Skip to main content

কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করা থামান

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধাপ্রদান প্রাণহানির কারণ হতে পারে

 
এক ব্যক্তি তার মোবাইল ফোনে, শ্রীনগর, কাশ্মির, জানুয়ারি ৩০, ২০২০ © 2020 AP Photo/Dar Yasin

 

আপডেট: ইথিওপিয়া তিন মাস ইন্টারনেট ও ফোন সেবা বন্ধ থাকার পরে পশ্চিম অরমিয়াতে সেবাগুলো পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে।

(নিউ ইয়র্ক)- হিউ্ম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ বা ব্যবহার সীমিত করা একাধিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং মহামারি কোভিড-১৯ এর মতো স্বাস্থ্য সংকটের সময়ে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, ভারত এবং মায়ানমারের মতো যে সমস্ত সরকার এখন ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে, তাদের উচিত মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বার্থে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা।

স্বাস্থ্য-সংকটের সময়ে তাৎক্ষণিক ও সঠিক তথ্য প্রাপ্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ নিজের ও অন্যদের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, চলাচলের বিধিনিষেধ এবং প্রাসঙ্গিক সংবাদ জানার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

“ইন্টারনেট বন্ধ করা হলে মানুষের প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিসেবা প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হয়,” সিনিয়র ডিজিটাল রাইটস রিসার্চার ও এডভোকেট ডেবরা ব্রাউন বলেছেন। “এই বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটের সময়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হলে তা মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে।”

সারা বিশ্বের যেসব মানুষ স্বেচ্ছায় বা সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ঘরে অবস্থান করছে, তাদের ডাক্তার, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেট ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপি স্কুলসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেহেতু বন্ধ রয়েছে তাই বহু শিশুসহ অন্য যারা পড়াশোনো করছেন, তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন।

ইন্টারনেট বন্ধ করা হলে নারী, সমকামী, উভকামী ও হিজড়া ব্যক্তি, শারিরীকভাবে অক্ষম ব্যক্তি এবং বয়ষ্ক ব্যক্তিদের মতো যারা অনলাইন সহায়তা সেবার ওপর নির্ভরশীল তারা বেশি প্রভাবিত হয়। এই গোষ্ঠীগুলো তাদের শারিরীক সুরক্ষা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করে; বিশেষত যখন নারীরা তাদের শিশুর যত্ন ও শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব নিচ্ছে এবং যখন সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানসিক স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি বা বৃদ্ধি করতে পারে।

ইন্টারনেট বিঘ্নিত হবার আর্থিক ক্ষতি অনেক। যেহেতু চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অনেক ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের জন্য ইন্টারনেটের ওপর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নির্ভর করছে।

সাধারণত সংকটকালে, যেমন নির্বাচন, সরকারবিরোধী আন্দোলন বা সশস্ত্র সংঘর্ষের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এক্সেস নাও (Access Now)-এর হিসাবমতে, ২০১৯ সালে তেত্রিশটি দেশ মোট ২১৩ বার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। সরকারগুলো ভুয়া সংবাদ প্রতিহত করা থেকে শুরু করে জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তাকে যুক্তি হিসেবে পেশ করেছে।

২০১২ সাল থেকে ৩৮৫ বার ইন্টারনেট বন্ধে আদেশ দিয়ে ভারত সর্বোচ্চ সংখ্যকবার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। জম্মু ও কাশ্মিরে ২০১৯ সালের আগস্টে ভারত সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা (complete communications blackout) জারি করে, যেটার ফলে সেখানে বসবাসকারী পরিবারগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং স্থানীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট ইন্টারনেট বন্ধ করাকে অবৈধ ঘোষণার পরই কেবল আংশিকভাবে ২জি গতির ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়, ফোন সেবাও ধীরে ধীরে পুন:স্থাপিত হয়।

কোভিড-১৯ ভারতে ছড়িয়ে পড়ার পরে দেশটির জনগণ জানায় যে, তারা মহামারি সংক্রান্ত তথ্যপ্রদানকারী ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে পারছে না, কারণ ইন্টারনেটের গতি এতই কম যে টেক্সট মেসেজ ছাড়া অন্য সেবাগুলোর প্রাপ্তি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নয়া দিল্লি-ভিত্তিক ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন, “জীবন বাঁচাতে চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য উচ্চ গতির ইন্টারনেটসহ সমস্ত উপকরণ সহজলভ্য করা”র জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

