Skip to main content

বাংলাদেশ: মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একটি দুঃখজনক পশ্চাৎবর্তী অপসরণ

সহিংস বিক্ষোভ এবং প্রতিরোধযোগ্য শিল্প দুর্ঘটনায় ভরা একটি বছর

(লন্ডন) - হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (ঐঁসধহ জরমযঃং ডধঃপয) আজ প্রকাশিত এর ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০১৪ -এ বলেছে যে, বাংলাদেশ ২০১৩ সালে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পিছনের দিকে চলে গিয়েছে কারণ সরকার সুুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর কঠোর দমন-পীড়নে নিয়োজিত ছিল।

কর্তৃপক্ষগুলি প্রায়শঃ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস ও বেআইনী উপায়গুলি প্রয়োগ করেছে এবং এর সুুরক্ষা বাহিনীগুলির হাতে হওয়া বেআইনী মৃত্যুগুলির বিশ¡াসযোগ্য অভিযোগগুলির ক্ষেত্রে কোন তদন্ত শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে। শিল্প কারখানায় পরপর মৃত্যুর ঘটনার পরে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা করতে যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেকটাই কম ছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া ডিরেক্টর, ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, "এই বছরটি বাংলাদেশ -এর জন্য মর্মান্তিক ছিল, রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বিক্ষোভকারী, সুুরক্ষা কর্মী এবং পথচারীদের অকারণ মৃত্যুগুলি ঘটেছে।" তিনি আরো বলেন যে, "সরকার সুুরক্ষা বাহিনীর আইন লঙ্ঘনগুলির ক্ষেত্রে তদন্তের নির্দেশ দেয়নি এবং এজন্য হিংসার চক্রটিকে ভেঙ্গে ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং সরকার বিক্ষোভের ক্ষেত্রে তার অসহনীয়তা বাড়িয়ে চলেছে এবং বিরোধীদের ও সমালোচনাকে দমন করার জন্য চরম পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করার দিকে অগ্রসর হয়েছে।''

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট-এর ২৪তম সংস্করণ ৬৬৭ পৃষ্ঠার ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০১৪-তে ৯০টিরও বেশী দেশে মানবাধিকার সংক্রান্ত কর্মধারাগুলির পর্যালোচনা করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, সিরিয়া -তে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের হত্যার ঘটনাগুলি আতঙ্ক তৈরী করেছিল, কিন্তু বিশ¡নেতাদের কয়েকটি পদক্ষেপ তা থামিয়ে দিয়েছিল। "সুুরক্ষার দায়িত্ব'' নীতিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার পর তা আফ্রিকা-তে কিছু গণ নির্যাতনের ঘটনাকে প্রতিরোধ করেছে বলে মনে হয়েছে। মিশর  এবং অন্যান্য দেশগুলির অধিকাংশ ক্ষমতাসীনরা যে কোন বিরোধ ও সংখ্যালঘুর অধিকারের উপর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। এবং ইউএস নজরদারী কর্মসূচীগুলিকে এডওয়ার্ড  স্নোডেন-এর জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়ায় সারা বিশে¡ আলোড়ন উঠেছে।

ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশ -এ রাস্তায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয় এবং সারা বছর তা চলতে থাকে এবং এতে প্রায় ২০০ জন মারা যায় এবং হাজারেরও বেশী লোক আহত হয়। আগের বিক্ষোভগুলির সাথে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুন্যাল (আইসিটি)-এর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলির যোগসূত্র ছিল যা হল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঘটা অপরাধ ও অন্যান্য নির্যাতনগুলির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য গঠিত একটি দেশীয় আদালত।

প্রধান বিরোধী দলের জোট ৫ই জানুয়ারী ২০১৪ তারিখে নির্ধারিত নির্বাচন বয়কট করার পর রাস্তায় হিংসার ঘটনা চলতেই থাকে। যেখানে বিরোধী দলগুলি তাদের সমর্থকদেরকে হিংসা থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, অন্য পক্ষে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলি আইন-শৃঙখলা বজায় রাখার জন্য কখনো কখনো চরম পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছে।

ডিসে¤¦র মাসে বিরোধী দল জামাত-ই-ইসলামী -র একজন বর্ষীয়ান সদস্য আবদুল কাদের মোল¬া-র মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর বছরের শেষে আরো বিক্ষোভ ও সহিংসার ঘটনা ঘটে, প্রসঙ্গতঃ আন্তর্জাতিক আইনকে লঙ্ঘন করে আইসিটি -র আইনে কর্মপর¤পরাগত সংশোধনীগুলি অনুসরণ করে তাকে অভিযুক্ত করা হয় ও মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।

কর্তৃপক্ষগুলি নির্বিচারে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি -র কর্মীদের গ্রেফতার করে। "নাস্তিক'' ব¬গারদের এবং একজন প্রধান সংবাদপত্রের স¤পাদককেও গ্রেফতার করা হয়। আগস্টে, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান এবং নাসিরুদ্দিন ইলান -কে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৩-এর এপ্রিলে রানা প¬াজা ভবন ভেঙ্গে ১,১০০ জনেরও বেশী শ্রমিকের মৃত্যুর পর, প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও, সরকার পোষাক ও অন্যান্য শিল্পে কর্মীদের কাজের পরিবেশের উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে, বাংলাদেশী সংসদ জুলাই মাসে লেবার অ্যাক্ট বা শ্রম আইনে পরিবর্তনগুলি কার্যকর করে। সংশোধনীগুলির দ্বারা ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশনে কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়, কিন্তু এটি সম্মিলিত হওয়ার অধিকার কার্যকরীভাবে সুুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। সেপ্টে¤¦রে মাসে কারখানাগুলির যে নিয়মিত পরিদর্শনগুলি শুরু হওয়ার কথা ছিল, তা প্রশাসনিক বিল¤ে¦র জন্য স্থগিত রয়েছে।

সরকার ঢাকা-র হাজারীবাগ এলাকায় থাকা চামড়ার ট্যানারী শিল্পগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণ হয়নি এবং সরকারী পরিদর্শকরা এলাকার কারখানাগুলিতে পরিবেশ ও শ্রম আইনগুলি প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে, কর্তৃপক্ষগুলি অনেক শ্রম অধিকার রক্ষাকারী নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আনা অভিযোগগুলি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আদালতও লিমন হোসেন-এর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যাকে সুুরক্ষা বাহিনীগুলি ২০১১ সালে একটি অসতর্ক অভিযানে গুলি করে এবং আহত করে।

কিন্তু, যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং বাংলাদেশ রাইফেলস (এখন যার নাম বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস)-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বিচারের বিষয়গুলির এখনও সমাধান হয়নি এবং বিচারগুলিতে অনেক অভিযুক্তকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে, যে পদ্ধতিতে গুরুতর পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং দি ইকোনোমিস্ট  সাংবাদিকরা এবং টেলিভিশন শো-এর অতিথিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল স¤পর্কে সমালোচনামূলক বিবৃতি এবং এর উপর রিপোর্ট করার জন্য যুদ্ধাপরাধ বিচারের আদালতের মানহানির অভিযোগ তুলে কারণ দর্শানোর নির্দেশ জারী করা হয়েছে।

অ্যাডামস বলেন, "এই সরকার গণত›েত্রর প্রতিশ্রুতি এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু বরং তারা ক্রমশঃ সৈ¦রাচারী ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।'' তিনি আরো বলেন, "যে কোন ধরণের বিক্ষোভের উপর এই বছর ধরে যে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে তা মারাত্মক ছিল এবং দেশের মানবাধিকার রক্ষার সংকটকে তা আরো গভীরতর করেছে।''

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country