Skip to main content

বাংলাদেশ: রানা প্লাজার পর দুই বছর, এখনো অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক

শ্রম আইন প্রয়োগ করুন, ইউনিয়নগুলোর হয়রানি বন্ধ করুন

(ঢাকা)- বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকরা এখনো বাজে কর্মপরিবেশ ও মালিক কর্তৃক ইউনিয়ন বিরোধী কর্মকান্ড, যেমন ইউনিয়ন সংগঠকদের মারধর-এর, মোকাবিলা করছে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে৷ গত ২৪ এপ্রিল, ২০১৩-তে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের ঘটনায় ১,১০০-এর বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার পর দুই বছরে বাংলাদেশের কারখানাগুলোকে নিরাপদ করার বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায়, তাদের ইউনিয়ন সংগঠনের অধিকার এবং উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরীতে সরকার ও পশ্চিমা খুচরো বিক্রেতাদের আরো অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে এবং করা উচিত৷ 

"বাংলাদেশ যদি আরেকটি রানা প্লাজা বিপর্যয় এড়াতে চায়, দেশটির উচিত আরো কার্যকরভাবে এর শ্রম আইন প্রয়োগ করা৷ এটি নিশ্চিত করতে হবে যেন শ্রমিকরা তাদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ নিয়ে কথা বলায় তাদের যে অধিকার রয়েছে, সেটি কোনো রকম প্রতিশোধ ও চাকুরিচ্যুত হওয়ার আশংকা না করেই নির্ভাবনায় প্রয়োগ করতে পারে"-হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এশীয় অঞ্চল উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন এমনটা বলে, যোগ করেছেন যে, "যেসব কারখানা ব্যবস্থাপক শ্রমিকদের আক্রমণ করে এবং তাদের ইউনিয়ন গঠনের অধিকার বঞ্চিত করে, বাংলাদেশ যদি তাদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনে, তাহলে সরকার ক্রমাগতভাবে আরেকটি বিপর্যয়ের ক্ষেত্রগুলোকেই উত্‍সাহিত করবে যা আগে হাজারো শ্রমিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল৷" 

"মাথা তুলে দাঁড়ায় যারা, ভোগান্তির শিকার সবচেয়ে বেশি তারাই": বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় শ্রমিক অধিকার- ৭৮ পৃষ্টার এই রিপোর্টটি তৈরী করা হয়েছে ৪৪টি পোশাক কারখানার ১৬০ জন শ্রমিকের সাক্ষাত্‍কারের ভিত্তিতে যাদের অধিকাংশই উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার খুচরো বিক্রেতাদের জন্য পোশাক তৈরী করেন৷ শ্রমিকরা মারধর, গালিগালাজ - ক্ষেত্রবিশেষে যা যৌন হয়রানির শামিল - অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করা, মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে বঞ্চিত করা, সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা বা সম্পূর্ণ না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ জানিয়েছেন৷ শ্রম আইনের সাম্প্রতিক সংস্কার সত্ত্বেও, যেসব শ্রমিক এই সব সমস্যা সমাধানে ইউনিয়ন গঠনে উদ্যোগী হয়েছেন, তারা নানা হুমকি, ভয়ভীতি, চাকুরিচু্যতি, কারখানা কর্তৃপক্ষ অথবা তৃতীয় পক্ষের হাতে মারধর-এর শিকার হয়েছেন৷ 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ সরকার, কারখানার মালিক ও পশ্চিমা খুচরো বিক্রেতাদের শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে আহবান জানাচ্ছে৷ কারখানা মালিক ও সুপারভাইজাররা শ্রমিক নেতাদের প্রায়ই বেআইনী লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন৷ এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে৷ 