ইথিওপিয়ার পশ্চিম অরমিয়াতে সরকার আরোপিত মাসব্যাপী ইন্টারনেট ও ফোন সেবা বন্ধ থাকার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়তো কোভিড-১৯ বিষয়ক জরুরি তথ্য জানতে পারছে না। ইন্টারনেট বন্ধ করাতে পরিবারগুলো যোগাযোগে বাধা পাচ্ছে, জীবন রক্ষাকারী সেবাগুলো ব্যাহত হচ্ছে, এবং ওই এলাকায় সরকারের জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানের সময় তথ্য প্রাপ্তির পথ বন্ধে (information blackout) ভূমিকা রেখেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে সরকার দশ লক্ষেরও বেশি মানুষকে ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। সরকার গত জুনে প্রথমে রাখাইনের আটটি ও চিনের একটি গ্রামে ইন্টারনেট সেবাকে সীমিত করে। এর ফলে সংঘাতপূর্ণ এলাকার নাগরিক, মানবিক সহায়তার সরবরাহ এবং মানবাধিকার কর্মীদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। সরকার সেপ্টেম্বরে রাখাইনের পাঁচটি ও চিন রাজ্যের গ্রাম থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেও ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও ফোন ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপের ফলে মানবিক সহায়তাকারী গোষ্ঠীগুলোর কোভিড-১৯ এর হুমকি মোকাবেলার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইন্টারনেট বন্ধের ফলে কক্সবাজারে বসবাসকারী প্রায় ৯০০,০০০ শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও জীবন বিপন্ন হচ্ছে।

প্রায় চার বছর আগে জাতি সংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল সর্বপ্রথম অনলাইনে তথ্য আদান-প্রদানে নিষেধাজ্ঞা বা বাধা সৃষ্টি করাকে নিন্দা করে এবং সদস্য দেশগুলোকে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানায়। গত সপ্তাহে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বাক স্বাধীনতা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করা “কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না”।

২৭ মার্চ জাতি সংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার যেকোনো এবং সকল প্রকার ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করা থেকে বিরত থাকতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “কোভিড-১৯ সংকটের সময়ে এই রোগ, এটির বিস্তার ও প্রতিকার বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও প্রাসঙ্গিক তথ্য কোনোরকম ব্যতিক্রম ছাড়াই সকল মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।”

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অনলাইনে তথ্য আদান-প্রদানের ওপর যেকোনো বিধিনিষেধ আইনের বিধানের মধ্যে থেকে, প্রয়োজনীয় ও একটি নির্দিষ্ট হুমকি মোকাবেলায় সমানুপাতিক এবং জনস্বার্থে হতে হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সরকারগুলোর কখনোই ব্যাপকভিত্তিক ও নির্বিচারে তথ্যের প্রবাহ ব্যাহত করার জন্য বা মানুষের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের সক্ষমতা হ্রাসের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করা উচিত নয়, আর স্বাস্থ্য সংকটের সময়ে এই ধরনের পদক্ষেপ প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

সরকার ই্ন্টারনেট সেবা বন্ধ করার কেবল আদেশই প্রদান করে, কিন্তু সেই আদেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব হলো ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর (internet service providers)। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর উচিত ইন্টারনেট বন্ধের যেকোনো আদেশের আইনগত ভিত্তি জানতে চাওয়া ও এই ধরনের আদেশগুলো এমনভাবে বাস্তবায়ন করা যাতে নূন্যতম বিধিনিষেধ আরোপ হয় এবং অযৌক্তিক ইন্টারনেট বন্ধের বিরুদ্ধে তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করা। তাদের উচিত জাতি সংঘের ব্যবসা ও মানবাধিকার বিষয়ক নীতিমালায় বর্ণিত তাদের দায়িত্বকে অগ্রাধিকার প্রদান করা এবং কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের জটিলতা এড়িয়ে চলা।

সেবা প্রদানকারীদের তাদের গ্রাহকদের ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে অগ্রিম নোটিশ প্রদান করা উচিত এবং নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা সীমিত করার জন্য সরকারের ভূমিকা ও এর আইনী ভিত্তি জানানো উচিত।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো ডকুমেন্টেশন, এডভোকেসি, নীতিনির্ধারকদের সাথে যোগাযোগ, কৌশলগত সহায়তা ও সমর্থন, আইনী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ইন্টারনেট বন্ধের বিরুদ্ধে একসেস নাও (Access Now) কর্তৃক সমন্বিত কিপইটঅন (#KeepItOn) আন্দোলনে যোগদান করতে পারে।

ব্রাউন বলেছেন, “বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে এবং তথ্য প্রাপ্তির ওপর জীবন-মৃত্যু নির্ভর করছে, এখন সময় এসেছে ইন্টারনেট বন্ধের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার,” “সরকারগুলোকে অনতিবিলম্বে সকলের জন্য সম্ভাব্য দ্রুততম গতি ও ব্যাপকভিত্তিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।”

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country