Skip to main content

বাংলাদেশঃ রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অবিলম্বে সাহায্য প্রয়োজন

এক বছর পেরিয়ে গেলেও বহু আন্তর্জাতিক বিক্রেতারা কোন অবদান রাখেনি

(ব্যাংকক) - হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ জানিয়েছে যে, গত বছর রানা প্লাজা ভবন ধস থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো এখনও অসুস্থতাজনিত - এবং বেকারত্বের কারণে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তসহ নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে আর্থিক ট্রাস্ট গঠনে পর্যাপ্ত সহায়তা করছে না রানাপ্লাজার পাঁচটি কারখানায় যেসব আন্তর্জাতিক কোম্পানি পোশাক বানাতো।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মতে, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এই ভবন ধসে ১,১০০ মানুষ নিহত এবং আড়াই হাজারের মতো মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগ্যানাইসেশন – আইএলও) সভাপতিত্বে চার কোটি মার্কিন ডলারের  একটি তহবিল গঠনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হলেও, এখন পর্যন্ত মাত্র দেড় কোটি মার্কিন ডলার সংগৃহীত হয়েছে। ২০১৪-র ২২ এপ্রিল সরকার ঘোষণা দেয়, এই তহবিল থেকে সাহায্যের প্রথম কিস্তি হিসেবে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তকে ৬৪৫ মার্কিন ডলার দেয়া হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ও শ্রমিকদের স্বজনরা জানিয়েছেন, জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া পঙ্গুত্বে, মানসিক আঘাতে ও আয় বন্ধ হওয়ায় আজও তারা ভুগছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্যদের আহারের ব্যবস্থা করতে এবং শিশুদের স্কুলে পাঠাতে তাদের কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ওই ভবন ধসের আগে কারখানায় ত্রুটিপূর্ণ কর্ম পরিবেশের কথাও হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান তারা। এই আটতলা ভবনের কারখানাগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রখ্যাত অনেক ব্র্যান্ডের পোশাক বানানো হতো।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, “রানা প্লাজা ধসের এক বছর পরও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের পরিবার তীব্র দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে।” তিনি আরো বলেন, “আন্তর্জাতিক গার্মেন্ট ব্র্যান্ডগুলোর উচিত ক্ষতিগ্রস্তদের ও নিহতদের পোষ্যদের সাহায্য করা, যারা তাদের জন্য পোশাক তৈরি করত।

তহবিলটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, সংগৃহীত দেড় কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যে শুধু প্রাইমার্কই আট কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে। রানা প্লাজার কারখানাগুলোর সাথে ব্যবসা ছিল না এমন কয়েকটি কোম্পানিও সাহায্য করেছে। অথচ সাংবাদিক ও শ্রমিকনেতারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যে ১৫টি ব্র্যান্ডের লেবেল পান তারা কেউই তহবিলে অর্থ দেয়নি।

এই তহবিল থেকে সুশৃংখল ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকল ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের পরিবার ও পোষ্যরা দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে থাকবে। “রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি ও সমবেদনা প্রকাশে ইচ্ছুক” সব কোম্পানি, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দান গ্রহণে এরা উন্মুক্ত বলে তহবিলটির ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী কোন কোম্পানির ‘কার্যক্রমের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত মানবাধিকারের প্রতি প্রতিকূল প্রভাব রোধ বা হ্রাস করা” এবং এর কুপ্রভাব কমিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেয়া তাদের দায়িত্ব। মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ টেকসই এবং সামাজিকদায়বদ্ধ অনুশীলন নীতি গ্রহণে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘জাতিসংঘের গ্লোবাল কম্প্যাক্ট’ উত্সাহ দিয়ে থাকে।

