Skip to main content

বাংলাদেশঃ কোম্পানিগুলো আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ, শ্রমিকস্বার্থ

রক্ষায় বিক্রেতাদের দায়িত্ব নেয়া উচিত

(নিউ ইয়র্ক) - হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে বাংলাদেশের এক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন নিহত হয়। সে দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা শ্রমকিরা শারীরিক আঘাতের অসুস্থতায়, আয় বন্ধ হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় কষ্টে আছে। যে সব ব্র্যান্ড তাজরিন ফ্যাশন্স থেকে পোশাক বানাতো তাদের যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনায় নিহত ও আহতদের ন্যায্য ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দানের ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগ্যানাইসেশনের উদ্যোগের সাথে জড়িত হওয়া দরকার।

সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে শ্রমিকরা এবং নিখোঁজ দুই শ্রমিকের সজনরা জানিয়েছে ২০১২-র ২৪ নভেম্বরের অগ্নিকান্ডের এক বছর পরও  পর তারা কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি। অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিকরা জানায়, চিকিৎসার খরচ মেটাতে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। এখন ভিক্ষা করছে জানায় এক শ্রমিকের স্বামী। অন্যরা বলেন, টাকার অভাবে তারা চিকিৎসা নিতে পারছে না, বেশিক্ষণ কাজও করতে পারছে না এবং প্রতিনিয়ত শারীরিক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার পরিচালক ব্র্যাড এডামস বলেন, “তাজরিন অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পরও ক্ষতিগ্রস্তরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের জন্য অপেক্ষা আছে।

“তাজরিন থেকে পোশাক নিতো এমন বহু বিক্রেতা গরিব শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা করেনি।” অগ্নিকাণ্ডের আগে তাজরিনের শ্রমিকরা ওয়াল মার্ট, সিয়ারস, কার্ল রেইকার এবং টেডি স্মিথের মতো খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক বিক্রেতার জন্য পোশাক তৈরি করে। প্রতিটি কোম্পানি পরে দাবি করে তাদের অজ্ঞাতে তাজরিনে তাদের পোশাক তৈরি করা হয়। এ কোম্পানিগুলোর সাথে তাজরিনের সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চেয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এদেরকে ও আরো ১৬টি কোম্পানিকে চিঠি দেয়। তারা কেউই জবাব দেয়নি।

সাক্ষাৎকারে শ্রমিকরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানায় যে অগ্নিকান্ডের দিন তাজরিন ফ্যাশন্সে একটি বড় অর্ডারের কাজ চলছিল। তারা জানায়, অগ্নিঘণ্টা বেজে ওঠার পরও ম্যানেজাররা শ্রমিকদের কাজ করতে আদেশ দেয়। কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা ভবনের কয়েকটি তলা থেকে বেরুনোর দরজায় তালা দিয়ে দেয়। সরবরাহের জন্য তৈরিপোশাকের স্টক রাখায় অন্যান্য বেরুনোর পথও বন্ধ ছিল।

জাতিসংঘের ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী কোম্পানির দায়িত্ব হচ্ছে তাদের “কার্যক্রমের সাথে জড়িত যেকোনো মানবাধিকার প্রতিকূল প্রভাবকে রোধ করা অথবা তার মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনা” এবং তা যদি বার বার ঘটতে থাকে, তাহলে তার প্রেক্ষিতে নিরাময়ে ব্যবস্থা নেয়া।

এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস এন্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপিয় বিক্রেতা সিএন্ডএ ও হংকং-এর লিএন্ডফাং অর্থবহ ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। ১০০,০০০ টাকা করে (১,২৬৭ মার্কিন ডলার) পাওয়া আঘাতপ্রাপ্ত শ্রমিকরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছে ওই টাকা পর্যাপ্ত নয় এবং কয়েক মাসেই তা ফুরিয়ে গেছে।

আগুন থেকে বাঁচতে কারখানা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে খুব আহত কয়েখজন শ্রমিক কোন টাকা পায়নি উল্লেখ করে বলেন, তারা এতটাই অসুস্থ্য যে বিজিএমইএ-এর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতেও যাওয়ার মতো সুযোগও নেই। অন্যরা বলেন, যে ক্ষতিপূরণ দানের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শরীরে আঘাত থাকা সত্যেও তাদের কথা বিশ্বাস করেনি।

