Skip to main content

বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ঢাকায় লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে নারী অধিকারকর্মী এবং অন্যান্যরা সংসদের বাইরে প্ল্যাকার্ড ধরে রাখেন, অক্টোবর ৯, ২০২০ 

© এপি ছবি/ মাহমুদ হোসেন অপু

বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বাক স্বাধীনতা, সমালোচকদের গ্রেপ্তার, এবং মিডিয়া সেন্সর করার বিষয়ে স্বৈরাচারীভাবে ক্র্যাকডাউন (কঠোর ব্যবস্থা) দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। অবমাননাকর ডিজিটাল সুরক্ষা আইন (ডিএসএ) এর আওতায় গ্রেপ্তার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। বলপূর্বক গুম হওয়া এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক অপব্যবহারের দায় থেকে মুক্তি অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার থেকে প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে প্রত্যাবর্তনে বাধ্য না করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং সমুদ্রপথে আটকে পড়া শরণার্থীদের গ্রহন করে নেয় যাদেরকে অন্যান্য সরকার বের করে দেয়। তবে, নীতিগুলি বছরের পর বছর ধরে শরণার্থীদের অধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সুরক্ষা মূল্যায়ন বা সুরক্ষা পরিদর্শন করার অনুরোধকে অস্বীকৃতি জানিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাসান চর দ্বীপে নির্বিচারে ৩০০ জনেরও বেশি শরণার্থীকে আটক করে রাখে।

প্রায় বছরব্যাপী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের (বন্ধ) পরে শরণার্থী শিবিরে ইন্টারনেট পুনরায় চালু করে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে মায়ানমারের আনুষ্ঠানিক পাঠ্যক্রমের অধীনে শরণার্থীদের পড়াশোনার অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।

একটি আদালত ২০১৩ সালের নির্যাতন আইনের আওতায় সর্বপ্রথম একজনকে দোষী সাব্যস্ত করার আদেশ দিয়েছিল, তখন এক্টিভিস্টরা (মানবাধিকার কর্মীরা) আশা করেছিলেন যে এর ফলে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের কয়েক ডজন নথিভুক্ত প্রতিবেদনের তদন্ত ও জবাবদিহিতার পথ সুগম হবে।

কারাগারগুলিতে ভিড় কমাতে এবং কোভিড -১৯ এর বিস্তার রোধে ছোটোখাটোঅপরাধে দোষী সাব্যস্ত প্রায় ৩০০০ লোককে আটক থেকে মুক্তি দেয় এবং প্রিট্রায়ালে (বিচার পূর্ববর্তী) আটক রাখা ২০ হাজারেরও বেশি লোককে কর্তৃপক্ষ জামিন দিয়েছে। তবে, ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করার জন্য যাদের আটক করে রাখা হয়েছিল তাদের এই মুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কিশোর আটক কেন্দ্রগুলি মহামারীর আশংকায় প্রায় ৫০০ শিশুকে জামিন দিয়েছে তবে, ইউনিসেফের মতে,  ক্ষুদ্র অপরাধের জন্য বিচারের বা রায়ের অপেক্ষায় থাকা হাজারের অধিক শিশুকে আটক করে রাখা হয়েছে।

মত প্রকাশ ও এ্যাসোসিয়েশনের স্বাধীনতা

কর্তৃপক্ষ ডিএসএকে সরকার এবং এর রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনাকারী কর্মী, সাংবাদিক এবং অন্যান্যদের অনির্দিষ্টকালের জন্য হয়রানি ও আটকের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করছিল। এমনকি ফেসবুকে একটি পোস্টে প্রধানমন্ত্রীকে “অপমান” করার অভিযোগে পুলিশ এই আইনের আওতায় একটি শিশুকেও গ্রেপ্তার করেছে।

মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনার, জাতিসংঘের স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বারবার ডিএসএ-কে মুক্ত বক্তব্য আটকে দেওয়ার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য সমালোচনা করেছেন। মে মাসে, বাংলাদেশ নাগরিক সমাজের ৩১১ জন প্রতিনিধি একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে সরকারকে ডিএসএর আওতায় রাখা ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

কর্তৃপক্ষ কোভিড -১৯ মহামারীকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে মুক্ত বক্তব্য এবং মিডিয়া সেন্সর করে এবং শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতায় হুমকি দেয়া সহ শিল্পী, ছাত্র, চিকিৎসক, রাজনৈতিক বিরোধী সদস্য এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সরকারের মহামারী পরিচালনার বিষয়ে কথা বলার জন্য

সরকার স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের কণ্ঠরোধ করে দিয়েছিল এবং কোভিড -১৯ এর চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) এবং সংস্থার অভাব নিয়ে যারা কথা বলেছিল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল। মে মাসে, সরকার "রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে" বা সরকারের "গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের" নিয়ে পোস্ট করা, "লাইক করা", শেয়ার করা বা এমন কোনও বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা থেকে সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল

সরকার নিউজ সাইটগুলোকে ব্লক করার মাধ্যমে সেন্সর করেছিল এবং লকডাউনের নিষেধাজ্ঞাগুলি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত জরুরি পরিষেবাগুলির তালিকা থেকে সংবাদমাধ্যমগুলিকে  বাদ দেয়া হয়েছে। আগস্টে, মন্ত্রিসভা ২০১৭ সালের জাতীয় অনলাইন মিডিয়া নীতিমালার একটি খসড়া সংশোধনীর অনুমোদন দিয়েছিল, যার মাধ্যমে সকল অনলাইন মিডিয়া আউটলেটগুলোকে তাদের অনলাইন মিডিয়া পোর্টালগুলি চালানোর জন্য সরকারী অনুমোদন গ্রহনের কথা বলা হয়।

সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে, যার মধ্যে কোভিড -১৯ সংক্রান্ত “গুজব” শনাক্ত করার জন্য দুটি ইউনিট তৈরি করে যার একটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং আরেকটি দেশের প্রধান সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ইউনিট র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এর অধীনে যেটি আইনের অপব্যবহার এবং উস্কানিমূলক শাসনের জন্য কুখ্যাত। বাস্তবে, এই উদ্যোগগুলি মূলত সেই ব্যক্তিদের নির্বিচারে গ্রেপ্তারের দিকে পরিচালিত করেছিল যারা মহামারী সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছিল বা সরকারি দলের সমালোচনা করেছিল।

গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড

সরকার তার গুম করার অবৈধ অনুশীলনকে অস্বীকার করে চলেছে এবং জাতিসংঘের জোরপূর্বক অথবা অনিচ্ছাকৃত গুম সংক্রান্ত কার্যনির্বাহী দল, জাতিসংঘের নির্যাতনের বিরুদ্ধে কমিটি, এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি কর্তৃক উত্থাপিত উদ্বেগকে উপেক্ষা করে আসছে। কর্তৃপক্ষ সমালোচকদের জোরপূর্বক গুম করে আসছে , এবং ক্ষতিগ্রস্থ ও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার অস্বীকার করে চলেছে।

শফিকুল ইসলাম কাজল নামে একজন সাংবাদিক, যাকে ৫৩ দিন জোরপূর্বক গুম করে রাখা হয়েছিল তাকে একটি মাঠে চোখ বাঁধা অবস্থায় “পাওয়া” যায়। তার নিখোঁজ হওয়ার তদন্ত না করে কর্তৃপক্ষ তাকে পৃথক তিনটি ডিএসএ মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল।

নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সাথে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর সিনহা রাশেদ খানকে পুলিশ যখন হত্যা করেছিল, তখন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিল, এবং "ক্রসফায়ার"- যা বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ‘বৈধতা’ দেয়ার জন্য বহুল ব্যবহৃত  একটি শব্দ – নাটকীয় ভাবে কমে যায়, যা ইঙ্গিত দেয় যে কর্তৃপক্ষ যখনই চাইবে এই সকল হত্যাকান্ডের একটি অবসান ঘটাতে পারে।

স্বাস্থ্যের অধিকার

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কোভিড -১৯ মহামারী দ্বারা আরোও আচ্ছন্ন হয়েছিল, যা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ওপর দৃষ্টি ফেলেছিল। কোভিড -১৯ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষণগুলি নিয়ে অনেক লোক প্রাথমিকভাবে হাসপাতালগুলি থেকে প্রত্যাখাত হয়ে ফেরত আসার কথা জানিয়েছিল। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা জানিয়েছেন যে নিরাপদে চিকিৎসা সরবরাহের জন্য তাদের পর্যাপ্ত পিপিই নেই। চিকিৎসকরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছিলেন যে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন এবং তারা আক্রান্ত বা ছোঁয়াচে রোগীদের জন্য সীমিতভাবে নিবিড় যত্ন সুবিধা সংরক্ষণ করতে পারায় চাপের মধ্যে ছিলেন। অপরিহার্য যৌন ও প্রজননমূলক স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকে নজরের বাইরে রাখায় নারী ও মেয়েদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে ছিল।

শরনার্থী

মিয়ানমার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য পরিস্থিতি তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চলেছে। যদিও, তাদের আগমন হালকা হওয়ার পর, সরকারের নীতিগুলি শিবিরগুলির আশেপাশে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা এবং প্রায় এক বছর ধরে ইন্টারনেটের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া সহ মৌলিক অধিকারগুলি লঙ্ঘন করেছে, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্য সুবিধা গ্রহনের অধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং সহায়তা কর্মীদের সক্ষমতায় বাধা দিয়েছে জরুরী প্রতিক্রিয়াগুলি সমন্বয় করা, যোগাযোগ সন্ধানের পরিচালনা এবং কোভিড -১৯ সম্পর্কিত সমালোচনামূলক তথ্য শেয়ার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে।

