Skip to main content

বাংলাদেশ

২০২৩এর ঘটনাসমূহ

২৮শে নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে, ঢাকায় একটি বিক্ষোভ চলাকালীন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকারদের একজন আত্মীয়। 

© কাজী সালাহউদ্দিন রাজু/নুর ফোটো ভায়া এপি

২০২৩ সালে,বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জাতীয় নির্বাচনের আগে দমন-পীড়নে কঠোর অবস্থান গ্রহন করে।

নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী দলীয় সদস্যদের গণগ্রেফতার করে আসছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শক্তি দিয়ে প্রতিবাদের জবাব দিয়েছেফাঁস হয়ে যাওয়া মিটিং মিনিটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গ্রেপ্তারগুলি বিরোধী দলীয় সদস্যদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য,যাতে করে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য হবেন তা নিশ্চিত করার জন্য সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটে বলে ধারণা করা হয়। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অনুমান করেছে যে তার ৫০ লক্ষ বা ৫ মিলিয়ন সদস্যের অর্ধেকই রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার সম্মুখীন হয়েছে।

১৪ই সেপ্টেম্বর,বিশিষ্ট মানবাধিকার ডিফেন্ডার এবং ঢাকা-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে ২০১৩ সালের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের প্রতিবেদনের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়াও সেপ্টেম্বরে,মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করতে এবং ভিন্নমতকে দমন করার জন্য ডিএসএ ব্যবহার করার জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হওয়ার পর সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ (ডিএসএ)কে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩(সিএসএ)দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছে। তবে যাইহোক, নতুন আইনটি ডিএসএ-এর অত্যাচারমূলক অনেক উপাদানকেই ধরে রেখেছে।

সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির দ্বারা ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং দাতাদের তহবিলের গুরুতর সংকটের মধ্যে দেশটি প্রায় দশ লক্ষ বা এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান করা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্প গুলিতে পরিস্থিতি ক্রমশ প্রতিকূল করে তুলেছে, এবং শত শত উদ্বাস্তু অন্যত্র সুরক্ষার জন্য বিপদজনক ভাবে নৌকায় যাত্রা শুরু করেছে।

জোরপূর্বক গুম,বিচারবহির্ভূত হত্যা,নির্যাতন এবং দায়মুক্তি

বাংলাদেশের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০০৯ সাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ৬০০ টিরও বেশি জোরপূর্বক গুম করেছে। যদিও কিছু লোককে পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল,আদালতে হাজির করা হয়েছিল,অথবা বলা হয়েছিল যে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময়ের সময় মারা গেছে,তবে এখনও প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে। সরকার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলপূর্বক গুমের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। পরিবর্তে,বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভুক্তভুগী পরিবার গুলোকে হয়রানি ও ভয় দেখানো অব্যাহত রেখেছে

২০২১ সালে কুখ্যাতভাবে অবমাননাকর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পরপরই,কিছু অপব্যবহার কিছু সময়ের জন্য কমে গিয়েছে। যাইহোক, জোরপূর্বক গুমসহ নিরাপত্তা বাহিনীর অপব্যবহার আবার শুরু হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের উদ্বেগজনক বৃদ্ধিও লক্ষ্য করেছেন।

বাংলাদেশে নির্যাতনের অভিযোগ খুব কমই তদন্ত করা হয় বা বিচার করা হয়। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এক দশক আগে বাংলাদেশের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইন পাস হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র একটি নির্যাতনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে

জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির প্রয়োজন অনুযায়ী তার সুপারিশ অনুসরণ করার জন্য বারবার অনুরোধ করা সত্যেও বাংলাদেশ তা উপেক্ষা করেছে। কমিটির সুপারিশগুলির মধ্যে সকল আটক স্থানের স্বাধীন পর্যবেক্ষণ এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্যাতন বা দুর্ব্যবহারের সকল অভিযোগের তদন্ত অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বাক স্বাধীনতা