আমস্টারডাম ভিত্তিক ক্লিইন ক্লোউথস ক্যাম্পেইন হিসাব করে দেখিয়েছে যে আহত এবং নিহতদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ অন্তত ৫.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়া উচিত এবং কারখানার মালিক, বিক্রেতা, বিজিএমইএ এবং সরকার তা ভাগাভাগি করে দিতে পারে। ২০১০ সালে একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২৯ নিহতের ঘটনার পর বাংলাদেশের ট্রেড ইউনিয়ন, গ্যাপসহ বিদেশী বিক্রেতারা এই ফরমুলাটি দিয়ে ক্ষতিপূরণের জিসে কষেছিল।

অগ্নিকাণ্ডের পর তাজরিন ফ্যাশন্সে প্রবেশ করে বাংলাদেশের অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা সিএন্ডএ (জার্মানি/ বেলজিয়াম), ডেল্টা এপারেল (যুক্তরাষ্ট্র), ডিকিস (যুক্তরাষ্ট্র), এডিনবোরো উয়ুলেন মিল (যুক্তরাজ্য), এল কর্তে ইংলেস (স্পেইন), সিন কম্বস/এনিস (যুক্তরাষ্ট্র), কার্ল রেইকার (জার্মানি), কিক (জার্মানি), লিএন্ডফাং (হংকং), পিয়াসা ইটালিয়া (ইটালি), সিয়ারস (যুক্তরাষ্ট্র), টেডি স্মিথ (ফ্রান্স), ওয়ালমার্ট (যুক্তরাষ্ট্র) এবং ডিসনিই’র (যুক্তরাষ্ট্র) লেইবেল, কাপড় ও কাগজপত্র খুঁজে পায়। আরো অনেক বিদেশী কোম্পানি ওসব পোশাকের বিভিন্ন কিছুর সরবরাকারী হিসেবে ব্র্যান্ডগুলোর পক্ষে অর্ডার দিয়েছিল।

ক্লিইন ক্লোউথস ক্যাম্পেইনের তথ্যে জানা যাচ্ছে কার্ল রেইকার তার এজেন্টের মাধ্যমে অর্থ সাহায্য দেয়ার দাবি করেছে। অন্যদিকে পিয়াজা ইটালিয়া ও এডিনবোরো ইয়ুলেন মিলস সামান্য অর্থসাহায্য করেছে। কিক, এল কর্তে ইংলেস এবং এনেইস জানিয়েছে তারাও সামান্য সাহায্য দেবে, তবে এখনও সাহায্যের পরিমাণ কত এবং কবে দেবে তা বলেনি তারা। ন্যায্য ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ স্কিম গঠনের লক্ষ্যে শুধু সিএন্ডএ এবং কার্ল রেইকার গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইসেশনের সভাপতিত্বে এক সভায় আলোচনায় অংশ নেয়।

ডিকিইস, সিয়ারস, ডিসনিই (৭), টেডি স্মিথ (৮) এবং ওয়াল মার্ট (৯) এখনও কোন ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এদেরকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা জন্য চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে।

ডিকিইস এক বিবৃতিতে বলেছে যে কারখানাটির সাথে কিছুদিন আগে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে। ২০১২ ৪ ডিসেম্বর এবিসি নিউজকে ডেল্টা এপারেলসের সিইও জানায়, তাদের পোশাক তৈরির জন্য তাজরিনকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। ২০১২ এর ২৯ নভেম্বর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে সিয়ারসকে উদ্ধৃত করে বলা হয় যে তাদের অনুমতি ছাড়াই এতদিন সেখানে পোশাক তৈরি করা হচ্ছিল। ২০১২র ডিসেম্বর ৪ টেডি স্মিথ ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরকে জানায়, এক সরবরাহকারী তাকে না জানিয়েই তাজরিনের কারখানায় অর্ডার পাঠিয়েছিল। ২০১২র ডিসেম্বর ২১ ডিসনিই জানায় যে তাজরিনে তাদের যে সয়েটশার্টের যেইসব বাকসগুলো পাওয়া গিয়েছিল সেগুলো তাজরিনে তৈরি নয়, এবং তাদের অনুমতি ছাড়াই সেখানে সেগুলো গুদামজাত করা হয়েছিল মাত্র।