রানা প্লাজায় কারখানা ব্যবস্থাপকরা কমপ্লেক্সের দেয়ালে ফাটল সত্ত্বেও ভবনটিতে শ্রমিকদের প্রবেশে বাধ্য করেছিল৷ ২০১২-এর ২৪ নভেম্বও, তাজরীন কারখানায় ১১২ জন শ্রমিক আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান৷ অগি্নসংকেত বেজে ওঠা সত্ত্বেও কারখানা ব্যবস্থাপকরা সেদিন শ্রমিকদের বের হয়ে আসতে দেননি৷ কারখানা দুটোর কোনোটিতেই শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এমন কোনো ইউনিয়ন ছিল না, যারা কারখানা ব্যবস্থাপকদের এই প্রাণঘাতী নির্দেশ ঠেকাতে পারতো৷ 

রানা প্লাজার ঘটনার পর শ্রম আইনের কিছু পরিবর্তন আসে যাতে ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে৷ ফলে নতুন কিছু ইউনিয়ন নিবন্ধিত হয়েছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনো কেবল শতকরা ১০ ভাগেরও কম কারখানায় ইউনিয়ন আছে৷ শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন তারা ক্রমাগতই কারাখানা ব্যবস্থাপকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন৷ কারখানা ব্যবস্থাপক, সুপারভাইজার অথবা তাদের ভাড়াটে গুন্ডাদের আক্রোশের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন৷ কয়েকটি কারখানায় যাঁরা ইউনিয়ন গঠনে উদ্যোগী হয়েছেন তাদের চাকুরিচু্যত করা হয়েছে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের দায়ে৷ কারখানা মালিক ও ব্যবস্থাপকরা এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন৷ বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ (ইএগঊঅ))-এর এক কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, "ইউনিয়ন নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ তারা মনে করে তাদের কাজ করতে হবে না, কিন্তু তারা পারিশ্রমিক পাবেন৷" 

কারখানার ভেতরেও শ্রমিকরা ক্রমাগত দুর্ব্যবহার ও বাজে কর্মপরিবেশের শিকার হচ্ছেন৷ যেমন শারীরিক ও মৌখিক নিগ্রহ, বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত কাজ, মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে বঞ্চিত করা, সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা অথবা সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা, টয়লেটে যাওয়ার বিরতি না নিতে চাপ প্রয়োগ, নোংরা, অস্বাস্থ্যকর খাবার পানি ইত্যাদি৷ পোশাক শ্রমিকদের সিংহভাগ হচ্ছেন নারী, অথচ সুপারভাইজার ও ব্যবস্থাপকদের অধিকাংশই পুরুষ৷ এর ফলে যেসব গালিগালাজ হয় তা অনেক সময় যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে৷ 

গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার ইউনিয়ন নেতা জানান, তিনি এবং অন্যরা যখন ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইউনিয়ন গঠন করতে উদো্যগ নেন, তখন তাদের নির্মমভাবে মারধর করা হয় এবং অসংখ্য শ্রমিককে চাকুরিচু্যত করা হয়৷ তিনি জানান তাকে গর্ভবতী অবস্থায় মারধর করা হয়, রাতে কাজ করতে বাধ্য করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত বকেয়া পাওনা না দিয়েই চাকুরিচু্যত করা হয়৷ এসবের একটাই কারণ - তিনি ইউনিয়ন সংগঠনে বিরত থাকতে রাজি হননি, "ফেব্রুয়ারিতে গর্ভবতী অবস্থায় আমাকে ধাতব দন্ড দিয়ে পেটানো হয়৷ আমাকে প্রথমে চেয়ারম্যানের কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়৷ এরপর নিয়ে যাওয়া হয় তৃতীয় তলার একটি কক্ষে, যা সাধারণত: কর্তৃপক্ষ ও পরিচালকরা ব্যবহার করেন৷ সেখানে স্থানীয় কিছু গুন্ডা আমাকে মারধর করে৷" 

"বাংলাদেশ সরকার ও খুচরো বিক্রেতাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, কারখানা মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যাতে শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানান৷ একই সঙ্গে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করে তাদেরও সরকারের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে"- বলেছেন রবার্টসন৷ তিনি আরো যোগ করেন, "এটি পরিষ্কার যে, শুধু কারখানার নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টিপাতই যথেষ্ট নয়৷ বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে সাম্প্রতিক বিপর্যয়সমূহ জানান দিচ্ছে, বিপজ্জনক কর্মপরিবেশের সঙ্গে শ্রমিক অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর ব্যর্থতাও এর সঙ্গে সম্পর্কিত৷ এসব অধিকারের মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন গঠনের অধিকার, যা শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সম্মিলিতভাবে দর কষাকষিতে সাহায্য করে৷" 