এই তহবিলে অর্থ না দেযার কারণ জানতে চেয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ওই কোম্পানিগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে, অ্যাডলা মোডেম্যাক্টা(জার্মানি), এসসেনা রিটেইল(যুক্তরাষ্ট্র), ওউশন (ফ্রান্স), বেনেটন(ইতালি), কেয়াফুউ (ফ্রান্স), দ্যা ক্যাটো কর্পোরেশন (যুক্তরাষ্ট্র), গ্র্যাবালোক/স্টোর টোয়েন্টিওয়ান (যুক্তরাজ্য), গুল্ডেনফেনিস (জার্মানি) , জে. সি পেনি (যুক্তরাষ্ট্র), কিডস ফর ফ্যাশন (জার্মানি), মাটালন (যুক্তরাজ্য), এনকেডি ডোয়েচল্যান্ড জিএমবিএইচ (জার্মানি), পিডাব্লিউটি (টেক্সম্যান) (ডেনমার্ক), এবং ইয়েস জী ইসেইন্সা (ইতালি)। এদের মধ্যে বেনেটন জানিয়েছে সাহায্যের জন্য কেন তারা একটি বেসরকারি সংস্থার প্রকল্পকে অগ্রাধিতার দিয়েছে। অন্যদিকে ক্লোথস ক্যাম্পেইনের বক্তব্য অনুযায়ী ভবন ধসের সময় রানা প্লাজায় ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করে ক্লিন এসসেনা রিটেইল, কেয়াফুউ, ক্যাটো কর্পোরেশন ও গুল্ডেনফেনিস তাদের আগের বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেছে।

আহতদের বা নিহতদের পরিবারের দুর্দশা লাঘবে আর কোন পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চেয়ে ‘রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ডে’র তালিকাভুক্ত ১৪টি কোম্পানিকেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চিঠি দেয়। এগুলো হচ্ছে, বনমারশেই (যুক্তরাজ্য), সিএন্ডএ (হল্যান্ড), ক্যামেইউ (ফ্রান্স), দ্যা চিল্ড্রেন্স প্লেইস (যুক্তরাষ্ট্র), এল কোর্তে ইংলেস (স্পেইন), ইন্ডিটেক্স (স্পেন), কেআইকে (জার্মানি), লুব্লো (কানাডা), এলএলপি এসএ(পোল্যান্ড), ম্যাঙ্গো (স্পেইন), মাসকট ইন্টারন্যাশনাল (ডেনমার্ক), এন ব্রাউন গ্রুপ (ইউকে), প্রিমিয়ার ক্লোদিং(যুক্তরাজ্য), এবং ওয়াল মার্ট (যুক্তরাষ্ট্র)।

এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯টি কোম্পানি এই তহবিলে দান করার কারণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছে। কেউ কেউ রানা প্লাজার সাথে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও দান করেছে বলে কেউ জানিয়েছে। কেআইকে-র ব্রিটা শ্রেইজ অলিভিয়ার আশা তার কোম্পানির ৫ লাখ মার্কিন ডলার সাহায্য অন্যদেরও অর্থ দানে উৎসাহ জোগাবে।

রবার্টসন বলেন, “কোম্পানিগুলোর এই তহবিলকে সঠিক লোককে সঠিক সাহায্য দেয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত প্রক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত, কারণ এটি বাংলাদেশ সরকার, শিল্প সংক্রান্ত সংস্থা, আইএলও, ট্রেড ইউনিয়ন, এনজিও ও কয়েকটি ব্র্যান্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে গছিত।

তিনি বলেন, “এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষকে সাহায্যের লক্ষ্যে এই তহবিল গঠনে আন্তর্জাতিক তৈরিপোশাক ব্র্যান্ডগুলোর এখন তাদের সাহায্য বাড়ানো উচিত।”

সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৪৪ জন বেঁচে যাওয়া শ্রমিক ও নিহতের স্বজনের সাথে কথা বলে জানতে পারে, সবাই কিছু না কিছু আর্থিক সাহায্য পেয়েছে; তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ছিল পরিমাণে অপর্যাপ্ত। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ওসব সাহায্য তাদের জন্য হয়তো অপ্রতুল ছিল; এমন কি প্রয়োজনমাফিক সাহায্য চাওয়ার তাদের সুযোগও ছিল না।

বেঁচে ফেরা পঙ্গু শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সঞ্চয়পত্র পেয়েছে যা থেকে তারা মাসে ১৩০ থেকে ১৯০ মার্কিন ডলার আয় করতে পারবে। তবে সরকারের সঞ্চয়পত্র বিতরণের কয়েক মাস পর ডিসেম্বর মাসে রাবেয়ার দুটি পা কেটে ফেলে ডাক্তাররা। ফলে মাসিক নিশ্চিত আয়ের ওই সঞ্চয়পত্র রাবেয়া(৩৫) পাননি। তবে তিনি বিভিন্ন দাতার কাছ থেকে তিনি হাজার সাড়ে চারেক মার্কিন ডলার পান; যা এরই মধ্যে ফুরানোর পথে।

রাবেয়া হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান, “আমার চার সন্তান। আমাকে দেখাশোনা করতে গিয়ে আমার স্বামী এখন কাজে যেতে পারে না।”