আগস্ট মাসে, সরকার মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের অধীনে রোহিঙ্গা শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য জানুয়ারিতে করা একটি প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করেছিল, তবে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১০,০০০ শিশুদের কাছে পৌঁছানোর প্রাথমিক "পাইলট" পরিকল্পনাটি এখনও কার্যকর করা হয়নি।

অন্য সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কয়েক মাস ধরে সমুদ্রে তাড়িয়ে দেওয়ার পরে বাংলাদেশ মে মাসে দুটি নৌকা উদ্ধার করেছিল। তবে, সরকার শরণার্থীদের ভাসান চরের প্রত্যন্ত পলি দ্বীপে পাঠিয়ে দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল, যদিও প্রাথমিকভাবে বলেছিল যে কোভিড -১৯ এর বিস্তার রোধে এটি কেবল সাময়িক কোয়ারাইনটাইন ছিল। তবে, ছয় মাসেরও বেশি পরে, সরকার শরণার্থীদের কক্সবাজারে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসা বা জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সুরক্ষা পরিদর্শন করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিল।

দ্বীপের শরণার্থীরা বর্ননা করেছিলেন যে তারা দ্বীপে আটক আছেন চলাফেরার স্বাধীনতা বা খাদ্য বা চিকিৎসা যত্নের পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার ছাড়াই; কেউ কেউ অভিযোগ করেছিলেন যে এই দ্বীপে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের মারধর ও দুর্ব্যবহার করেছে। কক্সবাজারের শিবিরগুলিতে নিরাপদে শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেল অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং মানবিক সহায়তাকারী (হিউম্যানিট্যারিয়ান) বিশেষজ্ঞের আহ্বান উপেক্ষা করেছিল।

শ্রম অধিকার

মহামারী চলাকালীন সময়ে ব্যাপক পরিমাণ অর্ডার বাতিল হওয়ার পরে, ১০ লক্ষ পোশাক শ্রমিক - বেশিরভাগ নারী – সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছে, যাদের অনেকেই তাদের পাওনা মজুরি পায়নি। খুচরা বিক্রেতারা উৎপাদকের দামে ছাড়ের দাবি করে সঙ্কটের সুযোগ নিয়েছিলেন, ফলে পর্যাপ্ত পিপিই, নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা বা অসুস্থতাজনিত ছুটি ছাড়াই শ্রমিকদের কম বেতনের কাজে ফিরে যেতে চাপ সৃষ্টি করেন।

পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের জন্য সরকার কোম্পানি গুলিকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভর্তুকি প্রদান করেছে। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে, কীভাবে শ্রমিকদের পূর্বের বেতনের অর্থ প্রদান করা হয়েছিল, বিশেষত মহিলাদের যাদের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ বা সুবিধা নাও থাকতে পারে।

নারী ও মেয়েদের অধিকার

নারী ও মেয়েরা ব্যাপক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে ৯৭৫ জন নারী ও মেয়ে ধর্ষিত হয়েছিল এবং ২৩৫ জন মহিলাকে তাদের স্বামী বা তার পরিবার হত্যা করেছেএনজিওগুলি কোভিড -১৯ এর বিস্তার বন্ধে দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন ঘরোয়া সহিংসতার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নিয়ে রিপোর্ট করেছে। এছাড়াও, ইতিমধ্যেই সীমিতভাবে থাকা নিরাপদ আশ্রয় বা অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থাসমূহের পাশাপাশি আইনি সহায়তায় উল্লেখযোগ্য বাঁধার এবং স্বল্পতার মুখোমুখি হয়েছেন বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীরা।

প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সরকার দীর্ঘ মেয়াদি যৌন হয়রানির আইন পাস করতে বা বৈষম্যমূলক ধর্ষণ আইনে সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। পরিবর্তে, সরকার বেশ কয়েকটি গণ-ধর্ষণের মামলা প্রকাশিত হওয়ার পরে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল তা ধর্ষণ করার জন্যে মৃত্যুদণ্ডের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি সংশোধনী দ্রুত অনুমোদন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিবাহ বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তবে বছরটিতে সামান্যই অর্থবহ অগ্রগতি হয়েছে। পরিবর্তে, একটি বিশেষ বিধান কার্যকর হয়েছিল যা তাদের বাবা-মা এবং আদালতের অনুমতিতে "বিশেষ ক্ষেত্রে" বাল্য বিবাহের অনুমতি দেয়।