বাংলাদেশের অধিকারকর্মীরা অগ্নিকাণ্ডের পর পর তাজরিনে কিছু কাগজপত্রে প্রমাণ পায় ওয়াল মার্ট পরোক্ষভাবে তাজরিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল। যদিও তাদের পরিদর্শকরা সেখানে অনেকগুলো নিরাপত্তা শর্ত লঙ্ঘণের প্রমাণ পাওয়ায় একবছর আগেই ওয়াল মার্ট তাজরিনের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করে। প্রাপ্তকাগজগুলোর তথ্য অনুযায়ী আগুন লাগার আগের ১২ মাসে ওয়ালমার্টের মধ্যস্ততাকারীরার তাজরিনে অন্তত ছয়টি অর্ডার দিয়েছিল। কারখানায় প্রাপ্ত কাপড় ও কাগজপত্রের তথ্যে জানা যায় অগ্নিকাণ্ডের সময় তাজরিনে ওয়াল মার্টের অন্তত দুটো অর্ডারের কাজ করছিল। দুর্ঘটনার দুই দিন পর ওয়াল মার্ট এক বিবৃতিতে বলে যে তাজরিনের ‘ওয়াল্মার্টের পোশাক তৈরি অনুমোদন ছিল না’ এবং অনুমতি ছাড়াই এবং সরাসরি আমাদের নীতি লঙ্ঘণ করে এক সরবরাহকারী সেখানে সাব-কনট্রাক্ট দিয়েছিল।”

গুরুত্বপূর্ণ এক জিজ্ঞাসা হচ্ছে দুর্ঘটনার আগে তাজরিনে অগ্নিকান্ডের সম্ভাবনার বিষয়ে ওয়াল্মার্ট অবগত ছিল কিনা। ২০১১র ডিসেম্বরে ওয়াল মার্টের সরবরাহকারী কেনেডিয়ান কোম্পানি এনটিডি এপারেল ইঙ্ক, কারখানা পরিদর্শন করে দেখতে পায় তাজরিন ওয়াল মার্টের নিরাপত্তা মানদণ্ড লঙ্ঘণ করেছে। পরিদর্শক জানিয়েছে, ১,৬০০ শ্রমিকের এবং বার্ষিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কাজ করা এই কারখানায় ‘অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র অপর্যাপ্ত/অপ্রাপ্য’, “প্রস্থানের অকার্যকর পরিকল্পনা” এবং “আংশিকভাবে প্রস্থানের দরজা, পথ ও সিঁড়ি অবরুদ্ধ।”

১৯ নভেম্বর লেখা এক চিঠিতে (৯) হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ওয়াল মার্টের কাছে জানতে চায় অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও তার সরবরাহকারী কীভাবে তাজরিনে অর্ডার দেয়, যদি এটি তাদের অননুমদিত কারখানা হয়, এ সিদ্ধান্তের কথা তাদের জানানো হয়েছিল কিনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে তাজরিনের সঙ্গে ওয়াল মার্ট কাজ করেছিল কিনা, এবং ওয়াল মার্ট অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি আছে কিনা। ওয়ালমার্ট কোন জবাব দেয়নি।

আগস্টে আল জাজিরা ওয়াল্মার্টকে ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত প্রশ্ন করলে, তারা জানায় যে ওয়াল্মার্ট “বাংলাদেশের তৈরিপোশাক ও বস্ত্রশিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় এবং আগের থেকেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সক্রিয় কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করেছে।”

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ওয়াল্মার্টের সাপ্লাইয়ার, যেমন এমেরেলা অফ ক্যানাডা লিমিটেড (১০), ইন্টারন্যাশনাল ডাইরেক্ট গ্রুপ (১১), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টিমেইটস (১২), আইটি এপারেলস হংকং লিমিটেড (১৩), এনটিডি এপারেল ইঙ্ক (১৪) ও টপ্সন ডাউন্স-এর (১৫) কাছে চিঠি দিয়ে তাজরিনের সাথে তাদের সম্পর্কের কথা এবং তারা ক্ষতিপূরণ তহবিলে অর্থ দান করবে কিনা জানতে চায়।

“অর্ডার-এর পরিমাণের কথা মাথায় রাখলে বোঝা যায় যে ওয়াল্মার্ট যদি কোথায় তার কাপড় তৈরি হচ্ছে সে বিষয়ে পর্যাপ্তভাবে খেয়াল রাখতো তাহলে তার নিঃসন্দেহে জানার কথা যে তাজরিন তার কাপড় সাপ্লাই দিচ্ছিল” - এডামস বলেন।

