূর্বক গুমের আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা উচিত।"

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country