যৌন দৃষ্টিভঙ্গি এবং লিঙ্গ পরিচয়

বাংলাদেশি দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় "প্রকৃতির আদেশের বিরুদ্ধে শারীরিক মিলন"-এর সাজা দিয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত।

যদিও সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিল, বাস্তবে হিজড়াদের পক্ষে স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সরকারী সেবাসমূহের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া কঠিন রয়েছে, কোভিড -১৯ মহামারী চলাকালীন এই সমস্যা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের নারী-সমকামী, পুরুষ-সমকামী, উভয় লিঙ্গের ব্যাক্তি এবং উকিলরা, পুলিশের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা না পেয়ে বিভিন্ন সহিংসতা ও হুমকির সম্মুখীন হয়ে আসছেন।

ইতিবাচক পদক্ষেপে,জাতীয় মানবাধিকার কমিশন হিজড়া জনগণ সহ প্রান্তিক গোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গ বিষয়কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হয়।

আদিবাসী অধিকার

আন্দোলনকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির (Peace Accord) সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে।

আদিবাসী অধিকার কর্মী মাইকেল চাকমা নিখোঁজের দু'বছর পরে,সরকার তার পরিবারের কাছ থেকে আবেদনের পাশাপাশি হাইকোর্ট, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কমিটি থেকে অনুসন্ধানকে উপেক্ষা করেছে। জানুয়ারিতে,পুলিশ শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের একটি আদেশের জবাব তারা খুব সাধারণভাবে দিয়েছিল যে "বাংলাদেশের কোনও কারাগারে মাইকেল চাকমা নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।"

প্রধান আন্তর্জাতিক অংশগ্রহনকারী

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যেটি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৬০ শতাংশের বেশি জায়গা দখল করে আছে, যদি বাংলাদেশ মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলি, বিশেষত শ্রমিক অধিকার অবজ্ঞা করা অব্যাহত রাখে তবে তারা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অগ্রাধিকার প্রত্যাহারের প্রস্তুতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেমার্চ মাসে ইউরোপীয় কমিশনের একজন ন্যায়পালের (ombudsman) প্রতিবেদনে শ্রমিক ইউনিয়গুলোর অভিযোগের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাণিজ্য অগ্রাধিকার প্রত্যাহার শুরু করার আহ্বান জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু বলেছে যে অন্য উপায় "উন্মুক্ত রয়েছে।" কোভিড -১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের পরেও বাণিজ্য অগ্রাধিকারের ধারাবাহিকতার জন্য আবেদন করেছিল, যখন আশা করা হয় যে এটি স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উন্নিত হবে এবং শূন্য শুল্ক সুবিধা হারাবে।

মার্চ মাসে, ইউ (EU) বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছিল, যার সমর্থনে এই ব্লকটি ওকালতি করেছিল।

বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ এবং অন্যদের দ্বারা বিশেষত ডিএসএ (DSA)-এর অধীনে বাকস্বাধীনতা এবং জোরপূর্বক গুম হওয়া ও হত্যার ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে ক্র্যাকডাউন বা কঠোর অবস্থা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশকে অগ্রাহ্য বা প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কমিটির তার অনুশীলনের পর্যালোচনাগুলির অনুরোধ করা ফলো-আপ রিপোর্ট জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।

প্রায় দু'মাস ধরে জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার পরে সাংবাদিক শফিকুল কাজলকে যখন সীমান্তে পাওয়া গিয়েছিল তখনও ভারত বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলতে ব্যর্থ হয়েছিল।

চীন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহি করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অবরুদ্ধ করেছিল এবং পরিবর্তে প্রত্যাবাসনের দিকে চাপ অব্যাহত না রেখে বরং ভাসান চর দ্বীপে শরণার্থীদের স্থানান্তরিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগকে সমর্থন জানায়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে নেয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কোভিড -১৯ মহামারীটির প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করতে বাংলাদেশকে মোট ৭৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরুরী ঋন অনুমোদন করেছে। সরকার ঋণ গ্রহণের ১২ মাসের মধ্যে আইএমএফের কাছে একটি নিরীক্ষা পর্যালোচনা এবং কোভিড -১৯ সম্পর্কিত সমস্ত ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি প্রকাশের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বব্যাংক তার কোভিড -১৯ জরুরী প্রতিক্রিয়া এবং মহামারী প্রস্তুতি প্রকল্পের জন্য এক মিলিয়ন ডলার দ্রুত ঋণ (fast track) সরবরাহ করেছে এবং অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্রকল্পের জন্য আরও ১.০৫ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কোভিড -১৯ মহামারীর প্রতিক্রিয়া হিসাবে ৫৬ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং ইউ (EU) ৩৮৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে।