Skip to main content

বাংলাদেশঃ সাক্ষীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত কর

যুদ্ধাপরাধীদের ট্রাইব্যুনালের অংশগ্রহণকারীদের রক্ষা কর

(নিউ ইয়র্ক)- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজকে জানিয়েছে যে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের রক্ষা করার জন্য একটি প্রক্রিয়া দ্রুত চালু করা উচিত।প্রসেকিউশনের সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার ২০১৩ এর ১০ ডিসেম্বরে নিহত হন। তাকে তার বাসায় আক্রমণ করা হয়। জামায়াতে ইসলামি নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলায় হাওলাদার সাক্ষী ছিলেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয় ডাইরেক্টর ব্র্যাড এডামস বলেন, “যুদ্ধাপরাধী বিচারের কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা হচ্ছে।” “প্রসেকিউশনের সাক্ষীদের হত্যা করা হলে অতীত এবং ভবিষ্যতের সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে নাও আসতে পারে।”

হাওলাদারকে ফোনে অপরিচিতদের কাছ থেকে হুমকি পাচ্ছিলেন। একারণেই নিরাপত্তার জন্য তাকে পুলিশ দেয়া হয়। কিন্তু তার ছেলে জানায় যে তার বাবার জন্য নিয়োজিত পুলিশের আসা ছিল যে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে সেই খাওয়ার খরচ হাওলাদারের এক দিনের মজুরির চেয়ে বেশি।

হাওলাদারের ছেলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান, “আমার বাবা  গরি লোক। মাঝে মাঝে দিনে তিনি ১০০ টাকাও [১.২৮ মার্কিন ডলার] আয় করতে পারতেন না। তাই আমাদের বাসার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত পুলিশদের তিনি বলেন যাতে তারা ডিউটি দেয় শুধুমাত্র যখন তিনি বাইরে যাবেন।” এরপর থেকে হাওলাদার যখন কাজে যেতেন তখন তার সাথে পুলিশ থাকতো। কিন্তু বাসায় পুলিশ আর থাকতো না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে হাওলাদারের পরিবারের সদস্যরা জানায় যে প্রথমে আক্রমণকারী হাওলাদারের স্ত্রীকে দা দিয়ে কোপানোর চেষ্টা করে। এতে তার হাতে গভীর জখম হয়। এরপর হাওলাদারকে আক্রমণ করে। প্রথমে পুলিশ বিবৃতিতে দাবি করে যে সেটি একটি ডাকাতির ঘটনাটি। পরবর্তীতে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে আক্রমণকারীরা জামায়াতে ইসলামীর সদস্য। তদন্ত এখনো চলছে। ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামায়াত এই আক্রমণে সংশ্লিষ্ট থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

এডামস বলেন, “গ্রামে থাকা সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানের আগে ও পরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা খুবই জরুরি।… “রাষ্ট্র হাওলাদার ও তার পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সাক্ষীর যথার্থ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কখনোই সাক্ষীকে তার নিজের নিরাপত্তা ও তার পরিবারের ভরণ-পোষণের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বাধ্য করতে পারে না।”

জামায়াত নেতা আলি আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া রণজিত কুমার নাথ জানান যে ১৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তার দোকান এবং বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারা হয়। এতে তার দোকানের একাংশ পুড়ে যায়। বাড়িতে ছুড়ে মারা বোমাগুলো না ফাটায় সেখানে কোন ক্ষতি হয়নি। হাওলাদারের মত নাথও তার সাক্ষ্যদানের কারণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এ কথা কর্তৃপক্ষের কাছে জানালেও নিরাপত্তার জন্য তাকে কোন পুলিশ দেয়া হয়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অন্যান্য সাক্ষীদের প্রতি হুমকির কথাও জানতে পেরেছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বিচারপতি ফজলে কবির এবং বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বাসায় হামলার কথা প্রচার করেছে। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবতজীবন কারাদণ্ড দেয়া বেঞ্চটিতে এ দুজন বিচারপতি ছিলেন।

ডিসেম্বরের ১০ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি কবির হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনা সরাসরি উল্লেখ করে প্রসেকিউশনকে সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলতে গিয়ে বলেন, “একটি স্বাধীন দেশে একজন সাক্ষীকে বিচারালয়ে সাক্ষ্য দেয়ার কারণে মেরে ফেলা হবে, তা মেনে নেয়া যায় না।”

২০১০ সালে যখন বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন থেকেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষী রক্ষা প্রকল্প চালু করার কথা বলে আসছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে এমন একটি প্রকল্প চালু করা হলেও, তা এড-হক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিচালিত হওয়ার কারণে এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে যা হাওলাদারের মৃত্যুতে অবদান রাখে। কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ অফিস খুলতে পারে। এই অফিসের দায়িত্ব হবে আইসিসি সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মত মামলার আগে, মামলা চলাকালিন এবং মামলার পরে সাক্ষীদের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা।  তবে এই প্রকল্পকে কার্যকর করার জন্য তাকে পর্যাপ্ত সংস্থান করতে হবে। প্রকল্পে কর্মরত অফিসারদের ডিফেন্স অথবা প্রসেকিউশন বা বেঞ্চ কর্তৃক পাঠানো সাক্ষীদের নানা উদ্বেগ বোঝার জন্য ঠিক মত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

২০১১ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-কে সংশোধন করার পর আইনে সাক্ষীদের শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। প্রয়োজনে ইন-ক্যামেরা মামলা চালানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়। তবে আইনে একটি আনুষ্ঠানিক সাক্ষী রক্ষা প্রকল্পের বিধান রাখা হয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ হাওলাদারের হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন-স্বচ্ছ ও দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর মাঝে সাক্ষীদের হুমকি দানের ও আক্রমণের ঘটনা অন্যান্য সাক্ষীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এসব মামলার সব পক্ষকে মামলার সাথে জড়িত কারোর প্রতি সহিংস আচরণ না করার ব্যাপারে আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিশেষভাবে জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা যেন তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তে পুলিশকে সহায়তা করে। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলায় সহায়তাকারীদের শারীরিক বা মৌখিকভাবে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হতে তার নেতাকর্মীদের আহ্বান জানালেও জামায়াতকে দেখাতে হবে যে এই আহ্বান শুধুই কথার কথা না, প্রকৃতই মানা হচ্ছে।

“হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য বহু দিন ধরে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া দাবি করে আসছে”, বলেন এডামস। “কিন্তু দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়ার ফলে সাক্ষীরা সঙ্গত কারণে প্রতিশোধমূলক আক্রমণের আশঙ্কা করছে। তাই তারা সাক্ষ্য দিতেও অস্বীকার করছে। বিচারকদের উচিত তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে যেসব সাক্ষী তাদের কোর্টে সাক্ষ্য দিতে এসেছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই ক্ষমতাকে সক্রিয়ভাবে তাদের ব্যবহার করা দরকার।” 

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country