নির্বাচনের আগে উন্মুক্ত রাজনৈতিক বিতর্কের শর্তকে ক্ষুণ্ন করে সরকারী নীতি ও অনুশীলনের অবাধে সমালোচনা করার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য সাংবাদিকরা ক্রমবর্ধমান আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে আসছেন।

নিউজরুমগুলি আরও নিজ থেকে সেন্সরশিপের দিকে পরিচালিত হচ্ছে যেখানে সরকারী কর্তৃপক্ষের দাবির মধ্য দিয়ে তারা খবরের প্রতিবেদনগুলো তাদের ওয়েবসাইট থেকে সংবাদ সরিয়ে ফেলছে, এবং বড় আউটলেটগুলি বিচারিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩০শে মার্চ,২০২৩-এ,কর্তৃপক্ষ শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করে,যিনি নেতৃস্থানীয় জাতীয় পত্রিকা প্রথম আলোর একজন সংবাদদাতা,এবগ তাকে বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনে "জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার" অভিযোগে অভিযুক্ত করে। পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমান এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও একই প্রতিবদনের কারনে ডিএসএ-এর অধীনে মামলা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে এক ভাষণে প্রথম আলোকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল গণতন্ত্র ও দেশের জনগণের ‘শত্রু’ বলে কটাক্ষ করেন। তার বক্তব্যের পর প্রথম আলো অফিস ভাঙচুর করা হয়।

শহিদুল আলম এবং রোজিনা ইসলামের মতো বিশিষ্ট সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট ডিএসএ-এর অধীনে অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে আসছেন।

নতুন সিএসএ তার আগের আইনটি ডিএসএ-এর অনেক অবমাননাকর ধারাকে ধরে রেখেছে,যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপরাধী ও সমালোচকদের জেলে নেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের ব্যাপক কর্তৃত্ব দেয়। উদাহরণস্বরূপ,এটি ধারা ২১ বজায় রাখে,যা "মুক্তিযুদ্ধ,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,জাতির পিতা,জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের প্রচার বা প্রচারণাকে" অপরাধে অভিযুক্ত করে।

বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠিতে,মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক,আইরিন খান উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে সিএসএ “অস্পষ্ট এবং অত্যধিক বিস্তৃত বিধান ধারণ করে যা বিভিন্ন ধরণের অভিব্যক্তি প্রকাশের বৈধ ধরণকে অপরাধে অভিযুক্ত করে তোলে। এই বিধানগুলি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে পুনরুত্পাদন করা হয়েছে, যদিও এগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনকে লঙ্ঘন করে,এছাড়াও সাংবাদিক,মানবাধিকার ডিফেন্ডার এবং স্কলারদের বিরুদ্ধে ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং যার ফলে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা,হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হামলাসহ গুরুতর নেতিবাচক মানবাধিকারের বিপর্যয় ঘটিয়েছে।”

শ্রম অধিকার

২৫শে জুন,বাংলাদেশে শ্রমিক সংগঠকদের বিরুদ্ধে টার্গেটেড হামলার ধরণ অনুসরণ করে,ইউনিয়ন নেতা শহিদুল ইসলামকে কারখানার শ্রমিকদের অবৈতনিক মজুরি নিশ্চিত করার জন্য একটি কারখানা পরিদর্শন করার পরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ইসলামের হত্যা সোশ্যাল অডিটস এবং সার্টিফিকেশনের অপর্যাপ্ততাকে নির্দেশ করে যা ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা কারখানায় কাজের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের ব্যর্থতাকে পর্যাপ্তভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করে এবং স্বাধীন ইউনিয়ন সংগঠিত করার চেষ্টাকারী শ্রমিকদের হুমকির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন এবং সুপারিশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সমষ্টিগত দর কষাকষির সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনও শ্রম আইন সংশোধন করতে পারেনি,যার মধ্যে পরিচালকদের দ্বারা ইউনিয়ন বিরোধী কৌশল এবং স্বাধীন ইউনিয়ন সংগঠকদের উপর হামলা বন্ধ করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নভেম্বরে,ব্যাপক বিক্ষোভের পর সরকার পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রতি মাসে ইউএস $৭৫ থেকে বাড়িয়ে ইউএস $১১৩ করেছে। বিক্ষোভকারীরা ২০৮ ডলারে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়ে আসছিল,যা এখনও বাংলাদেশ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ধারণা অনুযায়ী বসবাসযোগ্য মজুরির অনেক নিচে।

বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির উচ্চ প্রকোপ থাকা সত্ত্বেও,শ্রম আইন ২০০৬ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিকে সংজ্ঞায়িত বা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করে না। কর্তৃপক্ষ এখনও আইএলও ভায়োলেন্স অ্যান্ড হ্যারাসমেন্ট কনভেনশন (সি১৯০) অনুমোদন করতে পারেনি,যার জন্য কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা সহ সহিংসতা এবং হয়রানি বন্ধ করার জন্য ব্যাপক সুরক্ষা প্রয়োজন।

নারী ও মেয়েদের অধিকার

বাংলাদেশের নারীদের পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে সুরক্ষা বা সেবা পেতে বা বিচার পাওয়ার জন্য খুব কমই সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বিশ্বে বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ হারের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম,যেখানে উদ্বেগজনকভাবে ৫১ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগে বিয়ে করেছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাল্যবিবাহকে বৈধতা দেওয়া বিশ্বের একমাত্র দেশগুলির মধ্যে একটি হয়ে আপত্তিকর বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছে। নারী ও মেয়েরা সামান্য আশ্রয় ও সুরক্ষা নিয়ে ব্যাপক ভাবে যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়;বাংলাদেশে, অনুমান করা হয় যে পুলিশ কর্তৃক তদন্ত করা ধর্ষণের মামলার ১ শতাংশেরও কম দোষী সাব্যস্ত হয়।

সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টশন (যৌন অভিমুখীতা) এবং লিঙ্গ পরিচয়

যদিও বাংলাদেশ হিজড়াদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে,কর্তৃপক্ষ তাদের লিঙ্গ পরিচয়কে আইনত স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আপত্তিজনক মেডিকেল পরীক্ষা করতে বাধ্য করে। (দক্ষিণ এশিয়ায়,হিজড়া বলতে এমন ব্যক্তিদের জন্য একটি পরিচয়ের ক্যাটাগরিকে বোঝায় যারা পুরুষ হয়ে জন্ম গ্রহন করে থাকলেও তারা মেয়েলি লিঙ্গ পরিচয়ে বড় হয়ে থাকে।)

গত ১২ই আগস্ট তারিখে, ঢাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর আটজন হিজড়াকে নগ্ন হতে বাধ্য করে পুলিশ। এরপর পুলিশ তাদের গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করে বলে যে,আটককৃতরা হিজড়ার ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকে চাঁদাবাজি করার জন্য।

বাংলাদেশে সমলিঙ্গের আচরণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং এলজিবিটি লোকেরা পুলিশের কাছ থেকে সামান্য সুরক্ষা ছাড়াই হয়রানি ও সহিংসতার সম্মুখীন হয়ে আসছে।

প্রতিবন্ধী অধিকার

জুন মাসে,পুলিশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপর হামলা চালায় যারা তাদের সামাজিক কল্যাণ মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা (ইউএস $৭) থেকে ৫,০০০ টাকা (ইউএস $৪৫)করার জন্য প্রতিবাদ করছিল। প্রতিশ্রুতি দিয়েও মাসিক ভাতা বাড়ায়নি সরকার।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেখেছে যে ২০২২ সালের জুনে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অভূতপূর্ব বন্যার সময় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের সুরক্ষা,সেবা এবং অবকাঠামোগত সুযোগ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