“হাসপাতালে থাকার সময় যে অর্থ সাহায্য পেয়েছিলাম তা দিয়ে আমরা বেঁচে আছি। তা এখন শেষের পথে। এ টাকা শেষ হলে কীভাবে চলবো জানি না।” 

আলমগীর হোসেন (২৭) জানান, ঘটনাটি তার উপর এমন মানসিক প্রভাব ফেলেছে যে তিনি কোন কাজই করতে পারেন না।

“হাসপাতাল ছাড়ার পর আমি এক কারখানায় কাজ নি, কিন্তু চার মাসের বেশি কাজ করতে পারিনি।

“ফায়ার আলার্ম বেজে উঠলেই আমি চেচাতে শুরু করতাম। এমনকি সামান্য কোন শব্দ হলেও আমি পালানোর জন্য দৌড় দিতাম। লোকজন ভাবত আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।”

রুনা রানী (৩৫) ও তার মেয়ে সমপ্তি (১৮) রানা প্লাজায় কাজ করত। সামান্য আঘাত নিয়ে রানী বেরিয়ে আসলেও তার মেয়ের লাশের খোঁজ মেলে ফেব্রুয়ারিতে। এপ্রিল মাসে সরকার তাকে ১,২০০ মার্কিন ডলার দেয়। রানী বলেন, “অনেকেই আমার মেয়ের আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল। সেটা না থাকায় আজকে আমরা সবাই অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।” 

ভবনটি ধ্বসের আগে কারখানার পরিস্থিতি কেমন ছিল তাও শ্রমিকরা জানিয়েছেন। পাঁচটির মধ্যে চারটি কারখানাতেই শিশুরা কাজ করত- কারখানাগুলো হচ্ছে- নিউ ওয়েইভ বটম, নিউ ওয়েইভ স্টাইল, এথারটেক্স এবং ফ্যান্টম অ্যাপারেল। ওরা জানিয়েছেন, কারখানার ব্যবস্থাপকরা শিশুদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য করত এবং তা বাইরের পরিদর্শকদের কাছ থেকে গোপন রাখত।

ওরা আরো জানান, ওই চারটি কারখানায় চাহিদা মতো উৎপাদন করতে না পারলে বা কাজে কোনো ভুল করলে ম্যানেজাররা তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ গালিগালাজ করত। কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের টয়লেটে বা নামাজ পড়তে যেতে দিত না, এমন কি অসুস্থ হলেও ছুটি দিতো না। শ্রমিকদের ওভারটাইম কাজ করতে বাধ্য করত; কখনো কখনো ওভারটাইমের মজুরিও দিতো না।

দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়ায় নিরাপত্তার জন্য আগের দিন ভবনটি বন্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও ঘটনার দিন সকালে ম্যানেজাররা শ্রমিকদের রানা প্লাজায় ঢোকার আদেশ দেন। কোন কোন দ্বিধাগ্রস্ত শ্রমিককে ম্যানেজাররা হুমকি দেন বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন। রানা প্লাজার এ পাঁচ কারখানার একটিতেও ট্রেড ইউনিয়ন ছিল না, যারা কারখানার ম্যানেজারদের মোকাবেলা করতে পারত এবং বিপদজনক ভবনটিতে শ্রমিকদের প্রবেশে বাধ্য করা ঠেকাতে পারত।

জাতিসংঘের গ্লোবাল কম্প্যাক্ট-এ অংশগ্রাহকারীরা স্বেচ্ছায় ১০টি নীতি মেনে চোয় সম্মতি দিয়েছে। এর দুই নম্বর নীতিতে আছে- ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেয়াল রাখতে হবে যাতে তাদের কাজে কোনভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়। এই তহবিলে অর্থ দাতা অন্তত চারটি কোম্পানি- এল কর্তে ইংলেস, ইন্ডিটেক্স, ম্যাঙ্গো ও এন ব্রাউন গ্রুপ জাতিসংঘের গ্লোবাল কম্প্যাক্ট-এর অংশ নিয়েছে।

সাংবাদিক ও প্রচারকর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী রানা প্লাজার সাথে যুক্ত ওউশন ও কেয়াফুউ কোম্পানি দুটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী তারা গ্লোবাল কম্প্যাক্টের অংশগ্রাহণকারী। ২০১৩ সালের মে মাসে কেয়াফুউ জানায় যে, রানা প্লাজার কোন কারখানার সাথে তাদের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ছিল না। একই সময়ে ওউশন-ও জানায়, তাদের কখনোই রানা প্লাজার কোন কারখানায় ব্যবসা ছিল না এবং এবং সেখানে কেন তাদের লেবেল পাওয়া গিয়েছিল তা তারা তদন্ত করছে।

