Skip to main content

বাংলাদেশ: নিপীড়ন ও নিরাপত্তা বাহিনীর অপব্যবহার নির্বাচনকে অবমূল্যায়ন করে

মূল আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অপব্যবহারের স্বাধীন তদন্তের জন্য আহ্বান করা উচিত

২৮শে নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে, ঢাকায় একটি বিক্ষোভ চলাকালীন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকারদের একজন আত্মীয়।  © কাজী সালাহউদ্দিন রাজু/নুর ফোটো ভায়া এপি

(ব্যাংকক)-বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সরকারের সমালোচনা করার জন্য লোকেদের গ্রেপ্তার করে ভিন্নমত দমন করেছে এবং সাধারণ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলীয় সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন ও সহিংসতার মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের অঙ্গীকারকে ক্ষুন্ন করেছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৪-এ আজ এ কথা বলেছে। ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসে যে নির্বাচনের ওপরে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়ায় আস্থা না থাকার কারণে প্রধান বিরোধী দলগুলি নির্বাচন বর্জন করেছিল।

নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা ভয় ভীতি দেখানো শরণার্থী ক্যাম্প গুলিতেও একই রকমের প্রক্রিয়া অনুকরণ করা হয়েছে যেখানে ১ মিলিয়ন বা দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়ে গেছে, যারা নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেনি।

“বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের উচিত তাদের ব্যবসা বাণিজ্য অব্যাহত রাখার শর্ত হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর অপব্যবহারের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের জন্য জোর দেওয়া,” হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেছেন। “গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতার অভাব একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্কৃতিকে উস্কে দিচ্ছে যেখানে বাংলাদেশীরা তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, এমনকি তারা ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেও তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা নিহত বা নিখোঁজ হওয়ার ভয় পেয়ে থাকেন"

৭৪৪-পৃষ্ঠার ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৪-এর ৩৪ তম সংস্করণে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রায় ১০০টি দেশে মানবাধিকার অনুশীলন পর্যালোচনা করে থাকে। তার সূচনামূলক প্রবন্ধে, নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান বলেছেন যে ২০২৩ সালে শুধুমাত্র মানবাধিকার দমন এবং যুদ্ধকালীন নৃশংসতার জন্যই নয় বরং নির্বাচনী সরকারী ক্ষোভ এবং লেনদেনমূলক কূটনীতির জন্যও একটি ফলপ্রসূ বছর ছিল যা অধিকার প্রতিষ্ঠায় গভীর মূল্য বহন করে কিন্তু সেগুলো বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু তিনি বলেন, সেখানে আশার সংকেতও ছিল, যেখানে একটি ভিন্ন পথের সম্ভাবনা দেখায় এবং সরকারগুলোকে তাদের মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলো ধারাবাহিকভাবে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ৮,০০০ এরও বেশি নেতা ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে, যেন তাদেরকে প্রতিযোগিতায় অক্ষম করা যায় এবং বিরোধী নেতাদের অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা যায়- সে চেষ্টা করা হয়। অনেককেই "নিখোঁজ" বলে দাবী করা হয়েছিল যখন পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং শেষ পর্যন্ত আদালতে হাজির করার আগে তাদেরকে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে বেআইনিভাবে আটকে রেখে ছিল।

বাংলাদেশী মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, নিরাপত্তা বাহিনী ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ টিরও বেশি জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের উদ্বেগজনক বৃদ্ধিও লক্ষ্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন নামক একটি সশস্ত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসার পর জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

মানবাধিকার ডিফেন্ডারদের হয়রানি, নজরদারি এবং আটকের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে, ঢাকা-ভিত্তিক অধিকার বিষয়ক সংস্থা অধিকারের আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নির্বিচার এবং অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ সম্পর্কিত ২০১৩ সালের একটি প্রতিবেদনের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আপিলের বিচারাধীন অবস্থায় অক্টোবরে তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যদিও প্রসিকিউশন কঠোর সাজা চেয়েছে।

সাংবাদিকরা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য ক্রমবর্ধমান আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে আসছেন এবং প্রাক-নির্বাচন বিক্ষোভে কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০২৩, যা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) প্রতিস্থাপনের জন্য সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ প্রবর্তিত হয়েছিল, যা একই অবমাননাকর উপাদানগুলো বজায় রাখে। ডিএসএ-এর অধীনে শতাধিক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করতে এবং সরকারের সমালোচকদের শাস্তি দিতে ব্যবহৃত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া অব্যাহত রেখেছে, যদিও তারা একটি পাইলট প্রকল্পে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য চাপ দিচ্ছে যা জবরদস্তি ও প্রতারণা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির দ্বারা ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে কর্তৃপক্ষ কেবল সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই ব্যর্থ হয়নি, বরং জীবন জীবিকা, চলাচল এবং শিক্ষার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে প্ররোচিত করার জন্য ছক তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন প্রতি মাসে ১২ ইউএস ডলার থেকে কমিয়ে প্রতি মাসে জনপ্রতি মাত্র ৮ ডলার করেছে, যা চিকিৎসা ও সামাজিক ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিচ্ছিন্ন পলি দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরিত ৩০,০০০ রোহিঙ্গা খাদ্য ও ওষুধ সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধ এবং ক্যাম্প গুলোতে ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল পরিস্থিতি শত শত শরণার্থীকে অন্যত্র সুরক্ষার জন্য বিপজ্জনক নৌকার সাহায্যে যাত্রা শুরু করেছে।

“বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান করার আন্তর্জাতিক প্রশংসায় সফলতা হিসেবে বজায় রাখতে পারে না যেখানে একই সাথে ক্যাম্পগুলো বসবাসের অযোগ্য করে রাখে,” গাঙ্গুলী বলেছেন। “আন্তর্জাতিক অংশীদারদের জরুরীভাবে তহবিল বাড়াতে হবে, এবং বাংলাদেশ সরকারের উচিত তার সীমানার অভ্যন্তরে সকল শরণার্থীদের জন্য কাজ এবং শিক্ষার সুযোগ প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা।”

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country