শরনার্থী

বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী কর্তৃপক্ষের ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়ে আসছে। শরণার্থীরা শিক্ষা,জীবিকা এবং চলাচলের ক্ষেত্রে নতুন বাধা্র কথা বর্ণনা করেছে। ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা দোকান মালিকদের আবার হয়রানি ও উচ্ছেদ করা শুরু করেছে এবং তাদের দোকান ধ্বংস করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ৩০,০০০ রোহিঙ্গাকে বিচ্ছিন্ন পলি দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরিত করেছে,যেখানে তারা খাদ্য ও ওষুধের সংকট,বন্যা,জলবাহিত রোগ,ডুবে যাওয়া এবং ঘূর্ণিঝড় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আহত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অপরাধী চক্রের সহিংসতার মধ্যে,বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা দিতে, নিরাপত্তা বজায় রাখতে বা দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। শরণার্থীরা পুলিশ,আইনি এবং চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরের বাধার সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য ২০২৩ সালের জাতিসংঘের জয়েন্ট রেসপন্স প্লান দাতাদের অবদানে চাওয়া ইউএস $৮৭৬ মিলিয়নের এক তৃতীয়াংশেরও কম পেয়েছে। অর্থায়নের ঘাটতির কারণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ফেব্রুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন এক তৃতীয়াংশ কমিয়েছে,যা প্রতি মাসে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে প্রতি মাসে জনপ্রতি মাত্র ৮ ডলারে নেমে এসেছে। রোহিঙ্গা ও মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন যে রেশন কমানোর ফলে ইতিমধ্যেই চিকিৎসা ও সামাজিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ছে।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান; অপরদিকে ক্যাম্পে নিরাপত্তা,স্বাস্থ্য এবং জীবিকা নিশ্চিত করতে টেকসই সমাধান সরবরাহ করা, ক্যাম্পের বাইরে চলাফেরা করার স্বাধীনতা,উৎপাদনশীল স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং একীকরণের পূর্বশর্ত নিশ্চিত করতে অস্বীকার করে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে যে ৪০০,০০০ এরও বেশি শরণার্থী শিশুদের মধ্যে ৩০০,০০০ মিয়ানমার পাঠ্যক্রম শেখানো ক্লাসে নথিভুক্ত হয়েছে,কিন্তু তাদের শিক্ষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সরকার একটি পাইলট প্রকল্পের অধীনে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার জান্তার সাথে পদক্ষেপ শুরু করেছে যা জোরপূর্বক এবং প্রতারণা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে

মূল আন্তর্জাতিক অ্যাক্টরস

৪ই আগস্ট,২০২৩-এ,জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ,অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার জন্য সকল রাজনৈতিক দল,তাদের সমর্থক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। মার্চ মাসে,জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেছিলেন: "বাংলাদেশে,রাজনৈতিক সহিংসতার ক্রমবর্ধমান ঘটনা,রাজনৈতিক কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং এই বছরের নির্বাচনের জন্য মানবাধিকার ডিফেন্ডারস এবং মিডিয়া কর্মীদের ওপর চলমান হয়রানির জন্য আমি দুঃখিত।"

মে মাসে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি নতুন নীতি ঘোষণা করেছে যা "বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া" ক্ষুন্ন করে এমন যেকোনো বাংলাদেশির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করবে। ১৪ জন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যরা নির্বাচনের আগে বিরোধী দল এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর সহিংস দমন-পীড়ন নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

৩১শে আগস্ট, ২০২৩-এ, প্রাক্তন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন সহ ১৭০টিরও বেশি বিশ্ব নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক হয়রানি স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে চলমান গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।  

জুলাই মাসে, মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করেন, দেশের মানবাধিকার উন্নয়ন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা করেন এবং রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বয়স্ক ব্যক্তিদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সেপ্টেম্বর মাসে, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট “বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে অধিকারের মামলাটি নিয়ে,” অধিকারের নেতাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে এবং বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়ে একটি জরুরি প্রস্তাব পাস করে। জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা এবং মানবাধিকারের জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার অফিস অধিকারের নেতৃবৃন্দ সহ মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের ভয়ভীতি ও হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।