রবার্টসন বলেন, “আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক তৈরির প্রক্রিয়ার উপর পর্যাপ্ত তত্ত্বাবধান নেই তা রানা প্লাজার ধস দেখিয়ে দিয়েছে।

“এ ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহতদের পরিবারগুলোর দুঃখ দুর্দশা কমাতে এই ব্র্যান্ডগুলোর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া উচত।”

সর্বশেষঃ

এই বিবৃতি প্রকাশের পর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইন্ডিটেক্স, পিডাব্লিউটি ও আল্ডার-এর কাছ থেকে চিঠি পেয়েছে। 

বেঁচে যাওয়া এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বিবৃতি পড়তে নিচে দেখুন।

বেঁচে যাওয়া এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বিবৃতি

২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ঢাকা ও সাভারে ৪৪ জনের সাক্ষাৎকার নেয়।

ভবন ধসের পর বেঁচে থাকার সংগ্রামঃ

“আমার চার সন্তান। আমাকে দেখাশোনা করতে গিয়ে আমার স্বামী এখন বেশি সময় কাজ করতে পারে না।

“হাসপাতালে থাকার সময় যে অর্থ সাহায্য পেয়েছিলাম তা দিয়ে আমরা চলছি। তা এখন শেষের পথে। এ টাকা শেষ হলে কীভাবে চলবো আমরা জানি না।” এ কথা বলেছেন রাবেয়া বেগম (৩৫) আঘাতের কারণে যার দুটি পাই দুর্ঘটনার আট মান পর কেটে ফেলতে হয়েছে।

“আমি আমার বাড়িওয়ালাকে কথা দিয়েছি ক্ষতিপূরণের টাকা পেলে বকেয়া বাড়িভাড়া দিয়ে দেব। কজন আত্মীয় খাবার দিয়ে আমাদের সাহায্য করছে। আমরা তিনবেলা খেতে পেলেও খাবারের মান খুব খারাপ। আমি আর কাজ করতে পারি না কারণ যেকোনো ভবনে প্রবেশ করলেই আমার প্রচণ্ড ভয় লাগে”। - মোহাম্মদ খোকন (৩৫)

“আমার স্বামী আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জক। শুধুমাত্র তার আয়ে আমাদের বাঁচা কঠিন।” - লিজা আক্তার (২১)

“হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আমি এক কারখানায় চাকরি নেই, কিন্তু চার মাসের বেশি থাকতে পারিনি। ফায়ার আলার্ম বেজে উঠলেই আমি চিৎকার করা শুরু করতাম। এমনকি সামান্য কোন আওয়াজ কানে আসলেও আমি পালানোর জন্য দৌড় দিতাম। লোকজন ভাবতো আমি বুঝি পাগল হয়ে যাচ্ছি। তাই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হই। এখন আমার স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণের জন্য সংগ্রাম করছি।” - আলমগীর হোসেন (২৭)

“সরকারি তালিকায় আমাদের ভুল ঠিকানা ছিল। আমাদের বাড়ি মানিকগঞ্জ, কিন্তু তালিকায় আমাদের ঠিকানা লেখা হয় দিনাজপুর। তাই অন্যদের মতো আমরা ৩,৮০০ মার্কিন ডলার পাইনি। এই ভুল সংশোধনের জন্য বহুজনের কাছে গিয়েও কোন লাভ হয়নি। আমাদের টাকা এখন শেষের পথে। আমাদের পরিবারে সে-ই [রিক্তা] শুধু আয় করত। আমার ছেলেটা অটিস্টিক। তাকে দেখাশোনা করতে হয়। এই বিপর্যয়ের ফলে আমাদের জীবনে যে কী দুর্যোগ নেমে এসেছে তা বোঝাতে পারবো না।” - রিক্তার (১৮)মা ফুলমালা

দুর্ঘটনার দিন সকালে কারখানায় প্রবেশ করা প্রসঙ্গেঃ

“আমরা কাজ করতে চাইনি কিন্তু জেনারেল ম্যানেজার এসে আমাদেরকে হুমকি দেয়।তিনি জানান যে কাজ না করলে পরের মাসে বেতন পাব না। ম্যানেজার আমার একজন সহকর্মীকে থাপ্পড় মারে। আমি সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে আমাকে তিনি টেনে বের করে কাজে নিয়ে যান।” – রেশমা (২১) এথারটেক্স লিমিটেড

