“মেয়েদের রুখে দাঁড়ানোর কোন ভিত্তি নেই”
কথাগুলি বলেছেন স্থানীয় একটি বেসরকারি নারী সংস্থার(এনজিও) নেতারা, যা লিঙ্গ বৈষম্যের কারনে বাংলাদেশের মেয়েদের জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করার ঘটনা বর্ণনা করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষা থেকে শুরু করে মাতৃত্বকালীন ছুটি পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু তার অনুরোধে, সংসদ এমন একটি আইন বিবেচনা করছে যা দশকের মধ্যে প্রথমবারের জন্য বাল্য বিবাহ অনুমোদন করবে। বর্তমান আইনে কোনো ধরণের ব্যতিক্রম ছাড়া, ১৮ বছর বয়সের নিচে মেয়েদের এবং ২১ বছর বয়সের নিচে ছেলেদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ । নতুন আইনে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের 'বিশেষ পরিস্থিতিতে ( যেমনঃ দুর্ঘটনামূলক বা বেআইনী গর্ভাবস্থার কারনে )' বিয়ের অনুমোদন দেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে বিবাহ বহির্ভূত গর্ভবতী মেয়েদের বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া উচিত, তা না হলে মা ও তার সন্তানকে সেবা প্রদানে বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হবে। এনজিওগুলি এ বিশেষ অবস্থার বিরোধিতা করেছে এবং মেয়ে শিশুদেরকে বৈষম্য থেকে রক্ষা করার জন্য অন্যান্য উপায় খুঁজতে সরকারকে অনুরোধ করেছে। শেখ হাসিনা এনজিওদের নিন্দা করে বলেছেন: "তারা ঢাকায় অবস্থান করে এবং গ্রামীণ সমাজের বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই।"এই যুক্তিটি, কয়েক দশক ধরে গ্রামে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এনজিওদের করা কাজগুলোর অবদানকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে। অথচ সরকার কিশোরী গর্ভধারণের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে পরিসংখ্যান সংগ্রহ বা অবিবাহিত মা ও তাদের সন্তানদের সমস্যা সম্পর্কিত কোনও গবেষণা করেনি।
কর্মীরা বর্তমান আইন ব্যবহার করে বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে সক্ষম। সারাদেশের গ্রামগুলিতে, এনজিওগুলি বাল্য বিবাহ আইন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে। পরিবারেরা যাতে বুঝতে পারে যে, এটি কেবল বেআইনী নয় বরং এটি মেয়েদেরকে মৃত্যু, দারিদ্র্য, সহিংসতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন করে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করে ।
নতুন প্রস্তাবিত আইন প্রবর্তনের পর, তারা বলে যে সমাজের সদস্যদের কাছ থেকে তারা আরো বেশি প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে কারন সরকারের প্রস্তাবিত আইনের সাথে একমত পোষণ করে তারাও মনে করে যে বাল্যবিবাহ কিছু ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। এ কারনে নারী অধিকার কর্মীরা মনে করেন যে সরকার আর তাদের সাথে নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়নে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে এনজিওদের এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী উভয়কে একত্র হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান কারণ "সরকার একা একা সবকিছু করতে পারবেনা।"
এনজিওদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, "তাদের দায়িত্ব খুব সীমিত। তারা কিছু অর্থ উপার্জন করতে এনজিওদের সাথে জড়িত । কিন্তু যতদিন আমরা ক্ষমতায় থাকি, ততদিন আমাদের দায়-দায়িত্ব আছে। "
কার কাছে দায়িত্ব? গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় নারী ও মেয়েশিশুদের জন্য শেখ হাসিনা ও এনজিও উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশকে বাল্যবিবাহ মুক্ত করার জন্য ১৮ বছর বয়সের আগেই বিবাহকে অনুমোদন দেয়ার এ খসড়া আইন শেখ হাসিনাকে বাতিল করতে হবে।
প্রতিশ্রুতি করা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার এখনো বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি।তার পরিবর্তে তারা ভুল পথে অগ্রসর হয়েছেন, জুলাই ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকার করেন যে ২০৪২ সালের মধ্যে বাল্য বিবাহ অবসান করা হবে কিন্তু তারপর তিনি মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করার পদক্ষেপ নেন, যা তার প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে গুরুতর সন্দেহের সৃষ্টি করে।