Skip to main content

বাংলাদেশ: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ

ভাসান চর দ্বীপ থেকে পালানোর চেষ্টা করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর মারধরের বিষয় তদন্ত করুন

১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২১ তারিখে ভাসান চর দ্বীপ অভিমুখী রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দক্ষিণ পূর্ব বন্দর শহর চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে চড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। © 2021 AP Photo

(নিউইয়র্ক) - হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে যে, ভাসান চর দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনী কর্ত্ক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মারধর করা এবং নির্বিচারে আটক করার অভিযোগের অবিলম্বে তদন্ত করা উচিত। বাংলাদেশ সরকার প্রায় ২০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা তাদের মানবিক চাহিদা নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ না করেই প্রত্যন্ত দ্বীপে স্থানান্তরিত করেছে।

২০২১ সালের ৬ই এপ্রিল, দ্বীপ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনী কমপক্ষে ১২ জন শরণার্থীকে গ্রেপ্তার এবং মারধর করে, এবং তাদের চলাচলের স্বাধীনতায় বাধা দেয়। কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের অবহিত করেনি। ১২ই এপ্রিল, একজন বাংলাদেশি নাবিক অন্য অঞ্চলের শরণার্থী বাচ্চাদের সাথে খেলতে কোয়ার্টার ছেড়ে যাওয়ার জন্য চারজন শিশুকে পিভিসি পাইপ দিয়ে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে যেকোন শরণার্থীকে মুক্তি দিতে হবে যারা নির্বিচারে আটক রয়েছে এবং অন্যায়ের জন্য অপরাধীদের দায়বদ্ধ করতে হবে।

"বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে অগণিত জীবন বাঁচিয়েছে, তবে একটি দ্বীপে তাদের আটকে রাখা এবং তারা চলাচল করার চেষ্টা করলে তাদের মারধরের বিষয়টি ন্যায়সঙ্গত নয়," বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস।  "রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তত্ত্বাবধান করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে ভার বহন করেছে, সেটি কোনোভাবেই শরণার্থীদের নিরাপদে রাখা এবং তাদের অধিকারকে সম্মান করার বিষয়কে  নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার দায়িত্বকে উপেক্ষা করে না।"

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভাসান চরের সদ্য নির্মিত থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিরাপত্তা বাহিনী শরণার্থীদের মারধর করে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলেন, "তোমাদের রোহিঙ্গাদের বলো যে তারা যদি পালানোর কথা ভেবে থাকে তবে তাদের ভাগ্যেও একই পরিণতি হবে।" নিখোঁজদের শনাক্ত করতে কর্তৃপক্ষ ভাসান চর আশ্রয়স্থল গুলিতেও অভিযান চালিয়েছিল এবং তথ্যের দাবিতে বাসিন্দাদের মারধর করেছিল।

আটককৃত দুটি রোহিঙ্গার পরিবার জানিয়েছে যে তাদের আত্মীয়দের অবস্থান সম্পর্কে তাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না। তারা আরও বলেছেন যে পুলিশের  লোক বলে দাবি করা অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিরা তথ্য দেওয়ার জন্য ঘুষ দাবি করেছিলেন।

আটক হওয়া এক শরণার্থীর মা বলেছিলেন যে, তার পরিবার ঘুষ না দিলে তার ছেলেকে  বাংলাদেশে প্রচলিত বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড "ক্রসফায়ারে" হত্যা করা হবে বলে পুলিশ অফিসার বলে দাবি করা একজন হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “একজন পুলিশ অফিসার আমাকে ডেকেছিলেন কিন্তু আমি তার ভাষা বুঝতে না পারায় আমার ভাতিজি যে বাংলা বলতে পারে সে পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলেছিল। “তিনি আমাদের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন যে আমাদের নগদ অর্থ প্রস্তুত রাখা উচিত, অথবা তারা আমার ছেলেকে ক্রসফায়ারের উদ্দেশ্যে লক্ষ্য করবে। আমরা বলেছিলাম যে আমরা টাকা দিতে পারব না এবং জানতে চেয়েছিলাম আমার ছেলে এখন কোথায়? লোকটি বলেছিল, ‘আগে টাকা দাও, তবে তোমার ছেলে নিরাপদে থাকবে।‘”