“আমরা জানতাম ভবনে কিছু সমস্যা আছে। আমি আমার বোনকে নিয়ে যখন ভবনে ঢুকলাম তখনই টের পাই সমস্যাটা গুরুতর। কেউ কেউ চলে যেতে চাইলে প্রোডাকশন ম্যানেজার বাধা দেন। আমাদের বাবার কাছে নালিশ করারও হুমকি দেন ম্যানেজার। এর দুই মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে যায় আর ভবনটা ধসে পড়ে। আমার বোনের দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।” - রোজিনা বেগম (২৪) নিউ ওয়েইভ বটম

“আমি সেদিন কাজে যেতে চাইনি তাই আমি শুয়ে ছিলাম, তখন আমার লাইন ম্যানেজার আমাকে ফোন করেন। তিনি আমাকে কাজে যেতে ডাকেন, নয়তো বেতন কেটে নেবেন বলে জানান।” - রীতা বেগম (২২) নীয় ওয়েইভ স্টাইল

ভবন ধসের আগে কর্মস্থলের অবস্থা প্রসঙ্গেঃ

“ভয়াবহ, আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাটা সাধারণ ব্যাপার ছিল। আমরাদেরকে বাথরুমে যেতে বা নামাজ পড়তে যেতে দেয়া হতো না। প্রায়ই আমাদেরকে বাড়তি সময় বেগার খাটতে বাধ্য করা হতো। তিন মাস আগে আমাকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করতে বলা হয় এবং আমি তা করতে রাজি না হওয়ায় জেনারেল ম্যানেজার আমাকে লাঠি দিয়ে মারে।” - রেশমা, বয়স জানা যায়নি, এথারটেক্স লিমিটেড

“কর্মস্থলের অবস্থা খারাপ ছিল। ভবন ধসের সাত দিন আগে প্রোডাকশন ম্যানেজার তার অফিসে ডেকে নিয়ে আমাকে থাপ্পড় মারে আর অকথ্য গালিগালাজ করে। কেউ আমাকে পকেটের জন্য ভুল কাপড় দেয়, যা দিয়ে আমি পকেট সেলাই করি। ওটা আমার কোন দোষ ছিল না। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। আমার কী দোষ তা বুঝতে পারছিলাম না।” - সাবিনা বেগম (২৫) নিউ ওয়েইভ স্টাইল

“ভবন ধসের দিন ১৫ আগে আমার জ্বর হয়। আমি ছুটি চাইলেও তা দেয়া হয়নি। তাই অসুস্থতা নিয়েই কাজ করছিলাম। সে কারণে চাহিদা মতো কাজ করতে পারিনি। এ জন্য লাইন চীফ আমাকে গালিগালাজ করে অপমান করে।” - আলিরন বেগম(৪০) নিউ ওয়েইভ বটম

“আমার কাজ ছিল প্যান্টে লুপ সেলাই করা। দিনে আমাকে ১,২০০ লুপ সেলাই করতে হতো। একদিনে ১২০০ লুপ সেলাই কঠিন ব্যাপার। তাই আমি পানিও খেতাম না যাতে বাথরুমে না যেতে হয়।” - শিল্পী বেগম (২২) নিউ ওয়েইভ বটম

শিশু শ্রম প্রসঙ্গেঃ 

“আমার বয়সী আরো তিনটি মেয়ে ছিল। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো। কাজের পরিবেশ মোটেই ভালো ছিল না। কাজ শেষ করতে না পারলেই লাইন চীফ আমাকে গালিগালাজ করতো।” - ইয়ানুর আখতার, ১৪, এথারটেক্স লিমিটেড।

“কয়েকজন শিশু কর্মী ছিল। যেদিন ক্রেতারা আসতো সেদিন ওদের কাজে আসতে মানা করা হতো অথবা কাদের বাথরুমে লুকিয়ে থাকতে বলা হতো। - আব্দুর রউফ, ৩৫, ফ্যান্টম এপারেলস।

“অল্প কজন শিশু কর্মী ছিল। ক্রেতারা আসলে তাদেরকে বাথরুমে লুকিয়ে রাখা হতো। আমি একজন মেয়েকে চিনতাম যার বয়স পনেরও হয়নি।” - আজিরন বেগম, ৪০, নিউ ওয়েইভ বটম।

 

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country