তাজরিন অগ্নিকাণ্ড এবং ১১০০ শ্রমিকের জীবন কেড়ে নেয়া রানা প্লাজা ভবন ধসের পর জেগে উঠে ওয়ালমার্ট এবং অন্যান্য বিদেশি বিক্রেতারা বাংলাদেশের কারখানার অগ্নির ও ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির অঙ্গীকার করে। সম্প্রতি তারা কারখানা পরিদর্শনের এক যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং প্রথমবারের মতো তাদের পোশাক সরবরাহকারীদের কারখানা সম্পর্কিত কিছু তথ্য প্রকাশ করে। অবশ্য কোম্পানিগুলো সাপ্লাই-প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য কারখানা যেমন সাব-কনট্রাক্টর বা টেক্সটাইল মিলসকে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেনি। এদের মধ্যে আসওয়াদ মিলস-এ অক্টোবরে আগুনে সাতজন চাকুরে মারা যায়।

ওয়াল্মার্ট, সিয়ারস এবং অন্যান্য বিক্রেতারা রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতেও রাজি হয়নি।

এডামস বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তকে ও তাদের পরিবারকে ওয়াল্মার্ট এবং অন্যান্য কোম্পানিদের সময়োচিত পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া প্রয়োজন।

“এক দিকে ক্ষতিগ্রস্তসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা অনাবশ্যকভাবে কষ্ট পাচ্ছে আর অন্যদিকে কোম্পানিগুলো বালুতে মাথা গুঁজিয়ে রেখেছে।”

অগ্নিকান্ডের পর সরকারি তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারে যে কারখানাটি অগ্নি নিরাপত্তা সম্পর্কিত বাংলঅদেশের মানদণ্ড বজায় রাখেনি। ভবনের মালিকের দাবি নয়তলা ভবনটি নিরাপদ ছিল - যদিও সেখানে কোন অগ্নিকাণ্ডের সময় বেরিয়ে আসার পথ ছিল না এবং মালিকের মাত্র তিনতলা ভবন নির্মাণ করার অনুমোদন ছিল। অগ্নিকান্ড মোকাবেলায় কারখানাটির পর্যাপ্ত যন্ত্র এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছিল না। একজন শ্রমিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানায় যে অগ্নিকাণ্ড রক্ষায় নিয়মিত অনুশীলনগুলো অবাস্তব ছিল কারণ সেগুলো দুপুরের খাবার বিরতিতে করানো হতো যখন সবাই এমনিতেই বাইরে থাকত। আরেকজন বলেন যে পরিদর্শনের সময়ের ব্যাপারে কারখানার স্টাফদের আগের থেকেই জানিয়ে রাখা হতো যাতে করে পরিদর্শকরা আসলে সবকিছু ঠিকঠাক দেখানো যায়।

সরকারি তদন্ত কর্মকর্তা জানায় যে মালিক দেলোয়ার হোসেন সহ আরো নয়জন মধ্যমসারির ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে মামলা করা উচিত। ২০১৩ সালের নভেম্বরে পুলিশ জানায় যে তাদের নিজস্ব তদন্ত শেষ না হওয়ায় তা তখন পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। এপ্রিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের “নিষ্ক্রিয়তাকে” সমালোচনা করে এবং দেলোয়ার হোসেনের গ্রেফতারের দাবীতে অধিকারকর্মীরা ঢাকার হাইকোর্টে মামলা করে। ২০১৩ এর ২৪ নভেম্বরে হাইকোর্ট সরকারকে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করার এবং নিখোঁজ শ্রমিকদের যাদের পরিচয় সম্প্রতি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা গেছে তাদেরকেও ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়।

“যথাযথ তদারকি এবং পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো” - এডামস বলেন। “নিরাপত্তহীন অবস্থায় সস্তা শ্রম প্রদানের কারণেই মানুষ মরছে ও আহত হচ্ছে এই সত্য পশ্চিমা কোম্পানিগুলো আর এড়িয়ে যেতে পারবে না।”

আহত শ্রমিক যারা ক্ষতিপূরণ পায়নি, তাদের বিবৃতিঃ

“যখন আগুন ধরে আমি তখন চার তলায় ছিলাম। পাশের দোতলা ভবনের ছাদে আমি লাফ দেই। আমি মাথায়, শরীরের পাশে এবং পায়ে ব্যথা পাই। এই আঘাতের কারণে আমি আর সেলাই মেশিন চালাতে পারবো না। আমার তীব্র মাথা ব্যথা হয়। আঘাতের জন্য আমার শরীরে অস্ত্রপচার করতে হয় এবং সুস্থ হতে আমি আমার গ্রামে যাই। আমি কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমি চার মাস গ্রামে ছিলাম। কারখানায় যখন ফিরে আসি মালিক আমাকে জানায় যে আমি অনেক দেরি করে ফেলেছি।” - রোকেয়া বেগম (২৬), সুইং অপারেটর।

“যখন আগুন ধরে তখন আমি পাঁচ তলায় ছিলাম। গেট খুলে দিতে বললে অফিসার তা করতে রাজি হয়নি। তাই আমরা জানাল ভেঙ্গে ফেলি এবং লাফ দেই। আমার হাত কেটে যায়। আমি যখন পরে যাই একটি লোহার রড আমার পায়ের এক দিক দিয়ে ঢুকে আরেক দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। আমার শরীরের অংশবিশেষ পুড়ে যায়। আমার তিনজন আত্মীয় মারা যায়। হাসপাতাল ও বাসায় আমার চিকিৎসা হয়। শরীর পুড়ে যাওয়ার কারণে আমি তিন মাস কাপড় পরতে পারতাম না। আমার পরিবার আমাকে আমার গ্রামে নিয়ে যায়। যারা মারা গেছে তাদের লাশ গ্রামে নিয়ে আসে। তিন মাস পরে ফিরে আসলে বিজিএমইএ আমাকে ক্ষতিপূরণ দেয়নি। আমাকে সাহায্য করতে আমার স্বামী ঘরের চালের টিনসহ সবকিছুই বিক্রি করে দিয়েছিল।তিনি বাজারে টাকার জন্য ভিক্ষা করেছে। আমার ছেলেরা টাকা ধার নিয়েছে। আমার কাছে মেডিকালের সব কাগজপত্র আছে কিন্তু বিজিএমইএ জানিয়েছে তারা ক্ষতিপূরণ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।” - আঞ্জু বেগম (৪৫), ক্লিনার

“সেদিন চালানের তারিখ ছিল। তাই আমরা যখন কারখানায় প্রবেশ করি ম্যানেজাররা বলেন ‘চালান আজকের মধ্যে শেষ করতে হবে। কাজ শেষ না করা পর্যন্ত ঘরে ফেরা যাবে না।’ তাই রাত আটটা পর্যন্ত কেউ বাসায় ফিরতে পারেনি। আমাদের উপর অনেক চাপ ছিল। অগ্নি প্রশিক্ষণ অনুযায়ী সিঁড়ি দিয়ে আমাদের বেরুনো শেখানো হয়েছিল। কিন্তু চালানে দিন থাকায় সিঁড়ির পথে অনেক কিছু রাখায় তা আটকে গেছিল। ম্যানেজার বলেন, ‘আতঙ্কিত হইয়ো না’। কিন্তু আমরা ধোঁয়া ও বন্ধ দরজা দেখে আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই। আমি তৃতীয় তলায় নেমে আসি যেখানে মেকানিকরােএকটা জানালা ভেঙে ফেলে। কিছু লোক আমাকে পাশের ভবনের ছাদে ছুড়ে মারে। আমার হাত দুটো ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আমি মাথায় ব্যথা পাই। এখন ঠিক মত চোখে দেখতে পারি না। আলো বেশি হলে আমি কাজ করতে পারি না। আমার পায়েও ফ্যাকচার হয়। চিকিৎসার জন্য আমার স্বামী আমাকে কুমিল্লায় বাড়িতে নিয়ে যায়। যখন জানতে পারি বিজিএমইএ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে তখন একটি বাসে করে ঢাকায় রওনা দেই। কিন্তু সেদিন হরতাল থাকায় বিক্ষোভকারীররা প্রতিবাদকারীরা বাসে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং এতে আমার সব কাগজপত্র পুড়ে যায়। তারপরেও বিজিএমইএ আমাকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু পায়নি।” - নাসিমা আখতার (২৫), সিনিয়র সুইং অপারেটর।