শ্রমিক অধিকার রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের৷ রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর সরকার কারখানা ও স্থাপনা পরিদর্শন অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে, আরো বেশি পরিদর্শক নিয়োগ করেছে৷ কারখানা ও স্থাপনা পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও অন্যান্য বাধ্যবাধকতা পর্যবেক্ষণ করে৷ কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখেছে যে, শ্রমক্ষেত্রে অনৈতিক কার্যকলাপ, যেমন ইউনিয়ন-বিরোধী বৈষম্য, ভয়-ভীতি, হয়রানি ইত্যাদি তদন্ত ও বিচারকার্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়কে শক্তিশালী করা এবং পরিদর্শকদের কঠোরভাবে আইন মেনে চলার জন্য আরো অনেক কিছুই করার রয়েছে৷ 

উদাহরণ হিসেবে ঢাকা-ভিত্তিক একটি কারখানার কথা বলা যায়৷ এতে কয়েকজন নারী শ্রমিকনেত্রী ইউনিয়নের জন্য নিবন্ধন ফর্ম জমা দেওয়ার পর নাটকীয়ভাবে তাদের প্রতি গালিগালাজ, হুমকি-ধমকি বেড়ে যায়৷ বাড়িয়ে দেওয়া হয় কাজের পরিমাণ৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে দেওয়া সাক্ষাত্‍কারেও এই ছয়জন জানিয়েছেন যে, নিবন্ধন করতে চাওয়ায় তাদের হয়রানি করা হয়েছে৷ এমনকি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একজন, "যখন আমি নিবন্ধন ফর্ম জমা দেই, স্থানীয় কয়েকজন গুন্ডা আমার বাড়িতে আসে এবং আমাকে হুমকি দেয়৷ তারা আমাকে বলে তুই যদি কারখানার আশেপাশে আসিস, আমরা তোর হাত-পা ভেঙ্গে দেবো৷" একইভাবে, ভিন্ন ভিন্ন কারখানার কয়েকজন শ্রমিক আমাদের জানিয়েছেন যে, ২০১৪ সালে বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন সদস্য ইউনিয়নের জন্য নিবন্ধন ফর্ম জমা দেওয়ার পর তাদের বাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ 

অনেক আন্তর্জাতিক পোশাক ব্র্যান্ড এবং খুচরো বিক্রেতার নিজস্ব কোম্পানি বিধিবিধান রয়েছে, যাতে বলা আছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই সংগঠন করার অধিকার ও সম্মিলিতভাবে দরকষাকষির স্বাধীনতাকে সম্মান জানাতে হবে৷ কারাখানা ব্যবস্থাপকরা বলেছেন তারা এসব বিধিবিধান মেনে চলেন৷ তা সত্ত্বেও অনেক শ্রমিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন, ক্রেতাদের হয়ে যেসব পরিদর্শক পরিদর্শনে আসেন, নিয়মিনীতির বেশ কিছু লংঘন প্রায়শ: তাদের নজরেই আসে না৷ অথবা তারা উপেক্ষা করেন৷ 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে কারখানা মালিক এবং যেসব কোম্পানি পোশাক কেনে, কারখানাগুলোতে মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধে তাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে৷ মানবাধিকার সম্পর্কিত ঝুঁকি সনাক্ত ও তা দূরীকরণে তাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে৷ যদি কোথাও এটি লংঘিত হয় তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে৷ জাতিসংঘের ব্যবসা এবং মানবাধিকার বিষয়ক মূলনীতিতে যেমন বলা আছে-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত, "তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে এমন কোথাও কার্যগত, পণ্য ও সেবা ইত্যাদি যে কোনো পর্যায়ে মানবাধিকার লংঘিত হলে তা প্রতিরোধ ও দূরীকরণে সচেষ্ট হওয়া, এসবে তাদের নিজেদের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও৷" 

