(নিউ ইয়র্ক)- বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে জরুরি উদ্বেগের বিষয় হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর বাংলাদেশ সরকারের ক্রমবর্ধমান সহিংস কঠোর অবস্থা, নয়টি বেসরকারী সংস্থা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল বেশলেটকে এক চিঠিতে এ কথা বলেছে। নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ গণমাধ্যমের উপর ক্রমাগত আক্রমণ নিয়ে বেশলেট এবং জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের প্রকাশ্য ও সজোরে উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সম্মান করার জন্য বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাতে সম্ভাব্য সকল উপায় ব্যবহার করা উচিত।
২০২০ সালে কমপক্ষে ২৪৭ জন সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে যুক্ত অন্যান্যদের দ্বারা হামলা, হয়রানি ও হুমকির শিকার হয়েছিলেন। কঠোর ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের অধীনে ৯০০ এরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ১০০০ লোককে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং ৩৫৩ জনকে আটক করা হয়েছে- এদের মধ্যে অনেকেই সাংবাদিক।
"শুধুমাত্র নিজেদের কাজ করার জন্য বাংলাদেশি সাংবাদিকরা নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং তাদের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে," বলেছেন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস-এর আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি ও মামলা-মোকদ্দমার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলিতা ব্যায়েন্স। "জাতিসংঘ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর উচিত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানো এবং গণতন্ত্রের জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতা যে অপরিহার্য এটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে স্পষ্ট করা উচিত ।"
সংস্থাটি বলেছিল যে, একজন লেখক মুশতাক আহমেদের আটকাবস্থায় মৃত্যুর পরে এবং কার্টুনিস্ট আহমেদ কিশোর নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরে বেশলেটের ১লা মার্চ ২০২১ এর বিবৃতিটি আটকাবস্থায় থাকা সাংবাদিকরা যে সকল বিপদের সম্মুখীন হয়েছে সেগুলো তুলে ধরার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিককে তাদের কাজের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। যারা সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করে বা মতবিরোধ প্রকাশ করে তারা বিশেষত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ হয় তাতে কমপক্ষে ১৭ জন সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই ফটোগ্রাফার ছিলেন। বিক্ষোভকারী এবং পুলিশ কর্মকর্তারা পিস্তলের বাট, লাঠি, লোহার রড, পাথর এবং ইট দিয়ে সাংবাদিকদের আঘাত করেন। রাবার বুলেটে গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকরা আঘাতের কারনে তাদের শরীরে ক্ষত, ফোলাভাব, রক্তক্ষরণ, ভাঙ্গা হাড়, স্থানচ্যুত কাঁধ এবং একটি ফাটা খুলি নিয়ে আহত হয়ে ছিলো। এই বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে, এমনও প্রতিবেদন হয় যে বাংলাদেশে ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার সেবাসমূহ সীমাবদ্ধ করা হয়ে ছিল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের সমালোচনায় গণমাধ্যমকে প্রায়শই সেন্সর করা হয়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী সমালোচকদের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলগুলিকে লক্ষ্য করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্চ মাসে, ভারতীয় নিউজ ওয়েবসাইট স্ক্রোলটি বাংলাদেশে অ্যাক্সেসযোগ্য ছিল না, গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সমালোচনা করে বাংলাদেশি এক লেখকের একটি নিবন্ধ প্রকাশের পরেই। গণমাধ্যমের ব্যাপকভাবে দমন এবং সম্পাদকদের যারা সরকারের সমালোচনা প্রকাশ করে প্রতিবেদন করেন তাদের হয়রানির ফলে সাংবাদিকরা কারাবন্দি বা মিডিয়া আউটলেটগুলি বন্ধ করার ঝুঁকি মনে করে অভূতপূর্ব পর্যায়ে স্ব-সেন্সরিংয়ে নেমেছেন।
হয়রানি এবং অনির্দিষ্টকালের জন্যে সাংবাদিক, এক্টিভিস্ট এবং সরকারের অন্যান্য সমালোচকদের আটক রাখার জন্যে কতৃপক্ষ ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের ব্যবহার করে আসছে যার ফলে মতবিরোধ প্রকাশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। যেহেতু আইন মন্ত্রনালয় এই ধরণের সাইবার “অপরাধ” এর জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ডিএসএ মামলার আরও বেশি মামলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
“ডিজিটাল সুরক্ষা আইন বাতিল করা এবং এর অধীনে আটক সকলকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ এবং দাতাদের উচিত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর সম্ভাব্য প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানো,” বলেছেন এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস। "ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ যে কেউ সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু করলে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।“