Skip to main content

বাংলাদেশ: কোভিড-১৯-এ ঝুঁকিপূর্ণ কোয়ারিন্টনে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

ভাসান চরে নৌকায় আগত শরণার্থীরা সাইক্লোন, বন্যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে

বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের মাঝে ভাসান চর অথবা ভাসমান দ্বীপের তীরে অপেক্ষারত মানুষ, ডিসেম্বর ২০১৯  © ২০১৯ এপি ছবি / সালেহ নোমান

(নিউ ইয়র্ক) — হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বঙ্গোপসাগরের একটি অস্থিতিশীল পলি দ্বীপে পর্যাপ্ত সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ ছাড়াই ২৯জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সরিয়ে কোয়ারিন্টনে নিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে যে শিবিরগুলিতে কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাব রোধ করতে তারা দু'মাস ধরে সমুদ্রে ভেসে শরণার্থীদের ভাসান চরে সরিয়ে নিয়েছে

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গনমাধ্যমগুলোকে ২রা মে, ২০২০ তারিখে বলেন নতুন আগতরা জাতিগত রোহিঙ্গা যারা মালয়েশিয়া পৌঁছানো জন্য মিয়ানমার থেকে পালিয়েছিল। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পরিবারগুলোর সাথে সাক্ষাত্কারে পেয়েছে যে আটককৃতদের অন্তত সাতজন বাংলাদেশের শিবিরগুলো থেকে নিবন্ধিত শরণার্থী। মোমেন বলেছেন ভবিষ্যতে আসা সকল আগতদের ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে, যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে স্থানটি বসবাসের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে এবং সেখানে জাতিসংঘ বা সহায়তা সংস্থাগুলির দ্বারা প্রদত্ত মানবিক সহায়তার কোন সুযোগও নেই।

“কোভিড -১৯ এর বিস্তার রোধ করতে গিয়ে নৌকায় আগত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য যদিও বাংলাদেশ ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তবে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াই বিপদজনকভাবে বন্যা্য় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকাপূর্ণ দ্বীপে তাদের প্রেরণ করাটা সমাধানের জন্য অন্তরায়,” বলেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস। “যে কোন কোয়ারান্টিনে সহায়তা সংস্থাগুলোর প্রবেশের সুযোগ এবং ঝড় থেকে সুরক্ষা এবং মূল ভূখণ্ডে তাদের পরিবারের কাছে তাৎক্ষনিক প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।“

শতাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে পরিপূর্ণ বেশ কয়েকটি ট্রলার, মার্চ মাসে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল, তবে কমপক্ষে দু'টি ট্রলারকে বাধা দেওয়া হয়েছিল এবং তাজা খাবার ও পানি সরবরাহ করে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ১৫ ই এপ্রিল, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রায় ৪০০ জনকে নিয়ে একটি নৌকা গ্রহণ করে, এবং বলেছিল যে উদ্ধার হওয়ার আগেই ১০০ জনের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ধারনা করা হয়, অন্তত দুইটি নৌকা নিরুপায় অবস্থায় আরো প্রায় ৭০০জন শরণার্থী নিয়ে সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছিল।

২ মে ভোরে, ট্রলারগুলির মধ্যে একটি থেকে কমপক্ষে ৫০ জন রোহিঙ্গাকে তাদের পরিবার থেকে মুক্তিপণ পাবার পরে দালালরা ছোট ছোট নৌকায় স্থানান্তর করে এবং বাংলাদেশের উপকূলে নামিয়ে দেয়। অনেকে রোহিঙ্গাই শিবিরগুলোতে লুকিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল কিন্তু কর্তৃপক্ষ ২৯ জনকে আটক করেছিল।

ধারনা করা হচ্ছে আরও রোহিঙ্গা শরণার্থী শীঘ্রই বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে পরিবারগুলি বলেছে যে তারা পাচারকারীদের যাত্রার শুরুতে পরিশোধিত অর্থ ছাড়াও আরো ৩৫,০০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা (৪০০ মার্কিন ডলার থেকে ৭০০ মার্কিন ডলার) পর্যন্ত পরিশোধ করেছে, যাতে তাদের স্বজনদের নিরাপদে উপকূলে ফিরে আসা নিশ্চিত হয়।

