Skip to main content

বাংলাদেশঃ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানের উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত

পরিদর্শনের সময়, ব্যাচেলেটের উচিত নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন এবং নাগরিক সমাজের কাজের সংকুচিত হওয়ার বিষয়ে নিন্দা জানানো উচিত

UN High Commissioner for Human Rights Michelle Bachelet addresses a news conference in Ouagadougou, Burkina Faso, December 1, 2021. © 2021 AP Photo/Sophie Garcia

(জেনেভা) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের উচিত তার আসন্ন বাংলাদেশ সফরের সময় বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমের মতো গুরুতর নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো উচিত, আজ নয়টি মানবাধিকার সংস্থা বলেছে।

ব্যাচেলেট, আগস্ট মাসের ১৪-১৮, ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন। এই সফরকালে তিনি সরকারি কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর সঙ্গে দেখা করবেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করবেন। যদি হাইকমিশনার স্পষ্টভাবে এই অত্যাচারের নিন্দা করতে এবং সংস্কারের চেষ্টা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের অত্যাচারকে বৈধতা দিতে এবং এক্টিভিস্টদের অবমূল্যায়ন করতে তার (ব্যাচেলেটের) এই নীরবতার ব্যবহার করতে পারে।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথমবার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শত শত বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী ধারাবাহিক সরকারের অধীনে দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড, বিশেষ করে বলপূর্বক গুম করা যা শেখ হাসিনার এক দশকেরও বেশি সময়ের শাসনের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কুখ্যাতভাবে নির্যাতনকারী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর উপর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট  নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার পরে, সরকার ভুক্তভোগীদের স্বজন, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং তাদের পরিবার এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে

হাইকমিশনার ব্যাচেলেটের উচিত বাংলাদেশ সরকারকে জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যুর সকল অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে উৎসাহিত করা। তার উচিত ভুক্তভোগী, তাদের পরিবার এবং স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে এই ধরনের একটি কমিশন গঠনের জন্য তার অফিসের সহায়তা প্রদান করা। তার উচিত সরকারকে স্পষ্ট করে দেওয়া যে নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অত্যাচার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনা মোতায়েনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে, সংস্থাগুলো বলেছে।

ব্যাচেলেটের সফর এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে যখন বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ক্রমবর্ধমান আক্রমণের শিকার হচ্ছে। সরকার অনেক গোষ্ঠীর জন্য অর্থায়ন সীমিত করছে এবং অধিকার কর্মীদের তাদের কাজ বন্ধ করার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। তার উচিত মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং সংস্থাগুলির চলমান হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানানো যাতে তারা তাদের কাজ স্বাধীনভাবে এবং প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই করতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, এবং তার আগে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬, অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং সরকারী সমালোচকদের দমন ও নীরব করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এই আইনের অধীনে দায়ের করা অনেক মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে, যা অভিযুক্তদের হয়রানির পরিমাণ বাড়িয়ে যাচ্ছে।

একটি উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সরকার ২০১৩ সালে একটি প্রতিবাদ ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে মাত্রাতিরিক্ত বাহিনী ব্যবহারের বিষয়টি নথিভুক্ত করার জন্যে দেশের অন্যতম প্রধান মানবাধিকার সংস্থা, অধিকার এর আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানকে, ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার অধীনে বিচারকার্য পরিচালনা করছে। ২০২২ সালের জুন মাসে, সরকার অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করে এবং গোষ্ঠীটিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং জোরপূর্বক গুম, লঙ্ঘন সম্পর্কে "প্রোপাগান্ডা ছড়ানো" এবং "বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ" করার জন্য অভিযুক্ত করেছে, যা র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার দিকে পরিচালিত করেছিল

হাইকমিশনার ব্যাচেলেট এর উচিত প্রকাশ্যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জোড় দিয়ে বলা যে নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অত্যাচার এবং সুশীল সমাজের ওপর দমন-পীড়ন, ২০২৩ সালের জন্য নির্ধারিত অবাধ ও সুষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনকে গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার দেশের প্রধান বিরোধী দলের বৈঠক ও আয়োজনের প্রচেষ্টায় বাধা দিচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীর আইনি মর্যাদা নেই, যা অভ্যন্তরীণ আইনের অধীনে তাদের অবস্থানকে অনিশ্চিত রেখেছে এবং অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। মিয়ানমার জান্তার যেখানে রাখাইন রাজ্যে চলমান নৃশংসতা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে আরও দূরবর্তী করে তুলেছে, সেখানে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতিকে ক্রমশ অনিশ্চিত করে তুলেছে।

কক্সবাজার জেলার ক্যাম্পগুলোর ক্রমবর্ধমান বিরূপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া এবং জীবিকা নির্বাহ, চলাচল এবং শিক্ষার উপর ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা। প্রায় ৩০,০০০ শরণার্থীকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ভাসান চরে, যা একটি প্রত্যন্ত দ্বীপ, এবং যেখানে শরণার্থীরা খাদ্য ঘাটতি এবং আটক থাকার মতো অবস্থার বর্ণনা দিয়ে থাকে।

হাইকমিশনার ব্যাচেলেট যখন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন, তখন তার নিশ্চিত করা উচিত যে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের তদারকি ছাড়াই শরণার্থীরা যেনো তার সাথে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, এবং শরণার্থীদের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানাতে পারে, গ্রুপগুলো জানিয়েছে।

গ্রুপগুলো আরও বলেছে, সমালোচকদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও প্রতিহিংসা বন্ধ করে বাংলাদেশ সরকারের আরও কর্তৃত্ববাদের দিকে ঝুঁকে পড়া বন্ধ করার আহ্বান জানানোর জন্য হাই কমিশনারের জন্য এটিই একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। দেশে অব্যাহত থাকা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সম্পূর্ণ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ব্যাচেলেটের উচিত সরকারকে চাপ দেওয়া।

এই যৌথ বিবৃতিটি সমর্থনকারী সংস্থা গুলো হলঃ

১। এন্টি ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন)

২। এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইন্সট ইনভলান্টারি ডিজ্যাপিয়ার‍্যান্সেস

 (এএফএডি)

৩।এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া)

৪। ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট (সিপিজেপি)

৫। এলিয়স জাস্টিস, মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়

৬। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

৭। ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইন্সট এনফোর্সড ডিজ্যাপিয়ার‍্যান্সেস

৮। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ)

৯। রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country
Topic