Skip to main content

বাংলাদেশঃ জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করুণ

অনুসন্ধানে জাতিসংঘকে সহায়তা করুণ; পরিবারগুলো উত্তরের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় রয়েছে

(ব্যাংকক) – বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বলপূর্বক গুমের তদন্তের একটি স্বাধীন কমিশনকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবটি গ্রহণ করা, ইন্টারন্যাশনাল ডে অব দ্য ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস বা জোরপূর্বক গুমের শিকারদের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে। কর্তৃপক্ষ বারবার অস্বীকার করে যে বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনী বলপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে, এর পরিবর্তে প্রহসনমূলক দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলে থাকে যে নিখোঁজরা আত্মগোপনে রয়েছে।

বাংলাদেশী মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, নিরাপত্তা বাহিনী ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ টিরও বেশি জোরপূর্বক নিখোঁজের ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও কিছু লোককে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, আদালতে হাজির করা হয়েছিল, বা নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সশস্ত্র বিনিময়ের সময় মারা গেছে বলে বলা হয়েছে, প্রায় ১০০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য সরকার জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ করতে অস্বীকার করে আসছে

"বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক গুমের বাস্তবতা অস্বীকার করে কাউকে বোকা বানাচ্ছে না, এবং পরিবর্তে তাদের পরিবারগুলোর কষ্টকে দীর্ঘায়িত করছে যারা তাদের প্রিয়জনের অবস্থান জানতে মরিয়া হয়ে আছে," হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর সিনিয়র এশিয়া বিষয়ক গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেছেন। "সরকারের উচিত হবে জোরপূর্বক গুমের তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন খোলার জন্য জাতিসংঘের সাথে সহযোগিতা করে অপব্যবহার মোকাবেলায় প্রকৃত ভাবে প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করা।"

“একদিন আমার বাবা আমার কাছে আসবেন এবং আমি তাকে অন্যদের মতো আলিঙ্গন করব এই আশা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষা করা কতটা বেদনাদায়ক তা আমি কথায় প্রকাশ করতে পারব না,” ১২ বছর বয়সী আদিবা ইসলাম রিধে সাম্প্রতিক একটি বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন। "কিন্তু এখন ১০ বছর হয়ে গেছে এবং আমার অপেক্ষার কোন শেষ নেই।" তার বাবা, পারভেজ হোসেন, বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর একজন কর্মী, যিনি ২রা ডিসেম্বর, ২০১৩-তে গুম হন, যখন তার বয়স ছিল ২। হোসেন ও অন্য তিন বিএনপি কর্মী একটি বিনোদন পার্কে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যখন হাঁটতে ছিল, তখন একটি সাদা ভ্যান এসে তাদের টেনে ভিতরে নিয়ে যায়। চারজনকে তুলে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই, একজন পরিচিতজন জানান যে তিনি তাদের পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অফিসের হেফাজতে দেখেছেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে যে তারা তাকে আটক করে রেখেছে। আরও কয়েক ডজনের মতো, হোসেনের হদিস অজানা রয়ে গেছে।

১০ই ডিসেম্বর, ২০২১-এ, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং শীর্ষ কমান্ডারদের বিরুদ্ধে অপব্যবহার, বিশেষ করে বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি মানবাধিকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

তবুও, স্বাধীনভাবে এবং স্বচ্ছভাবে জোড়পূর্বক গুমের অভিযোগ তদন্ত করার পরিবর্তে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভিকটিম পরিবারদের হয়রানি ও ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। পরিবারগুলি অভিযোগ করে বলছে যে পুলিশের কাছে নিখোঁজ ব্যক্তির অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ বারবার তাদের আত্মীয়দের অবস্থান সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আসছে। কর্মকর্তারা তাদের পুলিশ রিপোর্ট প্রত্যাহার বা সংশোধন করার জন্য পরিবারদের সদস্যদের হুমকি দিয়ে আসছে এবং চাপ দিয়ে থাকে যেন নিখোঁজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর জড়িত থাকার বিষয়ে এমন কোনো প্রমাণ মুছে ফেলা যায়। পরিবারগুলি কর্তৃপক্ষকে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জোর করে নিখোঁজ করা হয়নি এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে এমন মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে বলে জানিয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা এবং কর্তৃপক্ষ বারবার কূটনীতিকদের জোড়পূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সাথে দেখা করতে বাধা দিয়ে আসছে। মাত্র একটি উদাহরণে, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২২-এ, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, পিটার হাস, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা জোর করে প্রবেশ করার চেষ্টা করার সময় নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সাথে একটি বৈঠক শেষ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সরকারী কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে এবং পরামর্শ দিয়ে বলে ছিল যে রাষ্ট্রদূতের এমন বৈঠক করা উচিত হয়নি।

সরকার বারবার দাতা সরকার, জাতিসংঘ, মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা এবং সুশীল সমাজের আহ্বানকে উপেক্ষা করে আসছে তার নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুমের বিষয়টিকে অর্থপূর্ণভাবে আমলে নেয়ার ব্যাপারে।

বলপূর্বক গুম সংক্রান্ত চুক্তি ছাড়া জাতিসংঘের সকল মূল মানবাধিকার চুক্তির পক্ষে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের আগস্টে তার সফরের সময়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক তৎকালীন হাইকমিশনার, মিশেল ব্যাচেলেট, বাংলাদেশ সরকারকে এই কনভেনশনে যোগদান করার জন্য এবং জাতিসংঘের জোড়পূর্বক গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আহ্বান করে ছিলেন যেন "এই ইস্যুটিকে সংকল্পিতভাবে আমলে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেখানো যায়।"

"বাংলাদেশ সরকার যদি তার অবমাননাকর বাহিনীর ওপর থেকে মানবাধিকারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক হয়ে থাকে, তাহলে তার জবাবদিহিতার দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত," ব্লেকনার বলেন। “জবাবদিহিতা শুরু হয় স্বীকার করার মাধ্যমে যে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটছে এবং স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে এসকল অভিযোগের তদন্ত করা।

Make Your Gift Go Even Further

Make your year-end gift today and it will be multiplied to power Human Rights Watch’s investigations and advocacy as we head into 2026. Our exclusive match is only available until December 31.

Region / Country