কুতুপালং শিবিরের এক রোহিঙ্গা শরণার্থী জানান, তিনি পাচারকারীদের অর্থ প্রদানের পরে, তাঁর দুই মেয়েকে ট্রলার থেকে ২ মে বাংলাদেশ উপকূলে নিয়ে আসা হয়েছিল, তবে দু'জনকেই এখন ভাসান চরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। “আমি আমার মেয়েদের সেই দ্বীপে নিয়ে যাওয়ায় এখন দুশ্চিন্তায় আছি,” তিনি বলেছেন। “তারা আমাকে জানিয়েছিল যে তারা ভয় পাচ্ছে এটা ভেবে যে তারা আর ফিরে আসতে পারবে না। এটা সত্যিই বেদনাদায়ক।” তিনি বলেছেন যে তাদেরকে ভাসান চরে পাঠানোর আগে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তার সাথে যোগাযোগ করেনি: “আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল যে তাকে ভাসান চরের কিছু সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছে, ‘তোমার বাবা-মাকেও ভাসান চরে নিয়ে আসা হবে।‘ আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের কত টাকা দিতে হয়েছিল তা আমরা চিন্তা করি নি, তবে এখন তারা ভাসানচর থেকে ফিরে আসবে কিনা, বা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষও আমাদেরকে সেখানে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য করবে কিনা তা নিয়ে আমাদের অনিশ্চয়তা রয়েছে।”

অপর এক শরণার্থী জানায়, তার বোন শরণার্থী শিবির ছেড়ে যাবার ৫৪ দিন পর পাচারকারীরা তাকে ফেরত নিয়ে আসে, কিন্তু যখন সে তার বোনের সাথে সাক্ষাৎ করতে থানায় যায়, তাকে বলা হয় তার বোনকে “ইতোমধ্যে ভাসান চরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।“

মহামারীর সময়ে শরণার্থী শিবির “দূষিত” হতে দিতে চায়না বলে দাবি করে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ, কিন্তু তারা শরণার্থীদের ভাসান চরে পাঠানোর পূর্বে জতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে পরামর্শ করার সুযোগ প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআর- এর একজন প্রতিনিধি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানায় যে, শরনার্থী শিবিরগুলোর কাছেই “কক্সবাজারে নৌকায় করে আসা যেকোনো শরণার্থীর নিরাপদ কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে প্রস্তুত আছে তারা।“

কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তির মাধ্যমে স্থাপিত পরীক্ষাকরণ এবং কোইয়ারেন্টিন সেন্টার এর  সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এপ্রিল মাসে মানবিক সহায়তার কাজে নিয়জিত সংস্থাগুলো নৌকা থেকে উদ্ধারকৃত প্রায় ৪০০ শরনার্থীর কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করে। কোয়ারেন্টিন সমাপ্ত হবার পর এবং কোভিড-১৯ পরীক্ষায় নেতিবাচক [Negative] ফলাফল আসার পর, তাদেরকে তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে

বাংলাদেশের যথাযথ মেডিকেল এবং খাবার সহায়তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে জতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর সাথে পরামর্শ করা ব্যতীত শরনার্থীদের ভাসান চরে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো উচিত হবেনা, বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা শেষ হওয়া মাত্রই, শরনার্থীদের কক্সবাজারে তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া উচিত।

প্রতিবেশী মিয়ানমারের নৃশংসতা থেকে পালিয়ে এসে ৯০০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের দক্ষিণের শরণার্থী শিবিরগুলিতে বসবাস করছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের অন্যান্য সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও সম্মা্নের সাথে প্রত্যাবর্তনের কোনো পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করেনি।

বাংলাদেশ বলছে দেশটি আর কোনো রোহিঙ্গা শরনার্থী গ্রহণ করতে পারবেনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় আছে যেন আর কোন নৌকায় বাড়তি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। এই জাতীয় কর্তৃত্বপূর্ণ ঘোষণাগুলি [Pronouncements], দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকা নৌকাগুলি উদ্ধার, উদ্ধার অভিযানের সমন্বয় সাধন এবং সমুদ্রে জীবনের ঝুঁকিতে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের পিছনে ঠেলে না দেওয়ার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যবাধকতাগুলির পরিপন্থী।

দেশগুলোর উচিত তাদের সমুদ্র উপকূলে দূর্ভোগে থাকা নৌকাগুলোর অনুসন্ধান এবং উদ্ধার কাজে পরিষেবাসমূহের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা। দূর্ভোগে থাকা নৌকাগুলোর বিষয়ে জানামাত্র আঞ্চলিক সরকারগুলোর উচিত জীবন রক্ষার্থে কার্যকারী এবং সমন্বিত অনুসন্ধান ও উদ্ধার এলাকা নিশ্চিত করা। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে যে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে, সাগরে ভেসে থাকা শরণার্থীদের জন্য তা তীব্র উদ্বেগের কারন।

“রোহিঙ্গাদের এমন দুর্দশার জন্য মায়ানমারের নিন্দনীয় অপরাধ বাংলাদেশকে সেই সুযোগ দেয় না যে তারা শরনার্থীদের একটি দ্বীপে পাঠিয়ে দিবে যেখানে তাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে,” অ্যাডামস বলেছেন। “নৌকায় আগত নতুন শরনার্থীদের অধিকার এবং সুরক্ষা বজায় রেখে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর সমর্থন বাংলাদেশকে মহামারী থেকে শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।“

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country