(নিউইয়র্ক) – হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজকে বলেছে যে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত বাল্যবিবাহের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ ধার্য করা৷ সাম্প্রতিক মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ক্যাবিনেট মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করার চিন্তাভাবনা করছে৷ পুরুষদের বিবাহের ন্যূনতমবয়স ১৮ বছর রাখা হবে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, বয়সের এই পরিবর্তন সরকারের বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনার লক্ষ্যের বিপরীতে কাজ করবে৷ ২০১৪এর জুলাইতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে এনে একেবারে বন্ধ করার অঙ্গীকার করেন৷ তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কমবয়সী মেয়েদের বিবাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷ তাছাড়া তিনি আরো বলেন যে, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিবাহের ঘটনা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনবেন ৷ বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে সমস্ত বাল্যবিবাহ বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে৷ বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ রোধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয়৷ সরকার একই সাথে সামাজিক প্রথা পরিবর্তন ও বাল্যবিবাহ বন্ধে সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও দেয়৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারী অধিকার বিষয়ক ডাইরেক্টর লিসেল গার্নথোলটজ বলেন, “মেয়েদের বিয়ে করার ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর নির্ধারণ করলে তা হবে একটি মারাত্মক রকমের ভুল সিদ্ধান্ত৷” “বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার এমনিতেই অনেক৷ নতুন আইনটিতে ছেলেমেয়ের উভয়ের জন্য বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর ধার্য করা উচিত এবং খেয়াল রাখা উচিত যাতে শিশুদের স্বার্থ আইনের সকল বিধানের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে৷”
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে নাইজারের পরে বাল্যবিবাহ সবচেয়ে বেশী হয় বাংলাদেশে। ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে ৭৪% ভাগই বিবাহিত হয়েছেন ১৮ বছর বয়সের আগেই, যদিও নারীদের বিবাহের ন্যূনতম বিবাহের বৈধ বয়স হচ্ছে ১৮ বছর। লিঙ্গবৈষম্য নিষিদ্ধ করা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, নারী ও পুরুষদের বিয়ে করার ন্যুনতম বয়স সমান হওয়ার কথা এবং আর্ন্তজাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, তা হচ্ছে ১৮।
শিশু অধিকার সংক্রান্ত কনভেনশনে, যা বাংলাদেশ অনুমোদন করে ১৯৯০ সালে, শিশুর সংজ্ঞায় বলা আছে যে, ১৮ বছর বয়সের নীচে সকল ব্যক্তি শিশু হিসেবে বিবেচিত হবে৷ ২০০৯ সালে শিশু অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের কমিটি বাংলাদেশকে শিশু অধিকার সংক্রান্ত অধিকার কনভেনশন অনুযায়ী “১৮ বছরের নীচে যে কোনো ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলে”৷ বাংলাদেশে ২০১৩ সালে পাশকৃত শিশু অধিকার সংক্রান্ত নতুন চিলড্রেন্স আইনে, অপরাধের শিকার ও আইনি বিরোধে জড়িয়ে যাওয়া শিশুদের নিয়ে বিধান রয়েছে৷ সেই আইনে ও ছেলে ও মেয়েদের সাবালকত্বের বয়স ১৮ বছর ধার্য করা হয়েছে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, ১৯২৯ সালের চাইল্ড ম্যারেজ রেস্ট্রেইন্ট এক্ট (সিএমআরএ) ১৮ বছরের কম মেয়ে ও ২১ বছর বয়সী ছেলেদের বিয়ে দেওয়া অথবা বিয়ের ব্যবস্থা করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, তা খুব সীমিতক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে৷ আইনটির বহু বিধান পুরনো হওয়ায় তা আধুনিকায়নের প্রয়োজন আছে – যেমন ১৯৮৪ সালে আইনটি সংশোধিত হওয়ার পরও শিশুদের বিয়ে অথবা বিয়ের ব্যবস্থা করার জন্য ১০০০ টাকা ($১৩ মার্কিন ডলার) জরিমানার বিধান৷
গত বসন্তে বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাবিত সিএমআরএ-র খসড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোকে দেখানো হয়৷ কিন্তু পরবর্তী খসড়াগুলো আর জনসমক্ষে দেখানো হয়নি৷ অনেক সংখ্যক এক্টিভিস্ট বিয়ের বয়স কমানোর সরকারী প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে৷