১২ই এপ্রিলের ঘটনায় কিছু পরিবার এবং একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছে যে নৌবাহিনীর পোষাক পরিহিত এক ব্যক্তি ৮ থেকে ১১ বছর বয়সী চার বাচ্চাকে পিভিসি পাইপ দিয়ে মারধর করেছিল কারণ তারা অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে খেলতে অন্য ব্লকে প্রবেশ করেছিল। এই শিশুরা সমুদ্র থেকে উদ্ধারকৃত একদল শরণার্থী যারা ভাসান চরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। শরণার্থীদের দ্বারা শেয়ার করা মারধরের ছবিগুলিতে তাদের গুরুতর ভাবে আহত হবার অবস্থা দেখা গিয়েছে।

একজন মা বলেছিলেন যে মারধরটা এতটা নির্মম ছিল, তিনি ভয় পেয়েছিলেন যে তার সন্তানকে হয়ত হত্যা করা হবে: “আমাদের বাচ্চাদের আমরা যেখানে বাস করছি সেই ব্লকের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। একজন নাবিক যখন জানতে পারেন যে বাচ্চারা অন্য একটি ব্লকে গেছে, তখন সে তার ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে এসে শিশুদের নির্দয়ভাবে মারধর করতে শুরু করে। অন্যরা যখন পালাতে সক্ষম হয় আমার ছেলে তখন পালাতে পারেনি। আমি নাবিককে অনুরোধ করলাম যেন তাকে না মারেন তবুও তিনি আরও দু'তিন মিনিট ধরে মারধর চালিয়ে যান। আমার সন্তান মারা গেলে কী হত তখন?”

বাংলাদেশ সরকার বলেছে যে তারা মিয়ানমার সেনা দ্বারা জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে পালিয়ে আসা বহু রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে বসতি স্থাপন করায় সেখানকার শিবিরগুলিতে জনাকীর্ণতা নিরসনে কমপক্ষে ১০ লক্ষ শরণার্থীকে বঙ্গোপসাগরের একটি জনমানবহীন পলি দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরিত করতে চায়। এই দ্বীপের আবাসস্থলতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও কয়েক হাজার শরণার্থীকে ইতিমধ্যে শিবিরগুলি থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ কোভিড -১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাথমিক ভাবে কোয়ারিন্টেনের জন্য সমুদ্রপথে আটকা পড়ে থাকা প্রথম ৩০৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসান চরে নিয়ে দ্বীপটিকে জনবহুল করা শুরু করে, তবে এক বছর পরেও সেখানে এখনো তাদেরকে ধরে রাখা হচ্ছে।

ভাসান চর থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা শরণার্থীদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন যাদের ২০২০ সালের মে মাসে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা তাদের পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত হতে পারবে। তবে একজন শরণার্থী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন যে কর্তৃপক্ষ কক্সবাজারের শিবিরে তাদের ফিরে যাওয়ার আর্জি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল: “কর্মকর্তারা আটককৃতদের মারধর করার জন্য রাবার স্টিক ব্যবহার করেছিলেন। এই লোকেরা কোনও অপরাধ করেনি। এখানকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এতগুলি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি পাবার পরেও তারা কেবল মরিয়া হয়েছিল যে তারা তাদের পরিবারের কাছে তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।"

৩রা এপ্রিল ভাসান চরে বিদেশি মিশনের প্রধানগণের সফর হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীর এই নিপীড়ন ঘটেছিল। জাতিসংঘের একটি দলকেও ১৭ থেকে ২০ মার্চ এই দ্বীপটি পর্যবেক্ষন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

"বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে শরণার্থীদের মারধর ও অন্যায়ভাবে আটক বন্ধ করতে বা তাদের অর্জিত আন্তর্জাতিক সুনামকে ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে রোধ করার জন্য অবিলম্বে ও নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করা উচিত," বলেছেন অ্যাডামস। "ভাসান চরের অবস্থার বিষয়ে দাতা দেশসমূহ এবং জাতিসংঘের এজেন্সিগুলির গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা- এবং উত্তর পাওয়া প্রয়োজন।"

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country
Tags