বাংলাদেশ সংগঠন করার স্বাধীনতা ও সম্মিলিত দরকষাকষি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও (ওখঙ)) কনভেনশন নং ৮৭ ও ৯৮ অনুমোদন করেছে৷ অতএব এতে যেসব অধিকারগুলোর কথা বলা আছে সেসব মেনে চলা তার কর্তব্য৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের শ্রম আইন এর মানের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত পোশাক শ্রমিকদের হয়রানির প্রতিটি অভিযোগ, যেমন মারধর, হুমকি, গালিগালাজের কার্যকর ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং দায়ীদের শাস্তি দেওয়া৷ 

যেসব কোম্পানি বাংলাদেশের কারখানা থেকে পোশাক তৈরী করায় তাদের এই মুহুর্তে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এটা নিশ্চিত করার জন্য যে, তাদের পক্ষ থেকে অথবা তাদের সহযোগিতায় যেসব পরিদর্শন হয় সেগুলো যেন কার্যকরভাবে নিশ্চিত করে যে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিধিবিধান ও বাংলাদেশের শ্রম আইন সম্পূর্ণ ভাবে মেনে চলছে৷ আন্তর্জাতিক পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অথবা তাদের পক্ষ থেকে করা অডিট ও পরিদর্শন কার্যক্রমগুলো পর্যালোচনা করে দেখা উচিত৷ কারখানা ব্যবস্থাপকদের কিছু কর্মকান্ড শ্রমিককে তার সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অধিকার ও ইউনিয়ন-বিরোধী বৈষম্যমূলক আচরণ হতে সুরক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে৷ অডিট ও পরিদর্শন কার্যক্রমগুলো এমন হওয়া দরকার যাতে এগুলো এ ধরনের কর্মকান্ডকে কার্যকরভাবে সনাক্ত ও তদন্ত করতে পারে৷ আন্তর্জাতিক পোশাক প্রতিষ্ঠান ও খুচরো পোশাক বিক্রেতাকে তাদের সরবরাহ লাইনের স্বচ্ছতা সম্পর্কে একমত হতে হবে এবং বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে তারা পোশাক তৈরী করায় নিয়মিতভাবে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে৷ 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর প্রতিবেদন রানা প্লাজা ও তাজরীন পরবর্তী ঘটনাসমূহ পরীক্ষা করে দেখেছে৷ কারখানা পরিদর্শনে বর্তমানে অ্যাকর্ড অন ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেফটি, অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের সহায়তায় সরকারী ইন্সপেক্টরদের দ্বারা - এই তিনটি উদ্যোগ চালু আছে৷ 

কিন্তু রানা প্লাজা ধ্বংস ও তাজারীনের অগি্নকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত সহায়তায় আরো অনেক কিছুই করার আছে৷ এসব ঘটনায় যারা বেঁচে গিয়েছেন তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত যে পরিমান ক্ষতিপূরণ তারা পেয়েছেন সেটা চিকিত্‍সা ব্যয় ও জীবন-জীবিকার অন্য সব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়৷ একটি স্বাধীন কমিশন পরিমাপ করে দেখেছে যে, রানা প্লাজার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন৷ কিন্তু মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত মাত্র ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছে অথবা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে৷ ক্ষতিপূরণের দাবিতে রানা প্লাজার মতো চলমান কোনো উদ্যোগ না থাকায় তাজরীনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা আরো খারাপ৷ ২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান খুচরো বিক্রেতা সিএন্ডএ (ঈ্অ) তাজরীনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের "উপযুক্ত এবং ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ এর জন্য বড় একটি অর্থ" দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ এবং ঘটনার পরপর হংকং ভিত্তিক লি ফুয়াং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কিছু অর্থ দান করেছিল৷ কিন্তু অন্য কয়েকটি কোম্পানি কিছুই করেনি, এই কারণ দেখিয়ে যে, এই কারখানায় তাদের জন্য পোশাক তৈরী হচ্ছিল তাদের অজান্তে অথবা তাদের অনুমোদনের বাইরে৷ 

