(নিউইয়র্ক) – বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সকল দমনমূলক অভিযোগ বাতিল করা উচিত, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে। ইসলামের সহকর্মীরা বিশ্বাস করেন যে কোভিড -১৯ এর মহামারী সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়া সহ জনস্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত প্রতিবেদনের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে “সংবেদনশীল সরকারী নথিপত্র সংগ্রহ ও তাদের ছবি তোলার” চেষ্টা করার জন্য ইসলামকে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বা দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনের ৩ ও ৫ ধারা এবং পেনাল কোড বা দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত করা হয়েছে। যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তিনি ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং মৃত্যদণ্ডের সম্ভাবনার মুখোমুখি হতে পারেন। বাংলাদেশ জুড়ে সাংবাদিকরা তার মুক্তির দাবি করে বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন।
“বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত রোজিনা ইসলামের অপরাধ প্রমাণ করা অথবা তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং সাংবাদিকদের তাদের কাজ করার জন্য গ্রেপ্তার বন্ধ করা, যা প্রশাসনের ভুলগুলি ও তুলে ধরছে,” হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন। “সমালোচকদের আটকে রাখার পরিবর্তে, মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করার জন্য মুক্ত গনমাধ্যমকে উৎসাহিত করা সরকারের কৌশলের মূল কাজ হওয়া উচিত।"
মিডিয়া প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে যে ইসলাম ১৭ই মে, ২০২১ বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে স্বাস্থ্যসেবা সচিবের সাথে এক বৈঠকের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রায় ছয় ঘন্টা সেখানে একটি কক্ষে অবরুদ্ধ ছিলেন, এই সময় তিনি অসুস্থ এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন, পরে তাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দায়ের করা অভিযোগ অনুসারে তিনি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ সম্পর্কিত সরকারী নথি নিয়েছিলেন। তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
১৮ই মে তার শুনানির শেষে অন্য সাংবাদিকের করা এক ভিডিও রেকর্ডিংয়ে ইসলাম বলেছিলেন যে, "স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নিয়ে আমার প্রতিবেদনের কারণেই আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।" তার সাম্প্রতিক কাজের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগে ঘুষ নিয়ে প্রতিবেদন করা, কোভিড -১৯ মহামারীর প্রতিক্রিয়া জানাতে জরুরি চিকিৎসা সরবরাহ ক্রয়ে অনিয়ম এবং দশ মাস ধরে বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় দানকৃত জরুরি সরবরাহ নিয়ে প্রতিবেদনগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১৮ই মে, একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পুলিশ বিভাগের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং তার পরিবর্তে ২০ মে জামিনের শুনানি পর্যন্ত তাকে কারাগারে প্রেরণ করে। আদালত পুলিশকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে অভিযোগগুলো নিয়ে তাদের তদন্তের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে এবং কারা কর্তৃপক্ষ যেন জাতীয় আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার জন্য ইসলামের সুযোগ নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ বা বাংলাদেশ এডিটরস কাউন্সিল বলেছে যে ঔপনিবেশিক যুগের একটি আইন দ্বারা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা “সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেতিবাচক আচরণ ও হীন মনমানসিকতার পরিচয়।“ দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের এক মুখপাত্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মহামারী সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন করার কারণে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রায়শই সাংবাদিক এবং গনমাধ্যমের পেছনে লেগে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালের মে মাসে, কর্তৃপক্ষ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল এবং অন্যান্য সাতজনকে "ফেসবুকে গুজব ছড়ানো এবং ভুল তথ্য ছড়ানোর" জন্য অভিযুক্ত করেছিল কারণ তারা মহামারী সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছিল।
চারজনের মধ্যে থাকা একজন লেখক মুশতাক আহমেদ যিনি নয় মাস যাবৎ বিচার পূর্ববর্তী বা প্রি-ট্রায়াল আটকাবস্থায় থাকার পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন, এই সময়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে অভিযোগ করা হয়েছিল যে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আহমদের মৃত্যুর বিষয়ে জনরোষের পর, একই সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে জামিন দেওয়া হয়েছিল। তাকে হেফাজতে নেওয়ার পরে নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে তিনি আরও বলেন যে আহমেদকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছিল।
এছাড়াও কর্তৃপক্ষ কোভিড -১৯ মহামারী সম্পর্কে "গুজব" ছড়িয়ে দিতে পারে এমন ব্যক্তির ওপর নজরদারি এবং গনমাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ বাড়িয়ে দিয়েছে ।
৩ মে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্য আটটি সংস্থা মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের হাই কমিশনার, মিশেল ব্যাচলেটকে, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ গণমাধ্যমের ওপর ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে।
“রোজিনা ইসলামের গ্রেপ্তার বাংলাদেশের দূর্নীতি প্রকাশ করতে সাংবাদিকদের কাছে একটি আতঙ্কজনক বার্তা প্রেরণ করে,” অ্যাডামস বলেছেন। “ইসলামের পক্ষে কথা বলার মাধ্যমে, সংশ্লিষ্ট সরকারগুলি সারাদেশে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সাথে দাঁড়াবে।“