“অগ্নি ঘণ্টা যখন বেজে উঠে তখন আমি আমি চার তলায় ছিলাম। আমরা সবাই নীচের তলায় যাওয়ার চেষ্টা করি। দরজায় ফ্লোর-ইন-চার্জ আমাদেরকে বাধা দেয় এবং অকখ্য ভাষায় আমাদের প্রতি চিৎকার করতে থাকে।তিনি আমাদেরকে কাজে ফেরত যেতে বলেন। আমরা তখন ধোঁয়া দেখি এবং আতঙ্কিত হয়ে যাই। আমরা পালানোর চেষ্টা করি কিন্তু সিঁড়িতে যাওয়ার গেইটে তালা মারা ছিল। একজন মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছিল। আমি তার পেছন পেছন যেতে থাকি।তিনি আমাকে বলেন, “আমার পা ধরে থাকো”। আমরা পরিচালকের ঘরে ঢুকি। সেখানে অনেক শ্রমিক ছিল। তারা জানালা ভেঙে লাফ দেয়। আমার লাফ দেয়ার সাহস ছিল না। কিন্তু পাশের ছাদ থেকে কিছু মানুষ বাঁশ এগিয়ে দেয়। আমি সেটা ধরতে সক্ষম হই এবং বেঁচে যাই। কিন্তু পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাই। আমার কোমরে সমস্যা আছে। পাঁজরের কয়েকটা হাড় ভেঙে গিয়েছে। একটি লোহার রড আমার পায়ের বুড়ো আঙুলে ঢুকে যায়। আঙুলটি ফুলে ওঠে। আমি আমার দুই মাসের বেতন পেয়েছিলাম কিন্তু বিজিএমইএ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমি তাদেরকে ফোন করেছিলাম। তারা বলেন, “আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি তুমি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য নও।” - আনিসা (৩৫), সুইং অপারেটর।

“যখন চেঁচামেচি শুনতে পাই তখন আমি বাথরুমে। আমি দোতলায় যাই কিন্তু সেখানে বেরুনোর কোন পথ না থাকায় আবার উপরের স্যাম্পল রুমে যাই। অনেকেই ফোনে বলছিল, ‘মা, বাবা দোয়া কর, আমি আটকে গিয়েছি, বের হওয়ার কোন পথ নেই।’ আমরা জানালা ভেঙ্গে ফেলি। তার ফাঁক দিয়ে আমরা দুজন দুজন করে পাশের ভবনের ছাদে লাফ দেই। আমি যখন লাফ দেই তখন বুক ও ডান হাতে ব্যথা পাই এবং জানালার লোহার গ্রিলে কেটে যায়। আমি কোমরে ও পিঠের নীচে ব্যথা পাই। ডাক্তার আমাকে কাজ করতে মানা করেছে। চিকিৎসার জন্য আমি দেড় মাস গ্রামে ছিলাম। আমি যখন ফিরে আসি বিজিএমইএ জানায় যে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, ‘আমি গরিব মানুষ। আমি ভিক্ষা করছি। প্লিজ আমাকে সাহায্য করেন।’ কিন্তু তারপরেও তারা ‘না’ বলে।” - মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন (২৭), সুইং অপারেটর।

“মাঝে মাঝে স্থানীয় এজেন্ট কারখানা পরিদর্শন করতে আসতো। তারা যে আসবে তা তারা আগের থেকেই জানিয়ে রাখতো। সেই অনুযায়ী আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম। অগ্নি বালতিতে বালু ভরে রাখতাম, পানি, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র প্রস্তুত রাখতাম ইত্যাদি। আমাদেরকে এক অবাস্তব ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। দুপুরের খাওয়ার বিরতির সময় অগ্নি ঘণ্টা বাজানো হতো। তখন এমনিতেই সব শ্রমিক বাইরে থাকতো। … যখন আগুন লেগে যায় তখন মানুষজন চার তলা থেকে তিন তলায় নেমে আসতে চেষ্টা করলে মধ্যম সারির ম্যানেজাররা তাদেরকে কাজে ফেরত যেতে বলেন। দশ মিনিট পর আমরা ঘন ধোঁয়া দেখতে পাই এবং খেয়াল করি তিন মধ্যম-সারির ম্যানেজার কেটে পড়েছে। তখন লোকজন জানালা ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমই স্যাম্পল রুমে যাই এবং একটি জানালা ভেঙে ফেলি। জানালার গ্রিলে যখন আমরা টান দেই, গ্রিলটা আমার উপরে পড়ে এবং আমি ব্যথা পাই। কিছুক্ষণের জন্য আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে সবাই দৌড়াতে থাকে। মানুষজন আমার উপর দিয়ে দৌড়ে যায়। আমার হাত ভেঙে যায়। এক পর্যায়ে আমি উঠে দাঁড়াই এবং লাফ দেই। পায়ে গভীরভাবে কেটে যায়। মাথায় ব্যথা পাই। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি এবং তিন থেকে চার মাস কাউকে চিন্তে পারতাম না। কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। যখন বিজিএমইএ’তে যাই, তারা জানায়- দেরি হয়ে গিয়েছে। কারিতাস নামের একটি এনজিও আমাকে ৩০-৪০,০০০ টাকা (৩৮৫-৫১৫ মার্কিন ডলার) দিয়ে সাহায্য করে (এই অর্থ দান করেছিল সিএন্ডএ)। কিন্তু আমাকে ইতিমধ্যেই ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা (২,৫৭০-৩,২১২ মার্কিন ডলার) খরচ করতে হয়েছে। চিকিৎসার জন্য আমার প্রায় সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছি।” - আকাশ মিয়া হাসান (৩০), সুইং সুপারভাইসর।