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে তৈরী পোশাক শিল্প থেকে৷ এবং মোট দেশজ উত্‍পাদনের ১০ শতাংশ এই শিল্পের অবদান৷ এতে কর্মংস্থান হয়েছে ৪ মিলিয়ন শ্রমিকের যার অধিকাংশই নারী৷ এই শিল্পে ছোটবড় প্রায় ৪,৫০০ কারখানা সম্পৃক্ত এবং বাংলাদেশে দারিদ্র দূরীকরণে এর বড় অবদান রয়েছে৷ কিন্তু দ্রুত বেড়ে ওঠার কারণে এবং ইমারত নির্মান বিধিবিধান ও শ্রম আইন প্রয়োগে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতায় অনেক অনিরাপদ ও দুর্বল কারখানা গড়ে উঠছে এবং শ্রমিক নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটছে৷ 

"বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের চলমান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ফলে খুচরো বিক্রেতা থেকে শুরু করে তাদের ভোক্তা, কারখানার মালিক ও সরকার সবাই লাভবান হচ্ছে"- বলে রবার্টসন যোগ করেছেন, "এটি কোনভাবেই শ্রমিকদের জীবনের বিনিময়ে হওয়া উচিত নয়, যারা উন্নত ভবিষ্যতের আশায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে৷" 

সাক্ষাত্‍কারের নির্বাচিত অংশ: 
"চারজন লোক আমাকে ধরে রেখে লাঠি দিয়ে পায়ের মধ্যে মারছিল আর দুজন লোক তাকে ধরে রেখে লোহার বার দিয়ে মারছিল৷ তাকে মাথায় ও পিঠে মারা হচ্ছিল৷ সে হাতে মারাত্মক ব্যথা পায় এবং তা থেকে রক্ত ঝরছিল৷ তার হাতের এক আঙ্গুলের হাড় ভেঙ্গে যায়৷ মাথায় ১৪টি সেলাই দিতে হয়৷ যখন তারা মীরাকে মারছিল, তখন বলছিল- 'তুই ইউনিয়ন করবি? তাইলে আমরা তোকে রক্ত দিয়ে গোসল করিয়ে দেব৷' 
- চট্টগ্রামের এক পোশাক শ্রমিক মিতু দত্ত তার ও তার স্ত্রীর ওপর হামলার বিবরণ দিচ্ছিলেন৷ 

"আমাদের কারখানায় শতকরা ৮০ ভাগ শ্রমিকই নারী৷ তারা বিভিন্ন সময় গর্ভধারণ করে, কিন্তু কারখানার ম্যানেজাররা মাতৃত্বকালীন ছুটি ও বোনাসের ব্যাপারে কিছুই করেন না৷ আমরা এর প্রতিবাদ করলে সুপারভাইজার আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন৷ 'তোরা যদি সবাই চু.....তে ব্যস্ত থাকিস তাইলে এই জায়গায় কাজ করতে এসেছিস কেন? যা, বেশ্যাপাড়ায় গিয়ে কাজ কর৷'" 
- বলেছেন ঢাকা ভিত্তিক একটি কারখানার এক নারী শ্রমিক৷ 

"তারা আমাকে মারতে শুরু করে, থাপ্পড় দেয়, কানের মধ্যে থাপ্পড় দেয় এবং ঘুষি মারে৷ বুকে ও এর আশেপাশে ঘুষি মারে৷ আমি পড়ে যাই এবং এরপর তারা আমাকে লাথি দিতে শুরু করে আর আমি চিত্‍কার করতে থাকি..." 
-জানাচ্ছিলেন ঢাকা ভিত্তিক একটি কারখানার একজন শ্রমিক৷ অন্য একজন শ্রমিক এর হয়ে কথা বলতে যাওয়া, যাকে কিনা তার প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা না দিয়েই চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাকে কিভাবে মারধর করা হয়েছিল, সেটি বলছিলেন তিনি৷ 

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country