Skip to main content

বাংলাদেশঃ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত কর

মামলায় পক্ষপাতের অভিযোগ থাকায় অভিযুক্তের আপিলের অধিকার থাকা উচিত

(নিউ ইয়র্ক) - হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ জানিয়েছে যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামির নেতা আবদুল কাদের মোল্লার প্রাণদণ্ড অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত; কারণ তার মামলার ন্যায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মোল্লাকে তার শাস্তি ও প্রাণদণ্ডের বিপক্ষে আপিল করতে দেয়া উচিত।

এশিয়ার পরিচালক ব্র্যাড এডামস বলেন, “মৃত্যুদণ্ড অপরিবর্তনীয়, অধঃপতিত এবং নিষ্ঠুর শাস্তি হওয়ায় “হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কোন ক্ষেত্রেই তা সমর্থন করে না।” “মৃত্যুদণ্ড যেখানে ভূতাপেক্ষভাবে পাশ করা আইনের মাধ্যমে দেয়া হয় এবং যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি সর্বশেষ শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে না, সেখানে এমন শাস্তি প্রদানের নজির নিন্দনীয়।”

প্রাণদণ্ডের রায় ভূতাপেক্ষভাবে সংশোধন করা আইনের মাধ্যমে দেয়া হয় যা আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচারের মানদণ্ডের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হবার স্বাধীনতা যুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার করার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নামের দেশীয় আদালতে আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবতজীবন কারাদণ্ড দেয়। তার বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, যার মধ্যে মানবতার বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা দেখানো হয়। তিনি অভিযুক্ত হন।

জনসাধারণ ব্যাপকভাবে এই রায়ের প্রতিবাদ করায় সরকার ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে সংশোধন আনে যাতে করে প্রসেকিউশন প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে। মোল্লার মামলার আগ পর্যন্ত প্রসেকিউশন শুধুমাত্র তখনই আপিল করতে পারতো যখন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস দেয়া হতো। ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যা ও ধর্ষণের জন্য যাবদজীবন থেকে শাস্তি বৃদ্ধি করে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন্য সিভিল এন্ড পলিটিকাল রাইটস (আইসিসিপিআর)কে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অনুমোদন করেছে। সেই কভেন্যান্টে বলা আছে যে ফৌজদারি আইন ভূতাপেক্ষভাবে প্রয়োগ করা যাবে না যদি তা অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।

বাংলাদেশের সাধারণ আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করতে পারলেও, সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন যে মোল্লার এমন কোন অধিকার নেই এবং তিনি তার সব আইনি সুযোগ সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করে ফেলেছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে মোল্লা এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারে। আইসিসিপিআর-এ উল্লেখ আছে- ঊর্ধ্বতন ট্রাইব্যুনালে শাস্তি পুনর্বিবেচিত করানোর অধিকার সব অভিযুক্তের আছে।

“হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দীর্ঘদিন ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের বিচার দাবি করে আসছে। একই সাথে এটাও বলে আসছে যে সেই বিচার প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ বিচারিক মান বজায় রাখতে হবে যাতে ১৯৭১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার সঠিকভাবে পালন করা হয়।”- বলেন এডামস “ভূতাপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগ করে মোল্লাকে ফাঁসি দিয়ে এবং তাকে তার শাস্তির বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ না দিয়ে কাদের মোল্লার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।”

আইসিসিপিআর’কে ব্যাখ্যা করা ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কমিটি বলেছে যে, “যেই সব মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে সেই সব মামলায় ন্যায় বিচার যথাযথভাবে নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ” এবং একটি পক্ষপাতদুষ্ট বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে তা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলেই ভাবা হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে ভূতাপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগ করে শাস্তি দেয়া যাবে না উল্লেখ করা আছে। তবে পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করে বলা হয় যে যুদ্ধাপরাধীদের বেলায় সেই বিধান প্রযোজ্য হবে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বহু দিন ধরে এই সংশোধনকে বাতিল করার দাবি জানিয়ে আসছে কারণ তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

“মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ না দেয়া, তাও এমন একটি মামলায় যেখানে পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, সরকারের এমন একটি সংশোধনকে বাতিল করার প্রয়োজনীয়তাই তুলে ধরে।” – বলেন এডামস। “ক্ষতিগ্রস্তদের কথা মাথায় রেখে ন্যায়বিচারের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে বিচার প্রক্রিয়া যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।”

চিন্তার বিষয় হচ্ছে- যেই অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি, সেই অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মোল্লাকে ফাঁসি দেয়। 

“হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোন অভিযুক্তের দোষ বা নির্দোষিতা সম্পর্কে কোন অবস্থান নেয় না”, বলেন এডামস। “কিন্তু সত্যিকারের বিচার নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে- ভূতাপেক্ষ আইন দ্রুত প্রয়োগ করে একজন ব্যক্তিকে ফাঁসি দেয়া যাবে না।”

 

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country