নিখোঁজ শ্রমিকদের সজনরা ক্ষতিপূরণ পায়নিঃ 

“অগ্নিকান্ডের দিন আমি আমার মেয়েকে কাজে যেতে মানা করেছিলাম। কিন্তু তাও তিনি গিয়েছিলেন। আমরা এখনও তার হদিস পাইনি। বিজিএমইএ আমাদেরকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি কারণ হিসেবে তারা বলেন কেউ তার লাশ খুঁজে পায়নি এমনকি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেও তাকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমার মেয়ে ওই কারখানাতে কাজ করত। প্রমাণের জন্য তার আইডি কার্ড আমার কাছে আছে। কিন্তু বিজিএমইএ ও কারখানা সব কিছুই অস্বীকার করছে। আমার মেয়ের বয়স যখন তিন মাস তখন আমার স্বামী আমাদেরকে ফেলে চলে যায়। তখন থেকেই আমি আমার মেয়েকে নিয়ে একা থাকতাম। এখন সে নেই সে নিখোঁজ। পাড়াপড়শিরা আমাকে সাহায্য করে কিন্তু তারপরেও আমি একা।” - রোকেয়া, হেনার আখতারের মা (১৭), সুইং হেল্পার।

“আমাদের বাসা কারখানার পাশেই ছিল। আগুন ধরলে আমি আমার স্ত্রীকে উদ্ধার করতে ছুটে যাই। আমি ঢোকার চেষ্টা করি কিন্তু পারিনি।  আমরা তার দেহ খুঁজে পাইনি এবং আমাদেরকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। আমাদের বাসাটাও আগুনে পুড়ে যায়। আমরা আমাদের সব সম্বল হারাই। এখন আমি আমার ২৩ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে থাকি।” - মোহাম্মদ আব্দুল জাবের, মাহফুজা খাতুন (২২)-এর স্বামী, সুইং অপারেটর।

অপর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া আহত শ্রমিকঃ 

“সেদিন আমি পাঁচ তলায় একটি জ্যাকেটের কলার সেলাই করছিলাম। তখনই অগ্নি ঘণ্টা বেজে উঠে। কাজ থামিয়ে দেখি আমার কজন সহকর্মী দৌড়াচ্ছে। তারা বেরুনোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু সুপারভাইসর বলেন ওঠে, ‘তোমরা দৌড়ানো বন্ধ করো। আতঙ্কিত হইয়ো না। খামোখাই ঘণ্টা বাজানো হচ্ছে।’ তাই আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। ততক্ষণে ধোঁয়া উপরে উঠে আসে এবং আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি সিঁদিতে যাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু সবাই পাগলের মত আচরণ করছিল। কেউ নীচে নামছিল কেউ উপরে উঠছিল। এক পর্যায়ে পাঁচ তলা মানুষে ভরে যেতে থাকে। চারিদিক ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। আমার কিছু সহকর্মী জানালার গ্রিল ভাঙতে শুরু করে এবং বেরুনোর একটি পথ তৈরি করে ফেলে। তার ভেতর দিয়ে আমি বেরিয়ে লাফ দেই। ভাগ্য ভালো কারখানার পাশে অনেক টিনের ঘর ছিল। তার একটির উপর আমি পড়ি। আমার বাম হাঁটু কেটে যায়। আমার ডান পা ও পাঁজরের হাড্ডি ভেঙে যায়। আমি বিজিএমইএ-এর কাছ থেকে ১০০,০০০ টাকা (১,২৬৭ মার্কিন ডলার) এবং দুই মাসের বেতন (৮৪০০ টাকা বা ১০০ মার্কিন ডলার) পাই। আমি এখনো কাজ করতে বা হাঁটতে পারি না। আমি এখনো ক্রাচ ব্যবহার করি।” - শাহনাজ পারভিন (৩৪), সুইং অপারেটর।