সরকার ইউনিসেফ (UNICEF)-কে সঙ্গে নিয়ে বাল্য বিবাহ সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে ব্যবস্থা নিয়েছে৷ বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত এই কর্মপরিকল্পনা সরকারের পরবর্তী পাঁচ-বছর পরিকল্পনায় বাস্তবায়িত হওয়ার কথা আছে, যা আগামী বছর প্রণয়ন করা হবে৷
গার্নথোলটজ বলেন, “বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের প্রতিশ্রুত প্রচেষ্টাগুলো উত্সাহদায়ক৷ কিন্তু এখানে আক্রান্ত নারী এবং এক্টিভিস্ট সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে৷” “সরকারের উচিত প্রতিটি পদক্ষেপে সেইসব সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করা, কারণ নারী ও মেয়েদের রক্ষার ব্যাপারে তাদের অগাধ জ্ঞান রয়েছে৷ এভাবে নতুন আইন ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব হবে৷”
১৯৮৪ সালে সংশোধিত সিএমআরএ আদালতকে দায়িত্ব দিয়েছে স্থগিতাদেশ ও দণ্ডাদেশের মাধ্যমে বাল্যবিবাহকে প্রতিরোধ করা ও শাস্তি দেওয়া৷ জন্ম নিবন্ধন বৃদ্ধি, জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার, বৃত্তির মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিয়েছে৷ তারপরেও দেওয়ানী ও ফৌজদারি আইনে বাল্যবিবাহকে শাস্তিদান ও প্রতিরোধ করার বেলায় এখনো গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক রয়েছে৷ বর্তমান আইন আগের চেয়ে আরো কার্যকরভাবে প্রয়োগ করার বেলায় ও ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে৷
যেসব নারী ও মেয়ে (তার সাথে পুরুষ এবং ছেলেও) বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে, তাদেরকে সাহায্য করা ও বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে সিএমআরএ-তে কোনো বিধান নেই৷ সংশোধিত সিএমআরএ-তে প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলি থাকা উচিত যার মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থান পাওয়া উচিত৷ তার সাথে সেখানে বাধ্যতামূলক সার্বজনীন জন্মনিবন্ধন, সার্বজনীন বিবাহ নিবন্ধনের প্রক্রিয়া তৈরি ও তা বাস্তবায়ন, শিক্ষালাভের পথ প্রশস্ত ও মেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে ধরে রাখার বিধান রাখতে হবে৷ বাল্যবিবাহের শিকার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আইনি ও সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ ক্রিমিনাল জাস্টিস ও স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের বাল্যবিবাহ, তা প্রতিরোধ এবং আইনভঙ্গ হলে কি করতে হবে সে সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পেতে হবে৷
গার্নথোলটজ বলেন, “পৃথিবীর যেসব দেশ সফলভাবে বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে সেসব দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত৷” “বাংলাদেশী সরকারের এমন একটি আইন প্রণয়ন করা উচিত যেখানে মেয়েদের বিবাহে বিলম্ব, অযাচিত বিয়ের বিরোধিতা করতে ক্ষমতা প্রদান করা হবে এবং সমাজে শুধু একজন স্ত্রী হিসেবে নয় বরং তার সাথে একজন ব্যক্তি হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হবে৷”
বাংলাদেশের চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট এক্টের সংস্কার
নারী ও পুরুষ উভয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর করার সাথে সাথে, চাইল্ড ম্যারেজ রেস্ট্রেইন্ট এক্টের (সিএমআরএ) আরো অনেক জায়গায় সংশোধনের প্রয়োজন আছে৷ সিএমআরএ'র বিধানসমূহের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে শিশুদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে৷ আইনটি যাতে শিশু অথবা শিশুকালে বিবাহ করা একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে কোনভাবে ক্ষতি না করে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে৷
আইন সংশোধন কালে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবেঃ
- শিকার ব্যক্তিদের প্রতিরোধও সহযোগিতার সুযোগ বৃদ্ধিঃ সিএমআরএ এই মুহূর্তে যে অবস্থায় আছে সেখানে মনোযোগ দেয়া হয়েছে আদালত বাল্যবিবাহ রোধে এবং বাল্যবিবাহ ঘটলে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে৷ এগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার ব্যাখ্যার ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন আছে৷ তার সাথে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সামাজিক সহযোগিতা ও সমর্থন বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে৷ যেসব নারী ও মেয়েরা (পুরুষ ও ছেলেরা) বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন তাদেরকে সহযোগিতা করার দরকার আছে৷ সংশোধিত সিএমআরএ-তে প্রতিরোধের প্রচেষ্টা বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলি থাকা উচিত যার মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থান পাওয়া উচিত৷ তার সাথে সেখানে বাধ্যতামূলক সার্বজনীন জন্মনিবন্ধন, সার্বজনীন বিবাহ নিবন্ধনের প্রক্রিয়া তৈরি ও তা বাস্তবায়ন, শিক্ষালাভের পথ প্রশস্ত ও মেয়েদের শিক্ষা ক্ষেত্রে ধরে রাখার বিধান রাখতে হবে৷ বাল্যবিবাহের শিকার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আইনি ও সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ ক্রিমিনাল জাস্টিস ও স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের বাল্যবিবাহ, তা প্রতিরোধ এবং আইনভঙ্গ হলে কি করতে হবে সে সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পেতে হবে৷;
- বিবাহের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পূর্ণ সম্মতিদানের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সম্মতির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দেওয়াঃ বিবাহ শুধুমাত্র হবে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে, এমনটি নিশ্চিত করার সাথে সাথে সিএমআরএ-তে এমন বিধান থাকতে হবে যাতে একজন ব্যক্তি পূর্ণ এবং মুক্তভাবে বিবাহে সম্মতিদান করতে পারেন৷ যেসব ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক অবস্থা বহাল রাখে এবং পূর্ণ ও মুক্তভাবে সম্মতিদানের অধিকার খর্ব করে, সেসব আইনে সংশোধন আনতে হবে৷ সিএমআরএ-তে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ব্যক্তিদের সম্মতিদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে৷ এমন কোন বিধান যেখানে তাদের পরিবর্তে বিবাহের ব্যাপারে তাদের বাবা-মা সম্মতিদান করবেন, এমন বিধান বাতিল করতে হবে৷
- বিবাহ কালীন ধর্ষণকে গুরুত্ব সহকারে আমলে নিতে হবেঃ বিবাহকালীন ধর্ষণকে বাংলাদেশের আইনে অন্যান্য ধর্ষণের মতো দেখা হয় না৷ সিএমআরএ সংশোধন করা হলে তাতে এমন বিধান রাখতে হবে যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে যে বিবাহে জোরপূর্বক যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হওয়া একধরণের ধর্ষণ এবং অন্যান্য ধরণের ধর্ষণের ক্ষেত্রে যেমন তীব্র শাস্তির বিধান রয়েছে, বিবাহকালীন ধর্ষণের বেলাতেও এমন শাস্তির বিধান আইনে থাকবে৷
- আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন আইনি বিকল্প দিতে হবেঃ বাংলাদেশে ব্যক্তি সংক্রান্ত বিবাহ, বিচ্ছেদ, বিবাহ বিচ্ছেদ বিষয়ক আইন নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে৷ প্রত্যেকটি বৈষম্যমূলক ব্যক্তি সংক্রান্ত আইনকে সংশোধন করতে হবে যার মাধ্যমে নারী এবং মেয়েদের সমতা নিশ্চিত করা হবে এবং তা নির্যাতনকারী স্বামীদের কাছ থেকে তাদের রক্ষা করবে৷ মেয়ে এবং নারীরা যারা শিশুকালে বিবাহ করেছিল, তাদের মধ্যে যারা বর্তমান বিবাহ থেকে মুক্তি পেতে চায়, তাদের আইনি বিচ্ছেদ, বিবাহ রদ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের হেফাজত, ভরণপোষণ বৈবাহিক সম্পত্তি ভাগ-বন্টন এবং শিশুদের সহায়তার সাথে জড়িত সকল আইনি বিকল্প সম্পর্কে জানতে হবে৷ তাছাড়া তাদের আর্থিক ও অন্যান্য ধরণের বিশেষজ্ঞ সামাজিক সহায়তার দরকার আছে যা সংশোধিত সিএমআরএ নিশ্চিত করবে৷
- অভিযোগ দায়ের করার প্রক্রিয়া আরো সহজতর করাঃ সিএমআরএ'র বর্তমান বিধান অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে তা বন্ড বা ঋণপত্র পরিশোধ করে করতে হতে পারে৷ সংশোধিত সিএমআরএ-তে যে কোনো ব্যক্তির সেই সুযোগটি থাকবে যাতে তিনি কোন অর্থপ্রদান না করেন বা অন্য কোন বাধার সম্মুখীন না হয়েই বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত অভিযোগ আনতে পারেন৷ আইনে এমন বিধান থাকতে হবে যার ফলে কেউ যদি পুলিশ বা ফজদারি আদালতের নিকট অভিযোগ দায়ের করে তাহলে সাথে সাথে একটি তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে এবং প্রয়োজনে যাতে শাস্তিস্বরূপ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়৷ অভিযোগের উপর নজর রাখা, অভিযোগ কিভাবে মীমাংসাকৃত হচ্ছে তার উপর খেয়াল রাখা এবং প্রতিটি স্থানীয় অধিক্ষেত্রে অভিযোগ মীমাংসা সম্পর্কে জনসম্মুখে প্রতিবেদন দায়ের করবার জন্য একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে৷ এর মাধ্যমে পুলিশ এবং আদালত সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় আচরণ করতে পারবে৷
- বাল্যবিবাহকে চ্যালেঞ্জ করার সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবেঃ বর্তমান সিএমআরএ-তে একটি বাল্যবিবাহ ঘটলে বিবাহের ১ বছরের মধ্যে তাকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে৷ ১ বছরের এই সময়সীমা একেবারেই স্বেচ্ছাচারী ধরণের এবং এই বিধান মেয়েদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে একটি বাধা৷ মেয়েরা চাইলেই আদালতের নিকট যেতে পারে না৷ কিন্তু এমন একটি আইনি ব্যবস্থাই কাম্য যেখানে মেয়েরা সরকার এবং আদালতের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ামাত্রই সেই সাহায্যটি পাবে৷ নতুন আইনে আরো লম্বা সময়সীমার বিধান থাকা উচিত৷ তাতে বলা থাকবে যে, শুধুমাত্র একজন স্বামী/স্ত্রী যিনি বাল্যবিবাহে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনিই তার বিবাহকে বাতিল করার দাবি তোলার সুযোগ পাবেন এই মর্মে যে বিবাহটি বাল্যবিবাহ ছিল৷
- সেইসব কর্মকর্তাদের উপর শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে যারা আইনভঙ্গ করছেঃ বর্তমানে সিএমআরএ'র বিধানে বাল্যবিবাহের সাথে জড়িত স্বামী/স্ত্রী, পিতা মাতা, বিবাহের অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী যে কোনো ব্যক্তি সমান শাস্তি পাবেন৷ সিএমআরএ সংশোধনকালে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে পরিবর্তিত আইনে নিয়মানুযায়ী দায়ী ব্যক্তিদের (যেমন বিবাহপ্রক্রিয়া পরিচালনা ও নিবন্ধন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) জবাবদিহিতার আওতায় এনে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যায়৷ নতুন আইনে কঠোর বিধান রাখতে হবে যাতে করে উল্লেখিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা যায় এবং তারা যদি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে, বা দুর্নীতির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ না করে থাকে তাহলে তাদের শাস্তি দেওয়া যায়৷ পিতা মাতা এবং স্বামী/স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করলে তা মেয়েদের উপর যে সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের ভাবতে হবে৷
- আইনকে কার্যকরভাবে প্রয়োগ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করাঃ ১৯২৯ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বাল্যবিবাহ রোধে সিএমআরএ'র ব্যর্থহয়েছে পুরনো আইনের কারণে নয়, বরং প্রয়োগের অভাবে৷ ২০৪১ সালের মধ্যে সরকারের বাল্যবিবাহ বন্ধ করার লক্ষ্যকে সমর্থন করতে হলে নতুন আইনটিকে সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে হবে৷ নতুন আইন তৈরির সময় সরকারের পর্যালোচনা করতে হবে কোন কোন বাধার কারণে বর্তমান আইনের সঠিক প্রয়োগ ঘটেনি৷ বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আইনটিকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেনি এবং মামলা দায়ের করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি; বাল্যবিবাহের শিকার ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ ছিল না; জন্ম এবং বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ ছিল; বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে যে সকল সরকারী কর্মকর্তা জন্ম ও বিবাহ নিবন্ধন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিস্বরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না; বাল্যবিবাহে সঙ্ঘটনে স্থানীয় কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ; দুর্নীতি; অপর্যাপ্ত সামাজিক সচেতনতা; এবং মেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে ধরে রাখার জন্য প্রোগ্রামে ত্রুটি৷ সিএমআরএ-কে সংশোধন করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকারের উচিত নতুন আইনের বিধানের মাধ্যমে বাধাগুলোকে অতিক্রম করা এবং আইনকে প্রয়োগ করা৷