(নিউ ইয়র্ক, জানুয়ারী ২৯, ২০১৫) – হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আজ প্রকাশিত ২০১৫ ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে (২০১৫ ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট) বলেছে যে, বাংলাদেশ সরকার হত্যা, গুম ও নির্বিচারে গ্রেফতার সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দ্বারা সংঘটিত গুরুতর লঙ্ঘনগুলোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারি বাহিনীগুলো জানুয়ারী ২০১৪-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে ও তার পর গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। একই সময়ে বিরোধী দলগুলো অর্থনৈতিক অবরোধ প্রয়োগের এবং জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের লক্ষ্যে সহিংস ও নির্বিচার আক্রমণে নিজেদের নিয়োজিত করে।
পর্যাপ্ত প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও, সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দ্বারা সংঘটিত অন্যান্য লঙ্ঘনগুলির জন্য দায় সুনিশ্চিত করতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এর একমাত্র ব্যতিক্রম হল, মে মাসে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-এর বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় যারা একজন স্থানীয় রাজনীতিবিদের চুক্তিভিত্তিক (কন্ট্রাক্ট কিলিং) খুনের বহুল প্রচারিত ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, "র্যাবের কয়েকজন সদস্যের গ্রেফতারের বিষয়টি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, কিন্তু সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, ন্যায়বিচার যাতে শুধুমাত্র তাদেরকেই দেয়া না হয় যাদের পারিবারিক বা রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে।" "যেখানে সরকারের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে সেখানে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে অবাধে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে এবং তাদের মাত্রাতিরিক্ত কাজকে অগ্রাহ্য করেছে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই এই প্রবণতা চলছে।"
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর ৬৫৬ পৃষ্ঠার ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে (যার ২৫তম সংস্করণ এই বছর প্রকাশিত হচ্ছে) ৯০টিরও বেশি দেশের মানবাধিকার সংক্রান্ত অবস্থার পর্যালোচনা রয়েছে। তাঁর রচনার ভূমিকায়, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কেনেথ রথ সরকারগুলোর প্রতি আবেদন করেছেন এই বলে যে, সংকটের সময় মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দিলে তা একটি কার্যকরী নৈতিক নির্দেশনা হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং এই অধিকারগুলোকে লঙ্ঘন করলে তা গুরুতর নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি বা বৃদ্ধি করতে পারে। স্বাধীনতা ও বঞ্চণা না করার মূল মূল্যবোধগুলো চাপা দিলে স্বল্পমেয়াদী লাভ হলেও, দীর্ঘমেয়াদে তা খুব কম ক্ষেত্রেই কাজে আসে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এছাড়াও মানবাধিকার সংক্রান্ত দীর্ঘকালস্থায়ী সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে, যা বাংলাদেশে একটি উদ্বেগের বিষয়। বাল্য বিবাহ একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। বার্মা থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুরাবস্থা চলছেই। তার সাথে সরকার তাদেরকে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ করার সমস্যার কথা জানিয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে সুশীল সমাজের উপর বিধিনিষেধ বৃদ্ধির পর, সরকার একটি খসড়া বিল এনেছে যা বিধিনিষেধকারী কার্যধারা ও নীতিগুলিকে আইনি ভিত্তি প্রদান করবে এবং একই সাথে বিদেশী অর্থসাহায্য পাওয়ার পথকে কঠিন করে তুলবে। সরকার একটি নতুন গণমাধ্যম নীতিও চালু করেছে, যা বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা তৈরি পোশাক কারখানা ধ্বসের পর সরকার শ্রম সংক্রান্ত আইনগুলোকে সংশোধন করলেও, শ্রমিকরা জানিয়েছেন যে, ইউনিয়ন তৈরী বা তাতে যোগ দিতে গেলে তারা হুমকি ও সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
২০১৪ সালের একটি ইতিবাচক ঘটনা হলো যে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর উত্তর আমেরিকান ও ইউরোপীয়ান খুচরো বিক্রেতাদের দুটি গোষ্ঠী একটি চুক্তি অনুযায়ী ২০০০-এরও বেশী তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার অগ্নি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিদর্শন সম্পন্ন করে। যদিও তাদের রিপোর্টগুলো জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু কারখানাতে মেরামতির কাজও শুরু হয়েছে, সরকার অন্যান্য যে সকল কারখানাগুলো পরিদর্শন করেছিল, সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করেনি। সে সব কারখানায় মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি।
অ্যাডামস বলেন, "দীর্ঘ সময় পর অবশেষে, সরকার ও আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ভয়াবহ কাজের পরিবেশকে উন্নত করার ইচ্ছা ইচ্ছা খুঁজে পেয়েছে। তবে এই গতিকে অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।" "প্রসন্নতা দেখানোর সুযোগ এখানে নেই এবং অনেক করা হয়েছে এমন যেন কেউ না ভাবেন। কারণ বাংলাদেশের সকল শিল্পে ও সকল কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজটি মাত্র শুরু হয়েছে।"