(ব্যাংকক) – নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জোরপূর্বক গুমের তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে অধিকার লঙ্ঘনের জন্য সংস্কার ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ তার ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৫এ বলেছে। জুলাই এবং আগস্টে তিন সপ্তাহ ধরে চলা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমন করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যধিক এবং নির্বিচারে গুলির কারণে ১০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়।
৫৪৬-পৃষ্ঠার বিশ্ব প্রতিবেদনের জন্য, তার ৩৫তম সংস্করণে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১০০ টিরও বেশি দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান তার ভূমিকায় লিখেছেন বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারগুলি নির্যাতন করেছে এবং অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, কর্মী এবং সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সরকারী বাহিনী বেআইনিভাবে বেসামরিক লোকদের হত্যা করেছে, অনেককে তাদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে এবং মানবিক সাহায্য প্রাপ্তিতে বাধা প্রদান করেছে। ২০২৪ সালের ৭০টিরও বেশি জাতীয় নির্বাচনে, স্বৈরাচারী নেতারা তাদের বৈষম্যমূলক বক্তব্য এবং নীতির দ্বারা জয় লাভ করেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, "বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একটি গণতান্ত্রিক এবং অধিকারের প্রতি সম্মানপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু গভীর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া এর অগ্রগতি হারিয়ে যেতে পারে।" "অন্তর্বর্তী সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রক্ষা করতে হবে, বলপূর্বক গুমের জন্য বিশ্বাসযোগ্য তদন্তকে সমর্থন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বেসামরিক তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করতে হবে।"
- অধিকারকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী সমর্থক ও সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং তাদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া এবং আইনি পরামর্শের প্রাপ্তিতে বাধা তৈরি করছে।
- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুম সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশনে স্বাক্ষর করলেও, নিরাপত্তা বাহিনী বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে বা ভিকটিমদের পরিবারকে কী ঘটেছে সে বিষয়ে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
- লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে তারা সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং গ্যাংদের হাতে সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে৷ অনিবন্ধিত শরণার্থীরা ক্ষুধার ঝুঁকিতে থাকে এবং তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ভয়ে স্বাস্থ্যসেবা খোঁজে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের অফিসের সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করা, কুখ্যাত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে বিলুপ্ত করা, স্বাধীন তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সংস্কার করা এবং বলপূর্বক গুমের শিকার ও তাদের পরিবারের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করা। । সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধন করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের সাথে কাজ করতে হবে যাতে তারা সুরক্ষা, চিকিৎসা সেবা এবং খাদ্য পেতে করতে পারে।