“আমাদের অগ্নি ঘণ্টার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। তবে কাজের চাপ থাকলে আমাদেরকে অগ্নি প্রশিক্ষণে যেতে মানা করা হতো। ফালতু প্রশিক্ষণটাকে খেলার মতো কেউই গুরুত্বের সঙ্গে নিতো না। যেদিন সত্যি সত্যি আগুন লাগলো সেদিন তারা বললো যে অগ্নি ঘণ্টাটি শুধু অনুশীলনের জন্য বাজানো হয়েছে। তাহলে এই প্রশিক্ষণের কি কোন অর্থ ছিল? [...] ঘণ্টা যখন বেজে ওঠে আমি তখন চার তলায়। আমি ভয় পাই এবং আমার মেয়ে তাহিরের খোঁজে দৌড়িয়ে পাঁচ তলায় যাই। কিন্তু সেখানে তাকে খুঁজে পাইনি। চারিদিকে অন্ধকার। আমি মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে এগুতে থাকি। চার তলায় ফিরে আসি। সেখানে মানুষে ভর্তি। আমরা সবাই হাত ধরাধরি করে জানালা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই। আমি জানালার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু একটি মেশিনের সাথে হোঁচট খাই এবং বাম চোখে ব্যথা পাই। আমার মুখ রক্তে ভিজে যায়। তবে আমরা জানালাটি ভাঙতে পারি হই এবং আমি লাফ দেই। ... আমি ক্ষতিপূরণ পেয়েছি কিন্তু তা আমার চিকিতসার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। কয়েক মাস মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। চোখে দুবার অপারেশন করিয়েছি কিন্তু লাভ হয়নি। চোখে দেখি না। পিঠের হাড্ডি ভেঙে যাওয়ায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেও পারি না।” - শাহানাজ (৪০), ফিনিশিং সেকশন, ফোল্ডার।

“আমি পাচ তলায় ছিলাম। হঠাৎ করে সবাই চিৎকার শুরু করে। মনে হলো কেউ আমাকে হাত্থি মেরেছে। আমি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। সবাই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং আমার উপর দিয়ে কেউ কেউ হেঁটে যায়। আমি জ্ঞান হারাই। একজন সুপারভাইসর আমাকে উদ্ধার করে। আমি মাথায় খুব আঘাত পেয়েছিলাম। আমি ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কিন্তু এখনও আমার মাথায় অনেক ব্যথা হয়। মাঝে মাঝে আমি স্মৃতি হারিয়ে ফেলি এবং বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি।” - তাহিরের (২৫), ফিনিশিং সেকশন।

“আমি তৃতীয় তলায় ছিলাম। যখন অগ্নি ঘণ্টা বেজে উঠে ম্যানেজার বলেন ভুয়া ঘণ্টা বাজানো হচ্ছে। ধোঁয়া দেখি আমরা বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করা উচিত। আমরা এগজস্ট ফ্যান ভেঙে এক একজন করে লাফ দিয়ে বের হই। আমি লাফ দিতে ভয় পাচ্ছিলাম, ভাবছিলাম যদি লাফ দেই তাহলে মারা যাবো। আর যদি থেকে যাই তাহলে নিঃশ্বাস নিতে পারবো না। আমি জানতাম না আমার আগে যারা লাফ দিয়েছিল তারা বাঁচতে পেরেছিল কিনা। এসব যখন ভাবছি একজন আমাকে ধাক্কা মারে এবং আমি নীচে পড়ে যাই। আমি এক দল মানুষের উপরে পড়ি। আমি মেরুদণ্ডে আঘাত পাই। লম্বা সময় বসে থাকতে পারি না বলে এখন আর কাজ করতে পারি না।... যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলাম তা শেষ হয়ে গিয়েছে। আর চিকিৎসা নিতে পারছি না কারণ টাকা শেষ। এখন আর সুস্থ বোধ করি না।” - মোহাম্মদ সাঈদ আলি(২৬), সুইং হেল্পার। 

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country